কৃষ্ণনগর: পরিবার বলতে, দুই ছেলে ও স্বামী-স্ত্রী৷ চার জনের সংসার কৃষ্ণনগরের দুলালচন্দ্র ঘোষের৷ কয়েক মাস আগে ধার-দেনা করে ঘর করেছেন তিনি৷ ধাপে ধাপে বড় ছেলে দেবজ্যোতি ঘোষ স্বপ্ন পূরণের পথে এগোচ্ছিল৷ কিন্তু এক মুহূর্তেই ছন্দপতন৷ পাল্টে গেল সব৷ কী করবেন, কী হবে, কেনই বা হল—বুঝতে পারছেন না দেবজ্যোতি ঘোষের বাবা দুলাল৷ শুধু বলে চলেছেন, ‘‘আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হল না…৷’’
দেবজ্যোতি ঘোষ শনিবার বাড়ি ফেরার পর কৃষ্ণনগরের সেন্ট্রাল ক্লাবের হয়ে বেলপুকুরে খেলতে গিয়েছিল৷ নবদ্বীপ সেবক সমিতি এবং কৃষ্ণনগর সেন্ট্রাল ক্লাবের মধ্যে খেলা চলছিল বেলপুকুর মাঠে। খেলার সময়ই বুকে বল লেগে আঘাত পান তিনি৷ পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর৷ ২৫ বছরের দেবজ্যোতিরর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া বাংলার ফুটবল জগতে৷
নম্র স্বভাবের দেবজ্যোতি কয়েকদিন আগে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি বদ্ধ হন৷ তাঁর বাবা বলেন, ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের হয়ে খেলার স্বপ্ন ছেলের৷ বারো বছর বয়স থেকে খেলছে সে৷ বরাবরই খেলায় ভাল ছিল৷ এর আগে কালীঘাট, টালিগঞ্জ, রেলওয়ে এসফি-র হয়ে খেলেছে সে৷ ইস্টবেঙ্গলে দশ দিন আগে সই করেছে৷ খেলতে পারল না৷ লাল হলুদ জার্সি আর গায়ে পরা হল না ছেলের…৷
পরিবারের দাবি, শনিবার বিকেলে ছেলের অসুস্থার খবর আসে ফোনে৷ বেলপুকুরে আঘাত লাগার পর স্থানীয় ফার্মেসিতে নিয়ে যাওয়া দেবজ্যোতিকে৷ সেখান থেকে ধুবুলিয়ার হাসপাতালে৷ তারপরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে৷ কিন্ত জেলা হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় দেবজ্যোতি৷ দাবি চিকিৎকদের৷ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর৷ যদিও তা বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁর বাবার৷ দুলালচন্দ্র ঘোষের দাবি, ‘‘ছেলের শারীরিক কোনও সমস্যা ছিল না৷ কেন প্রথমেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হল না৷ প্রথমেই এখানে নিয়ে এলে মেনে নিতাম…৷’’
এদিকে রবিবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়৷ হাসপাতাল চত্ত্বরেই দেবজ্যোতির বন্ধু-অনুরাগীদের ঢল নামে৷ কৃষ্ণনগরের সেন্ট্রাল ক্লাব মৌন মিছিল করে৷ তারপরেই শেষ কৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়৷