হাঁসখালি: দোষীদের ফাঁসি চাই। বুধবার ঠিক এই ভাষাতেই মুখ খুললেন হাঁসখালির নির্যাতিতার বাবা। গণধর্ষণের পর দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গোটা রাজ্য যখন তোলপাড়, তখন অজ্ঞাত কারণে প্রথম থেকেই মৌন ছিলেন মৃত কিশোরীর বাবা-মা। দু-একটি ছোট মন্তব্য ছাড়া তাঁরা কিছুই বলতে চাননি। সারাক্ষণ ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে রয়েছেন তাঁরা।
গত ৫ এপ্রিল নির্যাতিতার মৃত্যুর পর থেকে একে শোকগ্রস্ত পরিবার। তারপরে বিভিন্নভাবে চাপ, পুলিসের জেরা, গোপন জবানবন্দি, এত ধকলের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নাবালিকার মা-বাবা। এদিন তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে করে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: Calcutta High Court: হাইকোর্টে তৃণমূল-বিজেপির আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি
নাবালিকার মায়ের ধুম জ্বর। তিনি তো কথা বলার অবস্থাতেই নেই। এরই মধ্যে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট হাঁসখালি গণধর্ষণ এবং নির্যাতিতার মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ শোনার পর নির্যাতিতার মা এবং বাবা অত্যন্ত খুশি এবং তাঁরা আশা করছেন এবার দোষীরা শাস্তি পাবে। তার বাবা জানান, যারা তাঁর নাবালিকা মেয়ের উপরে অত্যাচার করেছে, তাদের ফাঁসি হোক।
এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ভিড়ে হাঁসখালি যেন পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। তখনও দিনভর বাবা-মাকে প্রায় দেখাই যায়নি। একটিবারের জন্য দেখা মিললেও তাঁরা মুখ খুলতে চাননি। সকালে কৃষ্ণগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক আশিস বিশ্বাস ও তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র হাঁসখালি আসেন। তাঁরা নির্যাতিতার বাড়িতেও যান।
আরও পড়ুন: Weather Update: গরমে হাঁসফাঁস রাজ্য, কবে বৃষ্টি, জেনে নিন
তৃণমূল সাংসদ পুলিসের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এটা উত্তরপ্রদেশ বা মধ্যপ্রদেশ নয়। এখানে দুষ্কৃতীর পকসো আইনে সাজা হবে। ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া মৃতদেহ সৎকারের বিষয়ে মহুয়া গ্রামাঞ্চলে নথিভুক্ত নয়, এমন শ্মশানের অস্তিত্ব মেনে নেন। তাঁর দাবি, পুলিসের তদন্ত প্রক্রিয়া সঠিক পথেই এগচ্ছে। যদিও এদিন তিনি কিশোরীর দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাবা-মাকেই দায়ী করেন। এও বলেন, ধামাচাপা দিতেই তড়িঘড়ি বাবা-মা দেহ পুড়িয়ে দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত ভুল কাজ হয়েছে। তবে, দুষ্কৃতীর কোনও নিস্তার নেই। দুষ্কৃতীর কোনও রাজনৈতিক পরিচয় হয় না, জোরের সঙ্গে এই দাবি করে মহুয়া বলেন, এটা ধিক্কারজনক কাজ। এটাকে নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।
এরপর হাঁসখালিতে আসেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ধর্ষণকারীদের হয়ে ওকালতি করছেন। এতবড় একটা ঘটনা ঘটেছে, মুখ্যমন্ত্রীর এ রকম প্রতিক্রিয়া! রাজ্যজুড়ে নৈরাজ্য চলছে।
আরও পড়ুন: Anubrata Mandal: অনুব্রতর অণ্ডকোষে পুঁজ, ফুসফুসে জল, হাঁটলেই কমে যাচ্ছে অক্সিজেন
সন্ধ্যায় নাবালিকার বাড়িতে আসেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যরা যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তাঁর উচিত গলায় গামছা দিয়ে ক্ষমা চাওয়া। পুলিস-প্রশাসন নিষ্ক্রিয়। আমরা পরিবারের পাশে আছি। পরিবার যেভাবে চাইবে আইনি সহায়তা থেকে তদন্ত করার জন্য সবরকম সাহায্য করবে বিজেপি।