২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এত খারাপ সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জীবনে কখনো আসেনি। কোভিড-২ এই পর্যায়ে যে ধরণের বিপর্যয়ের মুখোমুখি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সেটা সবটা বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে না। দিল্লিতে যারা প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে যেটা জানতে পারা যাচ্ছে, যে এখন আমাদের এমন অবস্থা ভুটান বা বাহরিনের মতো দেশের কাছ থেকেও ভ্যাক্সিন কিনছি। এতটাই তীব্র সঙ্কট হয়েছে। কিন্তু কেন সঙ্কট হয়েছে তার প্রধান কারণ হচ্ছে, বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, যে একদম প্রথম দিন থেকে তিনি কিন্তু বলে এসেছেন একটা অ্যাগ্ৰেসিভ ভ্যাক্সিনেশন পলিসি দরকার। অর্থাৎ আমাদের কিন্তু যদি দেড়শো কোটি মানুষ হয় এবং তাঁদের দুবার ভ্যাক্সিন দিতে হলে তিনশো কোটি ভ্যাক্সিনের প্রয়োজন। সেটা একটা দফার জন্যই তিনশো কোটি প্রয়োজন। প্রথম দফাতেই ভ্যাক্সিন দেওয়ার জন্যই তিনশো কোটি ভ্যাক্সিনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। আমেরিকা এবং বিভিন্ন দেশের কাছে এ ব্যাপারে দরবার করা তখনই উচিত ছিল। কিন্তু সেটা না করে তখন পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়, অথবা কি করে দিল্লিতে পুরনো পার্লামেন্ট এবং ল্যুটেন্স দিল্লিকে ভেঙে দিয়ে কিভাবে নরেন্দ্র মোদীর শহরে রূপান্তরিত করা যায়, মোদী তার জন্য ব্যস্ত ছিলেন। এর ফলে এখন যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তার থেকে জানা যাচ্ছে, যে সিরাম ইন্সটিটিউট যারা আমাদের ভ্যাক্সিন তৈরি করে তার প্রধান পুনাওয়ালা এতটা ক্ষেপে গেছেন, যে তিনি লন্ডনে চলে গেছেন, এবং তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে চলে গেছেন। তিনি ভারতে ফিরছেন না। তিনি ভারত সরকারের প্রচণ্ড সমালোচনা করছেন এই জন্য, যে তার বক্তব্য হচ্ছে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে দেশে ভ্যাক্সিন না দিয়ে রফতানি করেছি। আসলে সরকার যেমনটা চেয়েছেন তেমনটাই তো আমরা উৎপাদন করবো এবং তেমনটাই দেবো। সরকার যদি তখন বেশি উৎপাদনের দাবি জানাতো আমাদের সুবিধা হতো। এখন সরকার আমাদের বলছে, যে এতো ভ্যাক্সিন চাই। কিন্তু ভ্যাক্সিনটা কফি বানানো নয়। ভ্যাক্সিনটা বানাতে সময় লাগে। তার কারণ ৩০০টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। সেই ৩০০টি উপাদান যেগুলো প্রয়োজন হয়, সেগুলো সবটাই ভারত থেকে আসে না। আমেরিকার মনোপলি চারটে কোম্পানির কাছে আছে। সেখান থেকে এমন একটা উপাদান আসে যেটা আরএনএ সংক্রান্ত। সেই উপাদান ছাড়া ভ্যাক্সিনটা তৈরি করা যায় না। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন একটা আইন করে রেখে দিয়েছিলেন এবং সত্ত্ব করে দিয়ে গেছিলেন। যেটা তখন যে সব আবেদন জানানো হয়েছে তার ভিত্তিতেই দেওয়া হবে। নতুন করে আবেদন করলে অন্য কোন দেশকে দেওয়া যাবে না। আমেরিকার মধ্যেই রাখতে হবে। এখন প্রধানমন্ত্রী জয়শঙ্করকে আমেরিকায় পাঠাচ্ছেন। আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী, যাকে ওরা বিদেশ সচিব বলে তার সঙ্গে বৈঠক করবেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘে জয়শঙ্কর যাবেন, সবাইকে বোঝাবেন। যাতে তারা নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয় এবং এখন মানবতার কারণে ভ্যাক্সিনটা দেওয়া হয়। আমরা নিশ্চই চাইবো না যে নরেন্দ্র মোদীর শাসনের অবসানের জন্য ভারতে ভ্যাক্সিন অপ্রতুল হোক, মানুষ মারা যাক। কেননা প্রশ্নটা মানুষের বাঁচা-মরার। নরেন্দ্র মোদীর থাকা না থাকার নয়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী যে চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ এটা বোঝা যাচ্ছে। এখন জয়শঙ্কর যেটা বলছেন, আগে থাকতে সজাগ করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এটা গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি। তিনি নিজে ইএনটি স্পেশালিস্ট, ভাইরোলজির কি বোঝেন! আবার তিনি বলছেন, এখানে যারা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন তাঁরাই ছড়ি ঘুরিয়েছে। তাঁরা সব নরেন্দ্র মোদীর লোক। তাঁরাই কিন্তু বলেছে, করোনা-২ কিছু হবে না, চিন্তার কিছু কারণ নেই। বিশেষ করে নীতি আয়োগের মেম্বার মিঃ পল যত নষ্টের গোড়া। তিনি নিজে অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউটের চাইন্ড স্পেশালিস্ট। তাঁকে করোনা সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হর্ষবর্ধন এখন পলকে দায়ী করছে। পল আবার অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউটের ডাক্তার যারা এই ব্যাপারগুলো দেখেছেন তাঁদেরকে দায়ী করছেন। পুনাওয়ালাকে দোষী সাবস্ত করছেন। তার মধ্যে নরেন্দ্র মোদীর বিপত্তি হয়েছে, কোভ্যাক্সিনটা চলবে কি চলবে না সেটা আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলো বলেছে জুন মাসে জানাবে। কোনো ভারতীয়ই কোভ্যাক্সিন নিয়ে বিদেশে যেতে পারবে না। নরেন্দ্র মোদী নিজেই স্বদেশীয়ানা দেখানোর জন্য কোভ্যাক্সিন নিচ্ছেন বলে ছবি তুলে ছিলেন। যদি সত্যি তিনি কোভ্যাক্সিন নিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি চাইলেও কিন্তু বিদেশ যেতে পারবেন না। অন্তত নিয়ম যা তা যদি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম না হয় তাহলে আলাদা ব্যাপার। এরপর দেখুন, লন্ডনে জি-৭ সম্মেলন হল। সেখানে জয়শঙ্কর ভারতীয় প্রতিনিধি দল নিয়ে গেল। কিন্তু দেখা গেল দুজনের করোনা আছে। তাহলে কিসের পরীক্ষা হল? জয়শঙ্কর বলছেন, প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সাতবার পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ধরা পড়লো না ? তিনি বলছেন, লন্ডনের পরীক্ষাটা নাকি বেশি সংবেদনশীল। সেই জন্য ধরা পড়েছে। ওরা তিলকে তাল করেছে। কিন্তু এতো অপমান হল ভারতের, যে জয়শঙ্করকে লন্ডনে গিয়ে সোশ্যাল আইসোলেশনে থাকতে হল, এবং লন্ডনে বসে ভার্চুয়াল মিটিং করতে হল। এগুলো আর যাইহোক নরেন্দ্র মোদীর জন্য তো সুখকর নয়। এই জিনিসটাই যদি অন্য কেউ করতো তাহলে এতদিনে হইহই পড়ে যেত। বিজেপি বিরোধী দল হলে তারা এই সময় কী করতো ? দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস, যারা দিল্লিতে সব থেকে বড় বিরোধী দল হিসেবে দাবি করে। তাদেরকে দেখা যাচ্ছে না। কেজরিওয়াল বিরোধিতা করলেও, তিনি উল্টো পাল্টা লাইনে যাচ্ছেন। ভুল লাইনে গিয়ে খেলছেন। যেমন সিঙ্গাপুর নিয়ে এমন কিছু কথা বলেছেন, যেটা তাঁর বিরুদ্ধে গেছে। তিনি কখন মোদীর সমর্থক আর কখন বিরোধীতা করছেন সেটা সবসময় বোঝা যাচ্ছে না। তার ফলে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতাও যথেষ্ট অসুবিধার মধ্যে পড়ছে।
(১) এই ব্লেম গেম, একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা দেখে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ। তিনি এখন বলছেন, সবটাই আমি এখন নিজে দেখবো। কিন্তু ইট ইস টু লেট। প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি.কে.মিশ্র এখন সব কিছু দেখছেন। তিনি তার দীর্ঘ আমলা জীবনে কখনো কোনো ইন্টারভিউ দেননি। টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় একট বিরাট ইন্টারভিউ ছাপা হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, কিভাবে কোভিডের মোকাবিলা করা হবে। ক্যাবিনেট সেক্রেটারির কাছে নিয়ে আসা হয়েছে। আসলে আইএস লবির সঙ্গে এই হেলথ টেকনিক্যাল লবির একটা বিরাট ঝামেলা চলছিল। টেকনিক্যাল লবির লোকেরা, হেলথ লবিকে কিছু করতে দিচ্ছিল না। নীতি আয়োগের মিঃ পল, যিনি প্রধানমন্ত্রীর খুব ঘনিষ্ঠ। তিনিই তাঁকে সব দায়িত্ব দিয়ে নীতি আয়োগে নিয়ে এসেছিলেন। করোনা ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওপর অর্পণ করেছিলেন। এখন পি.কে.মিশ্রের নেতৃত্বে ক্যাবিনেট সচিব এবং আইএস লবিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। কেননা, আইএসদের বক্তব্য হল, আমরা করোনাটা নাও জানতে পারি, কিন্তু একজন ডিস্ট্রিক্ট মেজিস্ট্রেটও কিন্তু কি করে প্রশাসনটা চালাতে হয়, এবং কিভাবে কোভিডের বিষয়গুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হয়, এগুলো তো তারা জানে। সুতরাং তাঁদের হাতে কেন দায়িত্বটা দেওয়া হবে না ! এই সব নিয়ে গোলমাল।
কিন্তু সবশেষে একটা কথাই বলা যায়, ওমুকে দায়ী, তমুকে দায়ী। ‘ক’ দায়ী, ‘খ’ দায়ী – এইসব না করে কোথাও তো একজন শীর্ষে আছেন। তাকে তো দায়িত্বটা নিতে হয়। একটা প্রশ্ন সকলেই করছেন, যে গোটা ছ-বছরে নরেন্দ্র মোদী কী এক বারও বলেছেন, যে আমার এটা ভুল হয়েছে?
মানুষ মাত্রেই তো ভুল করে। উনি কী এই সাতবছরে কোনো ভুলই করেননি ? তাঁর নিজের ভুল স্বীকার করলে তো তাঁর মর্যাদাই বাড়তো। কুম্ভতে এত লোককে স্নান করানোর পারমিশন দিয়ে ভুল হয়েছে এই কথাটাও তো তিনি বলতে পারেন। তাঁকে আজ পর্যন্ত ছোট ভুল, বড় ভুল কোনো ভুলই স্বীকার করতে কেউ দেখেননি।
(২) উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথকে নিয়েও খুব বিপদে পড়েছে। কেননা, ওখানে ভয়ঙ্কর ঠাকুররাজ তৈরি হয়েছে। পোশাকে সন্ন্যাসী কিন্তু আসলে ভয়ঙ্কর ঠাকুর। সব থানা গুলোতে ঠাকুরের ওসি ও আইসিদের বসানো হয়েছে। এখন অখিলেশের ওখানে একটা উত্থান হচ্ছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের পরে আরও উৎসাহিত হয়েছে। এই অবস্থায় যোগীকে সরানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং অমিত শাহ-রা একটা চেষ্টা করছেন। কিন্তু আরএসএসের বক্তব্য হচ্ছে, এটা ভেবেচিন্তে করতে হবে। কেননা প্রথমত যোগীর জায়গা কে নেবেন সেটাতে ঐক্যমত্য হওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, ঠাকুরাও ক্ষেপে গেলে চলবে না। আবার ঠাকুরকে সরিয়ে ব্রাহ্মণদের আনলে ঠাকুররা ক্ষেপে যাবে। আবার ব্রাহ্মণদের মধ্যেও সেরকম কোনো নেতা নেই। সবথেকে বড় কথা হচ্ছে, এমনিতেই আরএসএসের সম্পর্কে বলা হয় ব্রাহ্মণ্যবাদী। সেখানে ব্রাহ্মণ গেলে কী ঠিক হবে? আবার দুজন ডেপুটি চিফ মিনিস্টার আছে। একজন ব্রাহ্মণ আরেকজন নীচু জাতের। তাঁরা কিন্তু অ্যান্টিচিফ মিনিস্টার। এখন ক্যাবিনেটের সকলেই প্রায় চিফ মিনিস্টারের বিরুদ্ধে। তার ফলে ভীষণ জনপ্রিয়তা হারিয়েছে এবং করোনা ম্যানেজমেন্ট সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই অবস্থায় আরএসএস ভাবছে, একজন সন্ন্যাসীকে সরিয়ে দিলে, উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্ববাদী লোক সরে গেলে সেটা আবার হিতে বিপরীত না হয়। সব মিলিয়ে প্রচণ্ড কনফিউজড, বারবার বৈঠক চলছে। গত দু’দিন ধরে আরএসএসের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ওরা নিতে পারেনি। কিন্তু যোগী থাকলে একটা জিনিস বোঝা যাচ্ছে, উত্তরপ্রদেশে জেতা কঠিন। আর সামনের বছর যদি উত্তরপ্রদেশে হেরে যায়, তাহলে ২০২৪ এ কি হবে সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে ! সবকিছু সামনের বছর উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের ওপরে নির্ভর করছে।
(৩) পশ্চিমবঙ্গে সোমবার সিবিআইয়ের বিষয় নিয়ে হাই কোর্ট যাই রায় দিক না কেন, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের রণকৌশল হল, পশ্চিমবঙ্গে এই যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়া। সারাক্ষণ ধরে মমতাকে অশান্তির মধ্যে রাখা। যাতে তিনি কাজ করতে না পারেন। একটা নতুন সরকার গঠন হয়েছে। এটাতে যে বিজেপির জনপ্রিয়তা নষ্ট হচ্ছে, এবং রাজ্য স্তরে যে বিজেপি আরও খাস্তা হচ্ছে। সেটা বুঝেও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝছে না। কেননা পশ্চিমবঙ্গে যেটা করা হচ্ছে, সেটা কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জন্য নয়। পশ্চিমবঙ্গে যা হওয়ার হয়ে গেছে। ২০২৪ টা যাতে হাতের বাইরে না যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হয়ে উঠছেন, বিরোধীদের ঐক্যের একটা কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন। কমলনাথের মতো নেতা বলেছেন, যে বিরোধী দলের তিনিই (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ই নেতৃত্ব দেবেন। মধ্যপ্রদেশে জনসভা করার জন্য তাঁকে আহ্বান জানিয়েছেন।
এই সব ডেভেলপমেন্ট গুলোতে এখনই যদি দুর্নীতি এবং হিংসা এই দুটো ইস্যু দিয়ে মমতাকে ব্যস্ত রাখা যায়। তাতে বিরোধী ঐক্যটা বিপন্ন হবে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লির মুখও হতে পারবেন না। ওনাকে পশ্চিমবঙ্গে আটকে রাখা সম্ভব হবে। রাজ্যপালকে কিছুতেই সরানো হবে না। রাজ্যপালকে সরানোর চেষ্টা করে এখনই স্মারকলিপি দিয়ে বা যেটা সৌগত রায়-রা বলেছেন, সেটা এতটা অ্যাগ্ৰেসিভ হয়ে তৃণমূলের করা উচিত কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ! কেননা যে জিনিসটা এখনই অ্যাচিভ করা যাবে না সেটা নিয়ে হইচই করাটা উচিত হবে কিনা! বিজেপি কিন্তু রাজ্যপালকে দিয়েই এই ধরণের অপ্রীতিকর কাজগুলো করাতে চাইছে। উল্টে বিজেপিকে কিন্তু সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে যাচ্ছে না।
(৪) কংগ্রেসের খবর- সোনিয়া গান্ধী নিজে কিন্তু কেরল, অসম বিভিন্ন জায়গায় কংগ্রেসের যে বিপর্যয় নিয়ে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। তিনি রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা দুজনের সঙ্গেই বৈঠক করেছেন। তিনি বলছেন, যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শরদ পাওয়ার এই দুজনের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কাকে যোগাযোগ তৈরি করার জন্য। আমেদ প্যাটেল না থাকায় খুবই অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু কমলনাথ দায়িত্বটা চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে দায়িত্বটা দেওয়া হল না। শরদ পাওয়ার কিন্তু ইউপিএ-এর কনভেনার হতে চান না। শরদ পাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলায়, প্রিয়াঙ্কা তাঁকে ফোন করেছিলেন। তাঁর বুদ্ধিতেই গুলাম নবি আজাদকে কেরল থেকে রাজ্যসভায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এবং কোভিড ম্যানেজমেন্টে যে টাস্কফোর্স গঠন হয়েছে, তাতে তাঁকে চেয়ারম্যান করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীতে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এমনকি জম্মুতেও একটা সভাও করেছিলেন, যেটাতে কপিল সিব্বলরা রয়েছেন। সেই জায়গাটা থেকে গুলামকে বের করা সম্ভব হয়েছে বলে সোনিয়া গান্ধীর ঘনিষ্ঠ মহল দাবি করছেন। এর পাশাপাশি বলা হচ্ছে ,মহারাষ্ট্রটা নিয়েও খুব ঝামেলার মধ্যে রয়েছে। ২০২৪ এর আগে কংগ্রেস সাপোর্ট তুলে নিতে পারে, কেননা, মহারাষ্ট্র থেকে যদি সমর্থন প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে কংগ্রেস একদম ডুবে যাবে। ওখানে পশ্চিমবঙ্গের থেকেও অনেকগুলো আসন আছে। এখন এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস যদি সমর্থন তুলে নেয়। তাহলে বিজেপি কিন্তু উদ্ধবের সঙ্গে হাত মেলানোর চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী ঘনঘন ফোন করছেন মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে। মহারাষ্ট্র খুব ভালো কোভিড ম্যানেজমেন্টে কাজ করছে। মহারাষ্ট্রের শিবসেনার সঙ্গে দরকার হলে সমর্থন করা। মমতা এবং অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীদের থেকে উদ্ধবকে আলাদা করা হয়। কেননা উদ্ধব, মমতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এই খবরটা প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় যদি বিজেপি-শিবসেনা সরকার বানিয়ে নেয়। কিন্তু শরদ পাওয়ার সেটা চাইছেন না। তিনি চাইছেন, যাতে বিরোধী দলগুলো একত্রিত হয়। তাঁর অমিত শাহ এবং মোদীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার আগেই অমিত শাহ দেখা করলেন এবং শরদ পাওয়ার পশ্চিমবঙ্গে গেলেন না। তার প্রধান কারণ টাকা পয়সার, এবং পুলিশ কমিশনার ইত্যাদি। ইত্যাদি। এটাতে বিজেপি তাঁর স্বার্থটা রক্ষা করেছে। কিন্তু তিনি সবথেকে প্রবীণ নেতা হিসেবে বিরোধীদের ঐক্যটাও চাইছেন। তিনি সেটাকে একটা ঐক্যবদ্ধ জায়গায় নিয়ে আসার জন্যে তৎপর আছেন। এই অবস্থায় কংগ্রেস একটু ভাঙার চেষ্টা করছে। রমেশ চেন্নিথালাকে কেরলের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে নবীণ একজন নেতাকে আনা হয়েছে। এই আইসিসিতেও একটা বড় রদবদলের চেষ্টা হচ্ছে। রাহুল গান্ধীর দলের সভাপতির দায়িত্বটা নেওয়া এবং না নেওয়া নিয়ে কনফিউশন থেকে গেছে। তাঁকে দিয়ে হচ্ছে না বুঝতে পেরেই, তাঁকে সরাসরি না সরিয়ে প্রিয়াঙ্কাকে সংগঠনের কাজগুলো দেখার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এই মুহূর্তে খুব সক্রিয় অবস্থায় রয়েছেন। এত কিছুর মধ্যেও ওদের অদ্ভুত একটা শঙ্কা রয়েছে, যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যদি বিরোধী ঐক্য গঠন হয়ে যায়, তাহলে রাহুল গান্ধীর কী হবে? এটা থেকে কংগ্রেসকে বের হতে হবে !