বাঁকুড়া: বাসন্তী পুজোতে জাগ প্রদীপকে জাগিয়ে রাখেন দে পরিবারের সদস্যরা। দেবীর উদ্দেশে উৎসর্গ করা জাগ প্রদীপ নিভে গেলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আর তাই ঘৃত ও তেলের পাথরের প্রদীপকে নিভতে দেন না কোতুলপুরের দে বাড়ির সদস্যরা। বহু প্রাচীন কোতুলপুরের দে বাড়ির বাসন্তী পুজা। প্রাচীন নিয়ম মেনে আজও এই বাড়ির মন্দিরে পুজিতা হন বাসন্তী।
বাঁকুড়ার কোতুলপুরের দে বাড়ির বাসন্তী পুজোর বয়স প্রায় ২৫০ বছর। পুজো শুরুর পিছনে রয়েছে ইতিহাসও। দে বাড়ির পুর্বপুরুষের আদিবাস ছিল ওড়িশায়। সেখান থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবাদে কোতুলপুরে হাজির হন তাঁরা। কোতুলপুরে শুরু হয় দে পরিবারের গন্ধদ্রব্য ও মশলার ব্যবসা। একদিকে কোতুলপুরে ভদ্র জমিদারদের বিশাল বড় লবণের ব্যবসা, আর অন্যদিকে দে পরিবারের গন্ধদ্রব্য ও মশলার ব্যবসা।
দে বাড়ির বাসন্তী পুজো
আরও পড়ুন: Basanti Puja: বাসন্তী পুজোয় সিন্নি চড়ানো হয়ে মাজারে, সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন বালুরঘাটে
কোতুলপুরের ভদ্র জমিদারদের লবণের ব্যবসা ও বর্ধমানের রাজার কাছ থেকে ১৭টি তালুকের জমিদারি সত্ত্ব কিনে নেন ভদ্র জমিদাররা। জমিদারি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ভদ্র জমিদারদের কোষাগার ফুলেফেঁপে উঠে। জমিদার বাড়ির চৌহুদ্দির মধ্যে নানান পুজো শুরু করেন জমিদাররা।
কোতুলপুর এলাকায় প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেন ভদ্র পরিবার। দে পরিবারও তাদের ব্যবসার সুবাদে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে এলাকায়। আর্থিক বলে বলীয়ান হয়ে বিশাল বিশাল বাড়িও নির্মাণ করে। জমিদারি না থাকলেও দে পরিবারের ফুলেফেঁপে উঠার মূল কারণ ছিল ব্যবসা। আগে কলকাতা থেকে গরুর গাড়ি করে ব্যবসার জিনিসপত্র এনে তা এলাকায় বিক্রি করা হত। ব্যবসার সৌজন্যে আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল দে পরিবার। তাঁরাও শুরু করেন পুজো-অর্চনা। যেহেতু ভদ্র বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়, তাই দে পরিবার শুরু করে বাসন্তী পুজো।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: রামকে বিজেপির ‘সম্পত্তি’ বলে পরোক্ষে দাবি দিলীপ ঘোষের
প্রায় ২৫০ বছরের প্রাচীন এই পুজো আজও প্রাচীন নিয়ম মেনে পালন করছেন দে পরিবারের সদস্যরা। রয়েছে মন্দির, সেখানেই পূজিতা হন দেবী বাসন্তী। প্রতিমা এখানে মাটির। একচালাতেই দুর্গা, শিব, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী বিরাজ করছেন। এখানে পুজো হয় বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে।
আরতি চলছে
পরিবারের সদস্য বিভাস দে জানান, তাঁদের পুজোতে সপ্তমীর দিনে একটি ঘি ও একটি তেলের প্রদীপ উৎসর্গ করা হয়। সেই প্রদীপ পুজোর কটা দিন নিভতে দেওয়া হয় না। এই দুই প্রদীপকে জাগ প্রদীপ বলা হয়। রামনবমীতে বিশেষ পুজো এবং গ্রাম্য দেবী শীতলা মাকে মন্দিরে নিয়ে এসে পুজোপাঠ করা হয়। দশমীতে সিঁদুর খেলা ও দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দে বাড়ির বাসন্তী পুজো। পরিবারের লোকজনও পুজোর কটা দিন যে যেখানেই থাকুক, মাটির টানে তাঁদের প্রাণের পুজোয় ছুটে আসেন কোতুলপুরে। দে বাড়ির এই বাসন্তী পুজোকে কেন্দ্র করে মেতে এলাকার মানুষও।