কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ‘পদ্মার ঢেউ রে….’ শচীনকর্তার গানের সেই সুরে চোখের সামনে ভেসে ওঠে রূপসী বাংলার ছবি। শুধু পদ্মা বা ব্রহ্মপুত্র নয়, নদী-সাগরঘেরা এই দেশের কৃষি ও মৎস্যচাষের প্রধান উৎসই হচ্ছে জল। তিতাস থেকে ধানসিঁড়ি বা কপোতাক্ষ— বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে জোলো গন্ধ। কিন্তু, উন্নয়নের ঢেউয়ে বাংলাদেশের সেই প্রধান সম্পদ নদ-নদীগুলি এখন দূষণের ভারে নূব্জ। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের জলসম্ভার। আর এই বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী কলকারখানা থেকে নির্গত আবর্জনা ও রাসায়নিক।
এখন সবাই জানে, মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ পিছনে ফেলে দিয়েছে ভারতকে। আর এই অগ্রগতি এসেছে শিল্পের উন্নয়নে। দিনের পর দিন যার মাশুল গুনতে হয়েছে, নদীনালা নির্ভর সভ্যতাকে। পরিবেশবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির কড়ায়গণ্ডায় হিসাব চুকোচ্ছে প্রকৃতি। বাংলাদেশের নদীনালাগুলিতে নির্বিচারে মাত্রাতিরিক্ত বর্জ্য রাসায়নিক ফেলার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। যার কুফল সুদূরপ্রসারী।
আরও পড়ুন: Bangladesh Flood: এমন ভয়াবহ বন্যা জীবনে দেখিনি, বলছেন বাংলাদেশের দুর্গতরা
ঢাকার বাসিন্দা মোসলেমউদ্দিন শহরের বালু নদীর জল দেখিয়ে বললেন, এখানে গোটা ঢাকা শহরের আবর্জনা এসে পড়ে। তিনি দেখিয়ে বললেন, জলের রং দেখুন কালো, দুর্গন্ধময় হয়ে গিয়েছে। এই জল বাসিন্দাদের ব্যবহারের অযোগ্য। বাংলাদেশে সুন্দরবনের বদ্বীপ এলাকা ছাড়াও প্রায় ২০০টি নদীনালা রয়েছে। পরিবেশকর্মী শরিফ জামিল তথ্য দিয়ে জানালেন, দেশের অনেকগুলি নদী মরে গিয়েছে। মজে যাওয়া খালবিলের সংখ্যা আরও বেশি। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বড় শহরগুলি লাগোয়া নদীগুলি মৃত। শুধু তাই নয়, দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অন্যান্য নদীগুলিও মৃতপ্রায়। এই অবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়ন বন্ধ করার দাবি তুলেছেন জামিল। তাঁর কথায়, দূষণ সৃষ্টিকারী এরকম কলকারখানার উপর নজরদারি না-চালালে এই ধ্বংসলীলা বন্ধ করা যাবে না। তা না করতে পারলে বাংলাদেশের সব নদীই একদিন নর্দমায় পরিণত হবে বলে তাঁর দাবি।
বাংলাদেশে বস্ত্রশিল্পের বিরাট প্রসার ঘটেছে। কিন্তু, তার মূল্য দিয়েছে নদীগুলি। কারণ, পোশাক তৈরির কারখানা থেকে ক্রমাগত বেরিয়ে আসা রাসায়নিক রং ও বর্জ্য পদার্থ জল দূষণ ঘটাচ্ছে। চর্মশিল্পর সঙ্গে যুক্ত এক কর্মী জানালেন, বুড়িগঙ্গার জলকে বিষিয়ে তোলার কারণে ট্যানারিগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু, এবার ট্যানারির নোংরা জলে বিষিয়ে যাচ্ছে ধলেশ্বরী নদী। তাঁর কথায়, আমরা ময়লা ফেলব কোথায়! যেখানে ময়লা ফেলা হয়, প্রতিবছর তার দেওয়াল ভেঙে হুড়মুড়িয়ে সব আবর্জনা নদীর জলে গিয়ে পড়ে।
স্থানীয় এক চাষি আবদুল খালেকের কথায়, কয়েক দশক আগে এইসব নদীগুলির জল আমরা ব্যবহার করতাম। অথচ, এখন কোনও নদীর জলই ব্যবহারে মতো নেই। তিনি বলেন, শুধু মাছই নয়, সেচের কাজে ব্যবহৃত এই জলে চাষ মার খাচ্ছে।
বাংলাদেশের জাতীয় নদী সংরক্ষণ কমিশনের চেয়ারম্যান এ চৌধুরি বলেন, আসলে দূষণ সৃষ্টিকারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আইনগুলি এত দুর্বল যে, এদের ঠেকানা মুশকিল। তাই আমরা দেশের আইন সংশোধনের চেষ্টা করছি। দেশের নদী আমাদের সম্পদ, যে কোনও মূল্যে তাকে রক্ষা করতেই হবে বলে জানান তিনি।