ডেনমার্ক–২ চেক প্রজাতন্ত্র–১
(টমাস ডেলানি, কাসপার ডলবার্গ) (প্যাট্রিক সিক)
একটা টিমের সেরা প্লেয়ারকে দেওয়া হয় দশ নম্বর জার্সি। তা ডেনমার্কের দশ নম্বর জার্সির মালিক ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন যখন কোপেনহেগেনে তাঁর বাড়ির ড্রইং রুমে বসে দলকে উজ্জীবিত করার অবিরত চেষ্টা করছেন টিমমেটদের জন্য নানারকম টুইট করে, তখন মাঠে নেমে টিমের সেরা প্লেয়ার ছাড়াই ডেনমার্ক পৌছে গেল ইউরোর সেমিফাইনালে। প্রথম ম্যাচে ডেনিস ঘোড়াটা একটু মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তার পর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সেই অশ্বমেধের ঘোড়াটা সেই যে দৌড় শুরু করেছে তা এখনও থামেনি। রাশিয়া, ওয়েলসের পর শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় আজারবাইজানের বাকু স্টেডিয়ামে তাদের কাছে ধরাসায়ী হল চেক প্রজাতন্ত্র, যারা প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের মতো চ্যাম্পিয়ন টিমকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এদিন ডেনিসদের দাপটের কাছে চেকদের সব জারিজুরি শেষ। পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোল করে এগিয়ে যাওয়া ডেনমার্ক বিরতির আগেই আবার গোল করে এগিয়ে যায়। বিরতির পরে মাঠে নেমেই চেক একটা গোল শোধ করার পর তাদের আর ফনা তুলতে দেয়নি ডেনমার্ক।
এই ডেনমার্ক অবশ্যই মনে করাচ্ছে ১৯৯২-র ডেনমার্ককে। সেবার শেষ মুহূর্তে সোভিয়েত ইউনিয়ন নাম তুলে নেওয়ায় ডেনমার্ক সুযোগ পায়। মাত্র দশ দিনের প্রস্তুতিতে তারা সুইডেন থেকে ইউরো কাপটা নিয়ে যায় কোপেনহেগেনে। এবার সেই শহরেই একটা দুর্ঘটনা দিয়ে শুরু হয়েছে তাদের অভিযান। এখন পর্যন্ত তারা যেখানে পৌছেছে তাতে ট্রফি থেকে আর মাত্র দুটো জয় দূরে। সেমিফাইনালে হয়তো ইংল্যান্ডের সামনে পড়তে হবে ডেনিসদের। খেলাটাও হবে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। ডেনমার্কের কাজটা খুবই কঠিন। তবে অঘটনের ইউরোতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।
ওয়েলসের বিরুদ্ধে যে এগারোজন নেমেছিল তাদের দিয়েই দল সাজিয়েছিলেন ডেনিস কোচ কাসপার হিজমান্ড। তবে এদিন তারা লাল-সাদা শার্ট পরে নামেনি। পুরো সাদা ফুল হাতা শার্ট পরে নেমেছিল। ডেনমার্কের এক নম্বর তারকা বাড়িতে শুয়ে। কিন্তু বার্সেলোনার মার্টিন ব্রেথওয়েট ছিলেন। ফরাসি লিগা ওয়ানের কাসপার ডলবার্গ ছিলেন। এরাই এখন তারকা। পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোল পেয়ে গেল ডেনমার্ক। স্ট্রেইজারের ইনসুইং কর্নার ঠিক পেনাল্টি স্পটের মাথায় যখন পড়ছে তখন হেড করতে উঠে এসেছেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার টমাস ডেলানি। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ডেলানির হেড মাটিতে ড্রপ খেয়ে গোলে চলে যায়। চেকদের গোলকিপার টমাস ভাকলিক শরীর ছুড়ে দিয়েও বলের নাগাল পাননি। ম্যাচের শুরুতেই গোল পেয়ে গিয়ে ডেনমার্ক দ্বিগুণ উৎসাহে আক্রমণে চলে যায়। মাঠের সর্বত্র তখন তারা। চেকরা পায়ের তলায় জমি খুঁজে পাচ্ছে না। ব্রেথওয়েট, মিকেল ডমসগার্ড এবং কাসপার ডলবার্গরা তখন আরও গোলের জন্য মরিয়া। আগের দুটো ম্যাচে তারা রাশিয়া এবং ওয়েলসের বিরুদ্ধে চারটে করে গোল করে এসেছে। কিন্তু চেক অধিনায়ক এবং ডিফেন্সের মেরুদণ্ড টমাস সৌসেক এবং গোলকিপার টমাস ভাকলিক অনবদ্য খেলে ডেনমার্ককে আর গোল করতে দিচ্ছেন না। অবশেষে সেই প্রতিরোধ ভাঙল। ৪২ মিনিটে মাহেল তাঁর ডান পায়ের আউটসাইড দিয়ে একটা চমৎকার বাঁক খাওয়ানো সেন্টার করলেন। ব্রেথওয়েট হেড করতে উঠে বলের নাগাল পেলেন না। তাঁর পিছনেই ছিলেন ডলবার্গ। বল ধরে আলতো পুশে তা গোলে পাঠালেন নিস ফরোয়ার্ড।
বিরতির আগেই জোড়া গোলে পিছিয়ে পড়েও চেকরা কিন্তু দমেনি। বিশেষ করে প্যাট্রিক সিক যে দলে আছেন তারা গোল পাবে না তা হয় নাকি। এর আগের চারটে ম্যাচে চারটে গোল ছিল এই বেয়ার লেবারকুসেন স্ট্রাইকারের। ৪৯ মিনিটে সেই গোল সংখ্যা পাঁচ হয়ে গেল। এবং এক ইউরোতে পাঁচটি গোল করে সিক ছুঁয়ে ফেললেন চেক কিংবদন্তী মিলান বারোসকে। কাফেলের সেন্টার এক ডেনিস ডিফেন্ডারের পা ছুঁয়ে সিকের কাছে যেতেই জোরালো শটে গোল করে ব্যবধান কমান তিনি। এর পর চেকদের আক্রমণের কাছে ডেনমার্ক একটু গুটিয়ে যায়। কিন্তু তাদের আক্রমণে ফেরাবার জন্য ডেনিস কোচ ইউসুফ পলসেনকে নামান ডলবার্গকে বসিয়ে। বুন্দেশলিগার আর পি লাইপজিগের এই স্ট্রাইকারের এবারের ইউরোতে গোল আছে। পলসেন নামায় ডেনিস আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ে। কিন্তু আর তারা গোল করতে পারেনি। শেষ দিকে চেকরা একটা মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সিমোন কাজেরের নেতৃত্বে ডেনমার্ক ডিফেন্স তাদের সুযোগ দেয়নি। তাও যে সব শট এসেছিল তা আটকে গেছে ডেনিস গোলকিপার কাসপার স্কিমিশেলের কাছে। তাঁর বাবা পিটার ছিলেন বিরানব্বইয়ের চ্যাম্পিয়ন টিমের গোলকিপার। কাসপাররা কি পারবেন পিটারদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে?