গুরু কৌশিক সাহা এই পৃথিবীতে আর নেই। বাংলার পয়লা নম্বর বিসিসিআই স্কোরার কৌশিক মারা গেছেন দু’বছর আগে। তাঁরই কাছে স্কোরিং শিখে বাংলার উঠতি স্কোরার সূর্যকান্ত পান্ডা আজ দুবাইয়ে বিশ্বকাপে স্কোরিং করছেন। ভারতীয় দলে আছেন বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি পেসার মহম্মদ সামি। আর মাঠের বাইরে থাকছেন বাংলার দুই স্কোরার–সূর্যকান্ত এবং তনয় পান্তি।
গতবছর প্রথমবার বিদেশে পা রেখেছিলেন আইপিএলের সময়। এবারও আইপিএল পার্ট-টু পর্বে স্কোরিং করতে গিয়েছিলেন আরব শহরে। সূর্য বুধবার দুবাই থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলে বারবার বলছিলেন, ‘কৌশিকদা আজ নেই।নিজের হাতে উনি আর রন্টুদা (রক্তিম সাঁধু) আমাকে রাত জেগে প্র্যাকতিস করাতেন।হঠাৎ করে চলে গেলেন কৌশিকদা। আমার মনে হয় সারাক্ষণ আমার সঙ্গে সঙ্গে আছেন।ম্যাচ শুরুর আগে কৌশিকদা, বাবা-মা আর প্রভু জগন্নাথ স্বামীর নাম নিয়ে স্কোরিং শুরু করি’।
আরও পড়ুন:টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিরাটদের জন্য বিলিয়ন চিয়ার্স জার্সি
৩৯ বছরের সূর্য বালেশ্বরে বাড়ির সকলের সঙ্গে বড় হচ্ছিলেন। কিন্তু বাবার সঙ্গে ২০০২ সালে চলে এসেছিলেন হুগলি জেলার চুঁচুড়া শহরে। মুদিখানায় কাজ করা শুরু, আর বাড়ি বাড়ি খাটালের দুধ দিয়ে অর্থ রোজগার।আর সুযোগ পেলে চুঁচুড়া মাঠে গিয়ে খেলা দেখা। সেখানেই প্রথমবার কৌশিকের নানান রঙের পেন দিয়ে স্কোর লেখা দেখে। খেলতে না নেমে সূর্য এই মানুষটির প্রেমে পড়ে।কৌশিক ওকে পেন দিয়েছিলেন, তা দিয়ে প্রথমবার স্কোরিং করেছিলেন জিলা সংস্থার ম্যাচে।কৌশিক পাশেই ছিলেন।
LOADING…
██████████████]99%#T20WorldCup pic.twitter.com/KuYbl2O82m
— T20 World Cup (@T20WorldCup) October 17, 2021
২০১৫ সালে সিএবি’র স্কোরার পরীক্ষা পাশ করেন। সেই যাত্রা শুরু।২০১৮ সালে সিএবি’র সেরা স্কোরার সম্মান পান। আর এই তিন বছরে বিশ্বকাপের ম্যাচে স্কোরার! সূর্য বলছিলেন, ম্যাচের আগেরদিন সকালে কোভিড টেস্ট হচ্ছে। বিকালের মধ্যে রিপোর্ট চলে আসছে। মাঠে মুখে মাস্ক মাস্ট। গলায় ঝোলানো আইডেনন্টিটি কার্ডে লেখা আছে – অল এরিয়া। কিন্তু নিজের জায়গা ছেড়ে যেতে হলেই পিপিই কিট পড়ে যেতে হচ্ছে।প্লেয়ারদের কাছাকাছি যেতেই দেওয়া হচ্ছে না। আগেরবার কমেন্ট্রি বক্সে থাকা প্রাক্তন ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা হচ্ছিল। তাই সূর্য সানি গাভাসকরের সঙ্গে একটি ছবি তুলতে পেয়েছিলেন। সেই ছবিই আজ তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ ডিপিতে জায়গা করে নিয়েছে।
বালেশ্বর বাড়িতে দিদি-ভাগ্নী-ভাগ্নীজামাইকে বা বন্ধু–বান্ধবদের সঙ্গে ভিডিও কল করে কথা বলছে। টিভিতে ক্রিকেটারদের-আম্পায়ারদের দেখা স্কোরারদের দেখা যায়না। তাই, নিজেকে আর আশেপাশের ছবি দেখাতে এই ভিদিও কলই ভরসা। প্রথমবার যখন(২০২০)দুবাই এসেছিলেন-তখন সেই মুদিখানা দোকানের মালিক তাঁর হাতে টাকা গুঁজে দিয়েছিলেন। ফিরে সেই টাকা দিয়েছিলেন। মালিকের জন্য এনেছিলেন উপহার।
বিশ্বকাপে ইলেকট্রনিক্স স্কোর বোর্ডে স্কোরিং চালাচ্ছেন দুই বাঙ্গালী স্কোরার-সুর্য আর তনয়।তারমধ্যে সূর্যের উদয় বিষ্ময়কর।