কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: কল্যাণীর গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসারের (IISER) গবেষকের আত্মহত্যা ঘিরে এখনও পরিস্থিতি থমথমে। গবেষক শুভদীপ রায়ের আত্মহত্যার ঘটনাকে সতীর্থরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর এই আত্মহত্যার পিছনে (IISER Researcher Suicide) যে অধ্যাপকের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তাঁর কড়া শাস্তির দাবিতে অনড় আইসারের গবেষক ও পড়ুয়ারা।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (IISER Suicide) তরুণ গবেষক ছিলেন শুভদীপ রায়। সোমবার হরিণঘাটায় আইসার কলকাতা ক্যাম্পাসের ল্যাবরেটরি থেকে উদ্ধার হয় শুভদীপের দেহ। তাঁর বন্ধুরা জানান, রবিবার অনেক রাত পর্যন্ত ল্যাবে ছিলেন তিনি। পরদিন বেলা ১১টা নাগাদ ল্যাবের দরজা বন্ধ ছিল। শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙে দেখা যায়, অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন শুভদীপ। উদ্ধার হয় একটি সুইসাইড নোটও। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বন্ধু-স্বজনদের একাংশের অভিযোগ, রিসার্চ গাইডের সহযোগিতা না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ‘সুইসাইড নোট’-এ সে কথা লিখেও গিয়েছেন। হাইড্রোজেন সালফাইড নামক বিষাক্ত গ্যাস শুঁকেই শুভদীপ আত্মহত্যা করেছেন বলে অনুমান সহপাঠীদের। গবেষণার শেষ তম বর্ষে পৌঁছে মাত্র ২৭ বছর বয়সে এমন রাস্তা বেছে নেন শুভদীপ।
পুলিস জানায়, দমদম নাগেরবাজারের বাসিন্দা গবেষক (Researcher) শুভদীপ রায়। বাবা মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। ২০১৪ সালে আইসার কলকাতায় ফিজিক্যাল সায়েন্স ইন্ট্রিগ্রেটেড পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হন শুভদীপ। আট বছরের পিএইচডি কোর্সে এটাই ছিল শেষ বছর। অধ্যাপক চিরঞ্জীব মিত্রের তত্ত্বাবধানে চলছিল তাঁর গবেষণা। কিন্তু অভিযোগ, চিরঞ্জীব মিত্র কোনওরকমভাবে গাইড না করার জন্যই চূড়ান্ত অবসাদে হতাশায় মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। এমনটা শুভদীপ নিজেই লিখেছেন তাঁর সুইসাইড নোটে।
গবেষক শুভদীপ রায়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে মিছল-বিক্ষোভ হরিণঘাটার আইসার ক্যাম্পাসে।
শুভদীপ সুইসাইড নোটে লিখেছেন, ‘আট বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। কয়েকশো জুনিয়রকে সাহায্য করেছি। এর পরেও আমার যে থিসিসটি লেখার কথা, তা মাত্র চার লাইনেই লিখে ফেলেছি। প্রফেসর চিরঞ্জীব মিত্র আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী। উনি আমায় ঠিকমতো গাইড করতে পারেননি। উনি কোনও রিসার্চ করেন না। পেপার পড়েন না।’ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক চিরঞ্জীবের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সংস্থার অধিকর্তা অভিযোগের যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
শুভদীপের মা রঞ্জনা রায় মঙ্গলবার দুপুরেই হরিণঘাটা থানায় ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: SLST CBI: SLST নিয়োগ দুর্নীতি মামলাতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
গবেষকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে মঙ্গলবার রাতে মোমবাতি ও মোবাইলের আলো জ্বেলে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হন আইসারের অন্যান্য গবেষক ও বন্ধুরা। তাঁরাও আঙুল তুলছেন ওই অধ্যাপকের দিকে। তাঁর কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসের মধ্যে মিছিল করেন তাঁরা। রাতভর চলে বিক্ষোভ। শেষ পর্যন্ত সঠিক তদন্তের আশ্বাসে বিক্ষোভ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ছাত্ররা। তবে তদন্তে গাফিলতি হলে ছাত্ররা বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।