কলকাতা: দীর্ঘ ২১ দিন পরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট উঠল। হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন সোমবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এদিন থেকেই ওই বয়কট উঠল।
তিন সপ্তাহ আগে বার অ্যাসোসিয়েশনের একাংশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বেশ কিছু দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীকালে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ ওই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রুল জারি করে এ ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ দাবি করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন এভাবে বারবার ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিচ্ছে। কেন এভাবে একক বেঞ্চের হাত পা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই ভূমিকা নিয়ে হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের একাংশ প্রশ্ন তোলে। অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক ডেকে তাঁর এজলাস বয়কট করার প্রস্তাব নেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু গোলমালে সেই বৈঠক ভেস্তে যায়। ফলে অ্যাসোসিয়েশনের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসে যায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে শিক্ষা সংক্রান্ত মামলাগুলি সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে বার অ্যাসোসিয়েশনের একাংশ চিঠি দেয় প্রধান বিচারপতিকে। শুধু তাই নয়, ওই এজলাস বয়কট করারও হুমকি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ‘জালিয়াতি’, এফআইআরে নাম তেহট্টের তৃণমূল বিধায়কের
পরের দিন থেকেই আইনজীবীদের একাংশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কটে নামে। তারা ইচ্ছুক আইনজীবীদের ওই এজলাসে ঢুকতে বাধাও দেয়। তৃণমূলপন্থী ওই আইনজীবীদের সঙ্গে কংগ্রেস, বাম এবং বিজেপি মনোভাবাপন্ন আইনজীবীদের ধস্তাধস্তির মতো নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটে হাইকোর্টে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব বার কাউন্সিল, বার অ্যাসোসিয়েশন এবং প্রবীণ আইনজীবীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন। তবু অচলাবস্থা কাটে না। এজলাসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এ নিয়ে আমি কোনও রাজনীতি করতে চাই না। কিন্তু আপনারা রাজনীতি করছেন। মাথায় বন্দুক ঠেকালেও আমি লড়াই চালিয়ে যাব।
অবশেষে তিন সপ্তাহ পর সোমবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট উঠল। আইনজীবীদের মতে, কলকাতা হাইকোর্টে এতদিন ধরে কোনও বিচারপতির এজলাস বয়কট রীতিমতো নজিরবিহীন ঘটনা।