কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: আফ্রিকা! নাম শুনলেই কল্পনার চোখে ভেসে উঠবে ঘন জঙ্গল। কানে আসবে সিংহের ডাক। কিন্তু, না! এখানে চারপাশে তাকালে চোখে পড়বে ধু-ধু মরুভূমি। নানান কাপড় দিয়ে ইগলুর মতো বাঁধা কিছু ঝুপড়ি। আর হাড়ের উপর চামড়া বসানো কৃষ্ণকায় কিছু মানুষ। তাঁদের কোলে হাড়গিলে বাচ্চাগুলি প্রতি নিঃশ্বাসে মৃত্যুর সঙ্গে লুকোচুরি খেলে চলেছে। অনাহার, অপুষ্টিতে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার অদম্য চেষ্টা চালাচ্ছেন তাদের মা। কিন্তু, কোথায় খাবার? মায়ের স্তনও যে খালি। এইভাবেই কি পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে একদিন হারিয়ে গোটা একটি আফ্রিকান জনজাতি? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চলুন যাই বাস্তবের মরু-প্রান্তরে।
ইথিওপিয়ায় খরায় বিপন্ন বানজারা শ্রেণি
ইংরেজিতে বলে হর্ন অফ আফ্রিকা। বাংলা করলে যার অর্থ আফ্রিকার শিং। আফ্রিকার একেবারে পূর্ব দিকে অবস্থিত এই এলাকাকে সোমালি বদ্বীপও বলে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বদ্বীপ এলাকা এটি। এখানেই রয়েছে সোমালিয়া, কেনিয়া, সুদানের ঘেরাটোপে ইথিওপিয়া। যেখানে কয়েক দশকের খরায় জ্বলেপুড়ে খাক হচ্ছে মানুষ। বিশেষত যাযাবর শ্রেণির লোক। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ২ কোটি মানুষ খরার প্রভাবে অনাহার ও অপুষ্টির শিকার। আর কিছুদিন এভাবে চললে হারিয়ে যাবে ইথিওপিয়ার বানজারা জনগোষ্ঠী।
কী অবস্থায় দিন কাটছে তাঁদের? গ্রামের নাম হার্গুডুডু। গ্রামের বাসিন্দা আবদি কাবে আদান। তিনি বললেন, গ্রামে আর একটাও পশু বেঁচে নেই। আল্লা দয়া করে বৃষ্টি দিক। আমাদের দয়া করো আল্লা। তিনি জানালেন, গত দেড় বছরের মধ্যে এই গ্রামে এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়েনি। গ্রামের কোনও দিকে সবুজের চিহ্নমাত্র নেই। শুধু বালি আর বালি।
এই গ্রামে প্রায় শ’দুয়েক বানজারার বাস। তাদের জীবিকার অন্যতম ভরসাই ছিল পশুপালন। কিন্তু, আজ কারও ঘরে একটা গরু-বাছুর-উট নেই। সব মরে গিয়েছে। আবদি কাবে আদান বলেন, আমি আমার জীবনে কোনওদিন দেখিনি, ছাগল নিজের সন্তানের মাংস খাচ্ছে। একটা উট আরেকটা মৃত উটের মাংস খাচ্ছে। এই এলাকায় এক বছর খরা হলে পরের বছর বৃষ্টি হতো। এটাই প্রচলিত বিশ্বাস। কিন্তু, এই যাযাবররা ঠায় আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন গত ৪ বছর ধরে।
আরও পড়ুন: Tunnel Found-BSF: সাম্বা সেক্টরে গোপন সুড়ঙ্গের সন্ধান পেল বিএসএফ
ইথিওপিয়ার ছোট্ট একটি শহর, তার নাম গোডে। সেখানে রাষ্ট্রপুঞ্জ অপুষ্টিতে ভোগা রুগ্ন শিশু ও মায়েদের চিকিৎসা করে। রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি হিসেব বলছে, গোটা ইথিওপিয়ার প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষ ভয়ঙ্কর খাদ্য সংকটে ভুগছেন। চিকিৎসা করাতে আসা মহিলা ফালিস হাসিন বলেন, আমরা তো সারাদিন পোষা গরু-ছাগলের জন্য জলের খোঁজেই ব্যস্ত থাকি। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে এখানে এসেছি, সেটা আমার স্বামী জানে না। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এভাবে অনাহার-অপুষ্টিতে নরমেধ ঠেকাতে প্রচুর অর্থ সাহায্যের প্রয়োজন। গোটা বিশ্বকে ইথিওপিয়ার পাশে দাঁড়ানো উচিত।