বাঁকুড়া: দেবতার বিয়েকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে জয়পুর। ধর্মরাজ আধারকুলির বিয়েতে মাতোয়ারা জয়পুরের গ্রাম। বুধবারই নিয়মমতে অধিবাস হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চলছে গায়ে হলুদ, নান্দীমুখ, কনের বাড়িতে গায়ে হলুদ তত্ত্ব নিয়ে যাওয়া। সব মিলিয়ে বরপক্ষ ও কনেপক্ষের ঘরে চলছে তুমুল ব্যস্ততা। গ্রামের দেবতার বিয়েতে অংশ নিতে হাজির দু’পক্ষের আত্মীয় ও পরিজনরাও।
বাঁকুড়ার জয়পুর গ্রামের রাজশোল গ্রামে ধর্মঠাকুর আধারকুলির নবম বিয়ে উপলক্ষে বসেছে গাজন উৎসব। প্রায় ৪৬ বছর পর রাজশোলের আধারকুলির গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর বিয়ে হচ্ছে স্থানীয় নামো সলদা গ্রামের সামন্তবাড়িতে। পাত্রী মুক্তোমা অর্থাৎ এক প্রকার বিশেষ ধরনের ধান। খুবই গোপনে চাষ করা হয় এই মুক্তো চাল।
গায়ে হলুদের তত্ত্ব
আরও পড়ুন: কুমোরটুলির কালী এবার লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে
এদিন সকাল থেকে চলছে গ্রামবাসীর মধ্যে দারুণ ব্যস্ততা। রাতে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে শুভলগ্নে অনুষ্ঠিত হবে ধর্মঠাকুর আধারকুলির নবম বিয়ের অনুষ্ঠান। বরকর্তা শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় জানালেন, এই বিয়ের প্রথা কবে থেকে শুরু তা তাঁর জানা নেই। তবে তিনি শুনেছেন, মল্লরাজাদের কোনও এক সামন্ত এটা চালু করেছিলেন। শেষবার ১৯৭৪-’৭৫ সালে হয়েছিল বলে তিনি জানান। শ্যামাপদ বলেন, এই অনুষ্ঠানে বিপুল খরচ হয়। তাই প্রতিবছর করা যায় না।
২০১৯ সালে একবার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু কোভিডের কারণে তা করা যায়নি। এই বিয়ে ও গাজনকে কেন্দ্র করে উৎসবের মেজাজে মেতে উঠেছে গ্রাম। সকালেই বরের গায়ে হলুদ হয়ে গিয়েছে। তারপর বিয়ের রীতি অনুযায়ী মেয়েরা গায়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছেন। সেখানে তাঁদের আতিথ্য দিয়েছেন মেয়েপক্ষ। সন্ধে ৮টা নাগাদ বাদ্যি বাজিয়ে, শোভাযাত্রা করে বর অর্থাৎ ধর্মরাজ যাবেন বিয়ে করতে।
আরও পড়ুন: Underground House: ইউটিউব দেখে ‘পাতালঘর’ তৈরি করল বর্ধমানের গ্রামের কিশোররা
কন্যাপক্ষের কর্তা তথা সামন্তবাড়ির প্রবীণ সদস্য অমিয় সামন্ত বলেন, বাবার নবম বিয়ে হচ্ছে এবার। পাত্রী মুক্তো ধান। একটি হাঁড়িতে এই ধান রেখে তাকে শাড়ি-গয়না পরিয়ে একেবারে মেয়ের মতো সাজানো হয়। সন্ধেবেলা বরযাত্রী আসবে। বাজনা বাজবে, বাজির রোশনাইয়ে ভরে যাবে গোটা গ্রাম। মন্দিরের ব্রাহ্মণ খুবই নিষ্ঠাভরে বিয়ে দেবেন। এই বিয়ের অনুষ্ঠানটি খুবই কঠিন। আমরাও সাধ্যমতো বরযাত্রীদের রাতের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করি।