কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: মধ্য মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের নাম বদলে সম্ভাজিনগর করার প্রস্তাব নিয়ে এবার ফাঁপরে পড়েছে কংগ্রেস এবং শরদ পাওয়ারের এনসিপি। মহারাষ্ট্র কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত মনস্থির করতে পারছে না। বিরাট দোলাচলে পড়েছে তারা। বুধবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই নাম বদলের প্রস্তাব নিয়েই আলোচনা হওয়ার কথা। তার আগে দলীয় অবস্থান নিয়ে কংগ্রেস দিশেহারা। তারা যদি এই বৈঠকে উপস্থিত থাকে, তাহলে মানুষ বুঝবে কংগ্রেস এই প্রস্তাবের পক্ষে রয়েছে। অপরদিকে, তারা যদি বৈঠকে গরহাজির থাকে, তাহলে শিবসেনা ও সম্ভাজি-ভক্তদের কাছে এই বার্তা পৌঁছবে যে, কংগ্রেস এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে রাজ্য কংগ্রেস আতান্তরে পড়েছে।
শিন্ডে-বাহিনীর দাপটে উদ্ধব ঠাকরে সরকার এখন খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। এই অবস্থায় সরকার বাঁচাতে উদ্ধবের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সোনিয়া এবং পাওয়ার দুজনেই। কিন্তু, ঔরঙ্গাবাদের নাম বদলে সম্ভাজিনগর করার ব্যাপারে দু-দলেরই রাজনৈতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই শিবসেনার প্রস্তাবে রাজি হওয়া অত সহজ নয়। অন্যদিকে, শিন্ডে গোষ্ঠীর প্রথম থেকেই উদ্ধবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি এমভিএ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদ টিকিয়ে রাখতে বালাসাহেব ঠাকরের নীতি-আদর্শকে বিসর্জন দিয়েছেন। ফলে, শিন্ডে গোষ্ঠীর কাছে আচমকা হিন্দুত্বের বার্তা তুলে ধরতে ঔরঙ্গাবাদের নাম বদলের প্রস্তাব কবর খুঁড়ে তুলে এনেছেন শিবসেনা প্রধান। মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে, তা নিয়েই দোনামনায় পড়ে গিয়েছে কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: Jama Masjid: রাজস্থানের বর্বরোচিত ঘটনার নিন্দায় সরব জামা মসজিদের শাহি ইমাম
রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শিবসেনা নেতা অনিল পরব ঔরঙ্গাবাদের নাম বদলে সম্ভাজিনগর করে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। তা নিয়েই বৈঠকে বসতে চলেছে মন্ত্রিসভা। ফলে, আপাতত হিন্দুত্ব ঘেঁষা শিবসেনা, এটা প্রমাণ করতে উদ্ধব শিবির মরিয়া। ঔরঙ্গাবাদ হল ভারতের একটি প্রাচীন শহর। যার পাশেই অবস্থিত বিখ্যাত অজন্তা গুহা। আনুমানিক ১৬১০ সালে এই শহরের পত্তন হয়। প্রথমে এর নাম ছিল খাডকি। ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য বিজয়ের পর নাম বদলে ঔরঙ্গাবাদ করেন শাহেনশা নিজেই। এটাই হয় তাঁর দক্ষিণ ভারতের রাজধানী। এখানেই জীবনের শেষ জীবন কাটিয়েছেন ঔরঙ্গজেব। শুধু তাই নয়, শিবাজি-পুত্র সম্ভাজিকে নির্যাতন করে খুন করা হয় এই শহরেই।
১৯৮৮ সালে শিবসেনা প্রধান বালাসাহেব ঠাকরে ঘোষণা করেন এই শহরের নাম পরিবর্তন করে সম্ভাজিনগর করা হবে। তিনিই প্রথম ধ্বনি তোলেন ‘খান ইয়া বান’ (তির-ধনুক, যা শিবসেনার প্রতীক)। ১৯৯৫ সালে ঔরঙ্গাবাদ পুরসভা প্রথম সরকারিভাবে নাম বদলের একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। এরপর মনোহর যোশির আমলে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়। কিন্তু, কংগ্রেস-এনসিপি সরকার এসে সেই বিজ্ঞপ্তি তুলে নেয়। ফের দেবেন্দ্র ফড়নবীশ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওই বিজ্ঞপ্তি নতুন করে জারি করেন। সে কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ঔরঙ্গাবাদের নাম বদলের বিতর্ক চলছে। কিন্তু, এখন সরকার বদলের মুখে খড়কুটোর মতো নতুন করে ঔরঙ্গাবাদের নাম বদলের রাজনীতির জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার।