দেশে যখন পেট্রল ডিজেলের দাম আকাশ ছোঁয়া, তখন এক তেল কুবেরের অর্থের জোর টের পেল বিশ্ব ফুটবল দুনিয়া। মালিকানা বদলের পর ম্যানচেস্টার সিটি নাকি হয়ে গেছে ‘টাকার কুমির’। ক্লাবের নয়া মালিক শেখ মনসুর আরবের তেল ব্যবসায়ী। আবার তিনি আরব আমির শাহির ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার। আবুধাবির রয়্যাল পরিবারের অন্যতম সদস্য। তাদের কোটি কোটি অর্থে সারাক্ষণ টের পাওয়া যায় তেলের ঝাঁজ। সেই ঝাঁজও যে কতটা তীব্র, তা টের পাওয়া গেল ফিফার প্রকাশিত এক তালিকায়। ৩১ সেপ্টেম্বর ছিল, বিশ্ব ফুটবলের আসন্ন মরসুমের দলবদলের শেষ দিন। সেই উইন্ডো বন্ধ হয়ে যেতেই মিললো সব ফুটবলারদের হাল হদিশ।
⚽️✍️🔢
Delve into the detail behind $48.5bn worth of player trading between 2011 and 2020 with FIFA's 'Ten Years of International Transfers Report'.
ℹ️👉 https://t.co/0SkxS2rh6A pic.twitter.com/03mWg9ZyXD
— FIFA (@FIFAcom) August 30, 2021
পরিসংখ্যান বলছে দলবদলের বাজারে গত এক দশকে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করা ক্লাবগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ব ফুটবল নিয়ামক সংস্থাটি। সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ফুটবলার কিনতে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করা ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি।
২০১১ থেকে ২০২০—এ সময়ের মধ্যে বেচাকেনা হওয়া খেলোয়াড়দের মোট দাম ৪৮.৫ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার ১৭ কোটি টাকা)। রুবেন দিয়াস ও কেভিন ডি ব্রুইনার মতো তারকাদের এই এক দশক সময়ের মধ্যে কিনেছে সিটি।
প্রতি মরসুমেই দলবদলের বাজারে প্রচুর অর্থ খরচ করে ইপিএলের এই দলটি। তাই ফিফার এই তালিকায় ম্যান সিটির শীর্ষে থাকাটা মোটেই বিস্ময়কর ঘটনা নয়।
ফিফার দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ২২৫ খেলোয়াড় বেচাকেনা হয়েছে চলতি এই এক দশকে। এর মধ্যে বিদেশি ক্লাবে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের যোগ দেওয়ার সংখ্যাটি সবচেয়ে বেশি (১৫ হাজার ১২৮ জন)। এরপর রয়েছে আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা (৭ হাজার ৪৪৪ জন)। ব্রিটিশ(৫ হাজার ৫২৩ জন),ফরাসি(৫ হাজার ২৭ জন) ও কলম্বিয়ান ফুটবলারদের(৪ হাজার ২৮৭ জন) চাহিদা যে বেশি, তা এই তালিকা বলে দিচ্ছে।
বিশ্বে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ যে তারকা খোচিত তা অর্থ খরচের নামুনাই বলে দিচ্ছে। এই এক দশকে খেলোয়াড় কেনার খরচে সিটির পরই আছে আরেক ইংলিশ ক্লাব চেলসি। সিটি এই এক দশকে ১৩০ জন ফুটবলার কিনেছে। আর চেলসি কিনেছে ৯৫ জনকে। ৭৫ জনকে কিনেছে বার্সা। এক দশকে ফুটবলারদের জন্য খরচের দৌড়ে ম্যানচেস্টার সিটি ও চেলসির পর আছে পরপর বাকি তিন ক্লাব—বার্সেলোনা, পিএসজি এবং রিয়াল মাদ্রিদ। এখনকার মেসি – নেইমার – এমবাপ্পের পিএসজি এই দশকে ৫৯ জন ফুটবলার কিনেছে, ৫৫ জনকে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
ফিফার এমন তালিকায় প্রথম ৩০টি ক্লাবের মধ্যে ১২টি হল ইংল্যান্ডের। এই ১২টি ক্লাব মিলে এক দশকে ফুটবলার কেনায় খরচ করেছে ১২.৪ বিলিয়ন ডলার ( প্রায় ৯০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা)। এরপর আছে, যথাক্রমে স্পেন (৬.৭ বিলিয়ন ডলার), ইতালি (৫.৬ বিলিয়ন ডলার), জার্মানি (৪.৪ বিলিয়ন ডলার) ও ফ্রান্স (৪ বিলিয়ন ডলার)। এর থেকেই বোঝা যায়, বিশ্বে ইপিএল কতোটা জনপ্রিয় আর কতো পরিমাণে অর্থের লেনদেন চলে।
এই এক দশকে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া ফুটবলারটি কে? নম্বর টেন – নেইমার। ২০১৭ সালে বার্সেলোনা থেকে ব্রাজিলের এই তারকা ফুটবলারকে প্রায় ২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার অর্থে পিএসজি কিনেছিল। অর্থাৎ ফেলে আসা এক দশকে ব্রাজিলের এক ফুটবলারই সব চেয়ে দামী।
আর বিশ্বে সব জনপ্রিয় ক্লাব ফুটবলে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের পেছনে বেশি অর্থ খরচ হয়েছে। এই এক দশকে ক্লাবগুলো খরচ করেছে-৭ হাজার ৭০ মিলিয়ন ডলার। ফরাসি ফুটবলারদের পেছনে খরচ হয়েছে ৪ হাজার ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার। এ তালিকায় তিন নম্বরে স্প্যানিশ ফুটবলাররা (৩ হাজার ৬৮৭ মিলিয়ন ডলার)। আর আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা (৩ হাজার ২০৫ মিলিয়ন ডলার)চারে।
এইসব খরচের দৌড়ে পয়লা নম্বরে জায়গা করে নেওয়া ইউরোপের দলগুলির বাইরে একমাত্র নজরে পড়া দেশ – চীন। চাইনিজ সুপার লিগে বড় বড় তারকা ফুটবলার কিনতে এই এক দশকে ১.৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে দেশটির ক্লাবগুলো।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। ইউরো কাপের ফাইনালে খেলেছে ইংল্যান্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লড়েছে দুই ব্রিটিশ ক্লাব।
ছবি: সৌ টুইটার