দল বলেছিল এক কোটি সদস্য সংখ্যা করতে হবে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। শোনা যাচ্ছে প্রচুর জল মিশিয়েও, মানে ধরুন ওই মিসড কল, তারপর বিয়েবাড়িতে বরযাত্রী অভ্যাগতদের সদস্য করা, মলের সামনে দাঁড়িয়ে এই নম্বরে ফোন করলে ফ্রি কুপন হাজার টাকার ইত্যাদি ইত্যাদি বলার পরেও তা ৫০ লক্ষ পার হয়নি। ওদিকে সেই কবেই অবকি বার দোশো পার বলার পরে ৭৭ এসেছিল, সেও হারাধনের দশটি ছেলের মতো রোজ কমেই যাচ্ছে। লোকসভাতে ৩৫-৩৮ তো পাবই, লিখে নেন বলার পরে ১৮ থেকে কমে ১২। এবং আর কেউ জানুক না জানুক দিল্লির নেতৃত্ব জানে এই ব্যর্থতা আমাদের কাঁথির খোকাবাবুর। দিল্লি নেতাদের আরও চিন্তার বিষয় হল সংগঠন। এমএলএ, এমপি হবে, কিন্তু সংগঠন? যাঁরা সেই কবে প্রদীপ জ্বালিয়ে জনসংঘ করেছেন, যাঁরা সেই বিজেপির প্রথম দিন থেকে বিজেপিই ছিলেন, যাঁরা এই কাঁথির খোকাবাবুর হুমকি ধমকি শুনেছেন, তখন উনি তৃণমূলে, তখন পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েই বিজেপি খ্যাদাও অভিযান চালিয়েছিলেন। আপাতত মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার বাসনায় বিজেপিতে এবং বিজেপি দিল্লির নেতারা ভেবেছিলেন আগে তৃণমূল যাক, তারপরে ইসকো নিপট লেঙ্গে, তৃণমূল যাওয়া তো দূরস্থান, তারা আরও জাঁকিয়ে বসেছে। সর্বশেষ খবর হল কাঁথির সমবায় নির্বাচন, কেবল সিআরপিএফটা দিয়ে দিন, তারপর ১০-এ ১০, হল কী? শূন্য। কাজেই ওই সন্দেশখালিতে স্লোগান উঠেছে, শুভেন্দু একটি দুষ্টু লোক, তার মাথায় উকুন হোক আর সেটাই আমাদের বিষয় আজকে।
শুভেন্দুবাবুর মাথার চুল যথেষ্ট ঝাঁকড়া কিন্তু তাতে উকুন আছে কি না তা তো আমার জানা নেই, তবে যা রটে তার কিছু তো বটে, কারণ মমতা সন্দেশখালি থেকে ঘুরে আসার পরে সেখানে বাচ্চারা স্লোগান দিচ্ছে শুভেন্দু একটি দুষ্টু লোক, তার মাথায় উকুন হোক। তো শুনলাম এই স্লোগান নাকি ভাইরাল হচ্ছে, ছড়িয়ে যাচ্ছে জেলা থেকে জেলায়, এতদিন ওই চোর চোর চোরটা স্লোগানকে ছাপিয়ে যাচ্ছে এই মধুর স্লোগান। তো এই দুষ্টু লোকের উৎপত্তি কিন্তু সেই দিদিমণি। সন্দেশখালির সেই প্রাথমিক দিনগুলোর কথা মনে করুন, দারুণ মিল পাবেন আরজি করের আন্দোলনের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: Aajke | বছরটা শুভেন্দু সেলিমের ফাটল, মমতার কেমন কাটল?
আসলে মিডিয়া গাইডেড মুভমেন্ট-এর ক্যারেকটার এটাই। কোথাও কিচ্ছু নেই হঠাৎ ব্যারাজ অফ মিস ইনফর্মেশন, মিথ্যের সুনামি ছড়াতে থাকে, একটাকে মিথ্যে বলার আগেই আরেকটা মিথ্যে এসে মাথায় আঘাত করে। মানুষ ভাবতে শুরু করে আরে তাই নাকি, এ রাম ছি ছি, তাই নাকি, এবং সেই ভাবনার মধ্যেই আবার একটা মিথ্যে হাজির হয়, বেশ কিছু মানুষ সেই মিথ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনে নামেন, কিন্তু এসব আন্দোলনের গ্রাফ বেশিরভাগই আবার হঠাৎই ঝুপ করে নেমে যায়, খানিকটা হাউই বাজির মতো, হুউউউউস করে উড়ে, ঝুউউউউপ করে পড়ে যাওয়া। সন্দেশখালিতে সেই মিথ্যের বহর আকাশ ছুঁয়েছিল, ওই অতবড় এক বিধানসভা অঞ্চলের মহিলাদের নাকি ডাকা হত তৃণমূল কার্যালয়ে রাতের বেলায় পিঠে বানাতে, তারপর যা করার করত ওই শেখ শাহজাহানের দলবল। কিন্তু সে খবর সেই সময়ে মিডিয়ার কাছে ছিল না, ছিল না জমি কেড়ে নেওয়ার খবর, বা থাকলেও কোন মহার্ঘ বিনিময় মূল্য নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছিলেন তাঁরা, আমার জানা নেই। খবরের কাগজে এ নিয়ে এক কুঁচোও লেখা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ সে সব সামনে। শুভেন্দু যাচ্ছেন, সুকান্ত যাচ্ছেন, সেখানে এক নেতার জন্ম হল রেখা পাত্র, খানিকটা এই সেদিনের কিঞ্জল নন্দের মতো, তাঁর সঙ্গে কথা বললেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, যিনি মণিপুরের ধর্ষিতা মায়েদের সঙ্গে কথা বলার টাইম পাচ্ছেন না, সেই রেখা পাত্র লোকসভাতে প্রার্থী হলেন। সেই কবে বিধায়ক ছিলেন নিরাপদ সর্দার, তারপর মাটি ছেড়ে টালিগঞ্জে বসবাস করছিলেন, সিপিএম-এর সেই নেতা গিয়ে সেখানে গেলেন, নির্বাচনেও দাঁড়ালেন। তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতলেন, বিজেপি ৩০ শতাংশ, সিপিএম ৫ শতাংশ ভোট পেল, নটে গাছটি মুড়োল। এরপরে বচ্ছরের শেষে সেখানে হাজির হলেন মুখ্যমন্ত্রী, সাফ জানিয়ে দিলেন, হ্যাঁ দুষ্টু লোক ছিল, তারা দুষ্টুমি করেছে, তাদের কথা শুনবেন না, কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা করলেন আর তিনি যাওয়ার আগেই একদা বিজেপি নেতা, ওই নব্য বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্রের মেন্টর, গাইড, সুজয় মাস্টার তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সামনে বসিরহাটের ভোট, রেখা পাত্র কি দাঁড়াবেন? তাঁকে নাকি দেখা যাচ্ছে না। তো এমন এক সময়ে সেখানে শুভেন্দু অধিকারী গিয়ে হাজির, তিনি বললেন এখানে আসব, গীতা নিয়ে যাব ঘরে ঘরে। মানুষের চাকরি নেই, মূল্যবৃদ্ধির ঘায়ে মানুষ পাগল, শিক্ষা স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের মাথায় ভাঁজ, উনি যাবেন সেসব নিয়ে নয়, সে সবের ব্যবস্থা করতেও নয়, উনি যাবেন সেখানে গীতা বিলোতে। সম্ভবত এইসব শোনার পরেই সন্দেশখালিতে স্লোগান উঠল শুভেন্দু একটি দুষ্টু লোক, তার মাথায় উকুন হোক। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে মানুষ চাকরি চায়, মানুষ স্বাস্থ্য চায়, শিক্ষা চায়, মানুষ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত, সেই মানুষদের কাছে গীতা নিয়ে গিয়ে শুভেন্দু আসলে কী করতে চাইছেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
মহাকবি কালিদাস তাঁর কুমারসম্ভব গ্রন্থে বলেছিলেন, আর বিবেকানন্দ এই কথাটি প্রায়ই বলতেন, শরীরম আদ্যম, খলু ধর্ম সাধনম। শরীর আগে, তাকে বাদ দিয়ে ধর্ম সাধনা হয় না। আরএসএস-বিজেপি, মোদি-শাহ, শুভেন্দুরা সেই সত্য জানেন না, তাই দেশে যত বেকারত্ব বাড়ছে, শিক্ষা স্বাস্থ্য হয়ে উঠছে বড়লোকেদের ব্যাপার। আমজনতা মূল্যবৃদ্ধির চাপে যত নুয়ে পড়ছে, তত তাঁরা এই ধর্মের জিগির তুলে মানুষকে ভাগ করতে চাইছেন, মন্দির মসজিদের লড়াইয়ে মানুষকে ভুলিয়ে রাখতে চাইছেন। সম্ভবত এই সত্যটা সন্দেশখালির বাচ্চারাও জেনে ফেলেছে, তাই তারা রাস্তায় খেলতে খেলতেই স্লোগান দিচ্ছে শুভেন্দু একটি দুষ্টু লোক, তার মাথায় উকুন হোক, আর কী আশ্চর্য তা ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বাংলায়।
The post Aajke | শুভেন্দু একটি দুষ্টু লোক, তার মাথায় উকুন হোক first appeared on KolkataTV.
The post Aajke | শুভেন্দু একটি দুষ্টু লোক, তার মাথায় উকুন হোক appeared first on KolkataTV.