মেদিনীপুর: জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামগুলিতে বিভিন্ন ভাবে লুঠপাঠ চালানোর পরে জঙ্গলের হাতিরা এবার শহরমুখী ৷ ক্রমেই হাতিদের সেই প্রবণতা বাড়ছে ৷ সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হাতির সংখ্যাও৷ ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধের পর মেদিনীপুর শহরে হাতি প্রবেশ করে বিশাল আতঙ্ক তৈরি করেছিল৷ বছর ঘুরতেই হাতিদের পরিস্থিতি দেখে মেদিনীপুর শহর ও সংলগ্ন এলাকাগুলিকে সুরক্ষিত করতে ইলেক্ট্রিক ফেন্সিংয়ের ব্যবহার শুরু হল পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর সদর ব্লকে ৷ জঙ্গলের ভেতরে প্রায় ১০ কিমি হাতির রাস্তায় বসানো হয়েছে সোলার বৈদ্যুতিক ফেন্সিং৷ উত্তরবঙ্গ থেকে অভিজ্ঞদের নিয়ে এসে একমাস ধরে চলছে এই কাজ ৷
জঙ্গলেরমহলের জেলা গুলির একটি হল পশ্চিম মেদিনীপুর ৷ এই জেলার কোনও না কোনও জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে প্রায় প্রতিদিনই হাতির উপদ্রব লেগে থাকে৷ বনদফতরকে হামেশাই শুনতে হয়, কারও বাড়ি ভেঙেছে, কারওবা ফসল নষ্ট করেছে, নয়তো রাস্তায় গাড়ি আটকে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে গাড়ি ভেঙেছে হাতির দল। মাঝে মধ্যে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে৷ হাতিকে পাকাপাকি ভাবে তাড়ানো সম্ভব হয়নি গত ১০ বছরে। তার বদলে পশ্চিম মেদিনীপুরকে নিজেদের পাকাপাকি রেসিডেন্স তৈরি করে ফেলেছে হাতির পাল ৷ প্রতি বছরই বাড়ছে হাতির সংখ্যা ৷ ফলে জেলাজুড়ে দেখা দিচ্ছে খাবারের সংকট। জঙ্গলে পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে জঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকার গ্রামগুলিতে তাণ্ডব চালিয়ে হাতির পাল এখন শহরমুখী ৷
খাবারের খোঁজে প্রায়ই খড়্গপুর ও মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি চলে আসছে হাতির পাল ৷ গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি হাতি দল ছাড়া হয়ে জাতীয় সড়ক ধরে মেদিনীপুর শহরে প্রবেশ করেছিল৷ তাতে মেদিনীপুর শহর ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক হাতির আতঙ্ক তৈরি হয় ৷ আতঙ্কিত ও কৌতুহলি শহরবাসীর চাপে আতঙ্কিত হাতি সন্ধে ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মেদিনীপুর শহরে দাপিয়ে বেড়ায়৷ বহু বাড়ির দেওয়াল ভাঙলেও হাতির তান্ডবে সেদিন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে গভীর রাতে হাতিকে ঘুমপাড়ানি গুলি মেরে ক্রেন দিয়ে তুলে জঙ্গলে ছেড়ে আসেন বনকর্মীরা। এই ঘটনার জেরে পুলিশ ও বনদফতরের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে ৷ কিন্তু সেদিনের ঘটনা নিয়ে সকলেই এবার সতর্ক ৷ পুনরায় ফেব্রুয়ারি আসার আগেই বিদ্যুতের তার দিয়ে শহর বাঁচাতে হাতির গতিপথ মোড়া হচ্ছে ৷
আরও পড়ুন : বাঁকুড়া থেকে হাতির দলকে জঙ্গলে ফেরাতে গিয়ে নাজেহাল বনদফতর
উত্তরবঙ্গ থেকে দুই প্রতিনিধিকে নিয়ে প্রায় একমাস ধরে মেদিনীপুর সদর ব্লকেরর জঙ্গলের ভেতরে কাজ চলছে ৷ সদর ব্লকের জামশোল থেকে সেই কাজ শুরু হয়েছে৷ উত্তরবঙ্গ থেকে আসা মিঠুন দাস জানান, সোলার পাওয়ার দিয়ে এই জঙ্গলে হাতিদের রাস্তাতে তিনটি তার দেওয়া থাকবে ৷ অল্প ঝটকা লাগার মতো বিদ্যুত থাকবে ৷ কোনও প্রাণীরই প্রাণহানি ঘটবে না ৷ তবে ঝটকা লেগে সরে যাবে হাতি ৷ ফলে জঙ্গলের ভেতরেই থাকবে হাতি৷ এর আগে ডুয়ার্স, জলদাপাড়াতে এই পদ্ধতিতে সুফল মিলেছে ৷ প্রথম পর্যায়ে দশ কিমি জুড়ে এই ফেন্সিং করা হচ্ছে৷ এই কাজ অনেকটাই হয়ে গিয়েছে বলে জানান তিনি।