ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর টিম বেলজিয়াম। তাদের সেরা প্লেয়াররা খেলেন রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, ইন্টার মিলানের মতো চ্যাম্পিয়ন টিমে। কিন্তু জাতীয় দলের কোনও বড় সাফল্য নেই। বিশ্ব কাপে তো বটেই ইউরো কাপেও বেলজিয়ামের ঘরে কোনও ট্রফি ওঠেনি। তাদের একটা সোনার যুগ ছিল ১৯৮৬-র বিশ্ব কাপের সময়। সেবার তাদের দৌড় শেষ হয়ে গিয়েছিল সেমিফাইনালে উঠেই। আবার ২০১৮ সালের বিশ্ব কাপেও খুবই ভাল খেলেছিল বেলজিয়াম। সেবারও তারা বিদায় নিয়েছিল সেমিফাইনাল থেকেই। ভাগ্যের কী পরিহাস! ছিয়াশিতে তারা হেরে গিয়েছিল চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্তিনার কাছে। আর তিন বছর আগে তাদের হার হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে। রেড ডেভিলসরা তাই শেষ পর্যন্ত মাথা নীচু করে মাঠ ছেড়েছিল।
এবার কিন্তু বেলজিয়াম অনেক তৈরি হয়ে এসেছে। এবারের ইউরোতে বি গ্রূপে তাদের প্রথম ম্যাচ শনিবার রাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেই দেশের সেন্ট পিটার্সবার্গের মাঠে। হয়তো কাকতালীয়, কিন্তু ঘটনা এই যে ইউরো কোয়ালিফাইংয়ে বেলজিয়াম এবং রাশিয়া একই গ্রূপে ছিল। কিন্তু দুবারই রাশিয়া হেরে যায় বেলজিয়ামের কাছে। বেলরা দশটা ম্যাচের দশটাতেই জিতেছিল। রুশিরা ওই দুখানা ম্যাচ হেরে গেলেও বাকি আটটা ম্যাচেই জিতেছিল। রবের্তো মার্টিনেজের বেলজিয়াম দশটা ম্যাচে ৪০টা গোল করেছিল। খেয়েছিল মাত্র তিনটে গোল। এই তথ্যেই বোঝা যাচ্ছে তাদের স্ট্রাইকিংপাওয়ার কতটা। রাশিয়া গত বিশ্ব কাপে নিজেদের দেশে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। স্ট্যানিস্লাভ চেরচেসভের টিমে যে প্রচুর তারকা ফুটবলার আছে তা নয়, কিন্তু শনিবার রাতে নিজের দেশে নিজেদের দর্শকদের সামনে তারা যে বিনা যুদ্ধে হেরে যাবে তা নিশ্চয়ই নয়।
যতই বেলজিয়ামের কেভিন দে ব্রূইন কিংবা এডেন হ্যাজার্ড থাকুন না কেন বেলজিয়ামের এক নম্বর শক্তি তাদের স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু। ইন্টার মিলানকে সিরি আ জেতাবার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন লুকাকু। করেছিলেন ৩৬ ম্যাচে ২৪ গোল। আর দেশের হয়ে তো লুকাকু সর্ব কালের সেরা স্কোরার। ৯৩ ম্যাচে তাঁর গোল ৬০। কদিন আগে আঠাশ পেরিয়ে উনত্রিশে পা দেওয়া লুকাকুর উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে বেলজিয়ামের সাফল্য। তাঁর বাবা-মা কঙ্গোর আদি বাসিন্দা হলেও লুকাকুর জন্ম বেলজিয়ামে। সতেরো বছরের দেশের হয়ে তাঁর প্রথম ম্যাচ। আর তিনি এখন দলের স্তম্ভ। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে নাকে চোট পেয়েছিলেন কেভিন দে ব্রূইন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর মাঠে থাকার সম্ভাবনা নেই। অধিনায়ক এডেন হ্যাজার্ড অবশ্য থাকবেন। তবে ইদানীং তাঁর ফর্ম খুব যে ভাল তা নয়। তবে ২০১৮-র বিশ্ব কাপে হ্যাজার্ডের জন্যই বেলজিয়াম যে সেমিফাইনালে গিয়েছিল তা বলাই যায়। গোলে থিওবা কুর্তোয়া এখন বিশ্বের প্রথম তিনজনের একজন। বেলজিয়ামকে অনেক দূর যেতে হলে তাঁকে তো ভাল খেলতেই হবে। তবে কুর্তোয়া সাধারণত খারাপ খেলেন না।
চেরচেসভের রাশিয়া ঘরের মাঠে অবশ্যই লড়বে। তাদেরও ভরসা স্ট্রাইকার আর্তেম ডিজুবা। ৫২ ম্যাচে ২৯টি গোল করে ফেলেছেন ডিজুবা। রাশিয়ার ডিফেন্স বেশ শক্তপোক্ত। তবে তাদের টিমে ব্যাক্তিগত স্কিলের ঝনঝনানি নেই। খানিকটা গায়ে গতরে খেলার চেষ্টা করে তারা। এই টিম নিয়ে বিশ্বের এক নম্বরের সঙ্গে এঁটে ওঠা মুশকিল। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে তারা বেলজিয়ামের কাছে দুটো ম্যাচেই হেরেছে। শনিবার রাতের পর সংখ্যাটা তিনে পৌছলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সাম্প্রতিক কালে দু দলের সাতটি ম্যাচে বেলজিয়াম জিতেছে পাঁচটিতে। বাকি দুটি ড্র। শনিবার তাই বেলজিয়ামই ফেভারিট।
শনিবারের বাকি দুটি ম্যাচের একটিতে ওয়েলসের সামনে সুইৎজারল্যান্ড, বাকিটিতে ডেনমার্ক মুখোমুখি ফিনল্যান্ডের।