সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে কখনও জনসমক্ষে হিন্দি গানের সুরে স্ত্রী ডোনার সঙ্গে নাচতে দেখেছেন? সকলের কাছেই উত্তর আপাতত : নাহ্। কিন্তু রবিবারের সন্ধ্যার পর উত্তরটা বদলে যেতে চলেছে। ‘দাদাগিরি’ গ্র্যান্ড ফিনালেতে মঞ্চে সৌরভকে শাহরুখের লিপে গাওয়া জনপ্রিয় হিন্দি গানে ডোনার হাত-কোমর ধরে নাচতে দেখা যাবে। ডোনা স্বনামধন্য এক নৃত্য শিল্পী। তাঁর ক্লাসিকাল ড্যান্সের কদর বিশ্ব জুড়ে। কিন্তু তাঁর কর্তা-দেশের অন্যতম সফল ক্রিকেটার সৌরভের সঙ্গে এমন নাচের ক্লিপ এখনও ভাইরাল হয়নি। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যার পর তা হবেই।
এই নাচের আসরে ছিলেন, বাংলা সিনেমার স্টার অভিনেতা প্রসেনজিৎ, রানী রাসমনি সিরিয়াল খ্যাত দ্বিতিপ্রিয়া।যদিও ওঁরা হাজির ছিলেন-‘আয় খুকু আয়’ সিনেমার প্রমোশনের জন্য।তারইমাঝে মঞ্চে এঁরাও নাচে সঙ্গ দিয়েছিলেন সৌরভ–ডোনাকে।
রোববার উৎসব হবে বাংলার ঘরে ঘরে। জামাই ষষ্ঠীর দিনে #Dadagiri গ্র্যান্ড ফিনালে। থাকবে বর্ণময় অনুষ্ঠানের আয়োজন। কোন জেলার হাতে উঠবে #Dadagiri9-এর ট্রফি? ডাউনলোড করুন –#Zee5 অ্যাপ, পাচ্ছেন #AnyTimeManoranjan -এর গ্যারান্টি।
Sourav Ganguly Officialhttps://t.co/f3RiL0hwIz pic.twitter.com/0ocHEd1vMF— ZEE5 Bangla (@ZEE5Bangla) June 3, 2022
এবারের সিজিন নাইন দাদাগিরির শেষ পর্বের সম্প্রচার হতে চলেছে কাল-রবিবার।
জেলা ভিত্তিক লড়াই তো ছিলই। কিন্তু তার মাঝে-মাঝেই ছিল নানান মজার খুনসুটি। আছে নানান জনপ্রিয় শিল্পির সব জনপ্রিয় গান। গাইতে দেখা যাবে: রূপম ইসলাম, রাঘব, মনোময়, ইমন, জোজোদের।
1day to go fro Dadagiri Grand Finale.❤
Dada and Srijitda ❤#SouravGanguly #SrijitMukherji #BCCIPresident @srijitspeaketh pic.twitter.com/E7B8dUgeJL— Maharajer Darbare (মহারাজের দরবারে) (@MaharajerD) June 3, 2022
ছিলেন এই জনপ্রিয় চ্যানেলে চলা দর্শকদের মন কেড়ে নেওয়া টিভি সিরিয়ালের সব চরিত্রের শিল্পিরা। ‘মিঠাই’ তাঁদের অন্যতম।
২০ মে এই ফাইনালের শ্যুটিং হয়ে গেছে নিউ টাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে।
‘ভগবান’ সৌরভের ‘ভক্ত’ মানস ….
দাদাগিরি গ্র্যান্ড ফিনালেতে ‘ভগবান’ সৌরভ আর ‘ভক্ত’ মানস।
এই ফাইনাল যে যে জেলা লড়াইয়ে নেমেছিল তাদের মধ্যে দেখা যাবে- দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূম, কলকাতা, বাঁকুড়া, দার্জিলিং আর পশ্চিম বর্ধমানকে।জিততে দেখা যাবে বীরভূমকে। কারণ অবশ্যই সেই দলে বাঁকুড়ার মানস চট্টোপাধ্যায়ের থাকা।‘সৌরভের দরবার’ ফ্যানপেজের তিনিই অ্যাডমিন।অন্ধ সৌরভ ভক্ত। করোনা লকডাউনের সময় সেই বাঁকুড়ায় বসে দলের বেশ কয়েকজনকে ‘দাদা’র জন্মদিনে অভিনব সব শুভেচ্ছা স্মারক পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। দাদা-র দুটি ছবি দিয়ে মাস্ক বানিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি এবার নিজের জেলার হয়ে খেলতে না পারলেও এই ফাইনালে সামিল ছিলেন। তিনিই ট্রফি জেতেছেন। মঞ্চে সৌরভ জায়া ডোনার হয়ে সওয়াল করে মানসকে আসর মাতাতে দেখা যাবে।
এবারের এই ফাইনালে নাকি একসময় বিরাট কোহলিকে আনার কথা ভেবেছিল চ্যালেন কর্তৃপক্ষ। তা হয়নি। তারপর টার্গেট ছিলেন বলিউডের কত্তা-গিন্নি জুটি অজয় দেবগন-কাজল। দিনক্ষণ না মেলায় তাও হয়নি। তাতে কী! স্বয়ং সৌরভই এখন ক্রাউডপুলার।
কিন্তু মানসের মন? বাঁকুড়ার এই ছেলেটি সৌরভ অন্ত প্রাণ। সৌরভ তাঁর বান্ধবী বিচ্ছেদের খবর নেন, কিন্তু কিভাবে তাঁর জীবন চলে – তা হয়তো জানেন না।্মএবার মানস ২০ তম এপিসোড জিতেছিলেন বাঁকুড়ার হয়ে।বাইপাশের পাশে ভগৎ সিং মোড়। সেখানেই ইউনাইটেড ক্লাব। বিষ্ণুপুরের মানস আর তাঁর বাবা-মা থাকেন একটি ঘরের এক বাড়িতে। উচ্চ মাধ্যমিকে পাস করে অর্থের অভাবে আর পড়তে পারেননি। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি সেন্টারে মাসে ৪ হাজার টাকার কাজ করে। বাবা, পঞ্চায়েত কর্মী ছিলেন। অবসর নিয়েছেন। সেই ৬ হাজার টাকার পেনসনে চলে মানসদের তিন জনের সংসার।
রবিবার দাদাগিরি গ্র্যান্ড ফিনালে জিততে দেখা যাবে মানসকে। সেই মানস এখন এক স্বপ্নপূরণে মশগুল। ‘দাদাকে কাছে পাবো, দাদাকে স্পর্শ করবো-এর বাইরে আর কী পাওয়ার আছে?’ মানস এই কথা বলার পর অবাক হয়েছি। যে মানুষটিকে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এতো স্নেহ করেন, যার বাড়িতে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ডিনার সেরে যান—যাঁর সঙ্গে দেশের তাবড়-তাবড় শিল্পপতিদের আলাপ—তাঁর কাছে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে একটি চাকরির আবেদন করা গেল না! মানস এমন সুযোগ হাতছাড়া কেউ করে?
লাজুক মানসকে বলতে শুনলাম:‘ওরে বাবা! দাদা যদি রেগে যায়, এসব শুনে।আমাকে যদি আর পাত্তা না দেয়।তাই দাদাই আমার থাক’।হাল্কা ছলে বলেছিলাম: সৌরভ যখন জানতে চেয়েছিল, বান্ধবী ফোন করলো কিনা—তখন তো বলা যেত, ওসবের জন্য পকেটে রেস্তো চাই। দাদা, আমার যে তা নেই।
আসলে সৌরভের সামনে আত্মমর্যাদা খোয়াতে চাননি মানস। মনে কিন্তু অন্য কিছুও আছে। বলে ফেল্লে: ‘ আচ্ছা, দাদার তো শুনেছি নিজের অফিস আছে। অনেকে কাজ করে। আমি বোল্লে হয়তো নেয়ে নিত। দাদা, আমার কাছে ভগবান। সারাক্ষণ ভগবানের কাছে থাকতে পারতাম’।
এখন ডিজিটাল মিডিয়ার দুনিয়া। সেই মিডিয়াকে হাতিয়ার করে মানসের বানানো ‘মহারাজের দরবার’ পেজে আজ হাজার হাজার ফলোয়ার।মানসের ব্যবস্থাপনায় ফাইনালের আসরে দর্শকের আসনে এই ফ্যান পেজের ৩৫০ জন মেম্বার হাজির ছিল।এদের মধ্যেই ছিলেন সুদূর দুবাই থেকে আসা শুভাশিস।
ভগবান কী এমন ভক্তের জন্য কিছু করবেন? দাদগিরি-৯ শেষ হবে রবিবার।তারপর থেকে অপেক্ষায় থাকতে চাই, দেখতে চাই: এমন ভক্তের জন্য তাঁর ভগবান কী করলেন।
ছবি: সৌ টুইটার, ফেসবুক।