কলকাতা: টানা এক সপ্তাহ প্রায় বাঘিনী জিনাত নাকানি-চোবানি খাওয়ায় বন দফতরকে। কিন্তু গতকাল অর্থাৎ রবিবার বিকেলে অবশেষে বন দফতরের জালে ধরা পরে বাঘিনী। বন দফতরের পাতা ফাঁদে পা দিল সে। পরপর ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে তাকে কাবু করা হয়। তারপরেই বাঘিনী জিনাতকে গতকাল অর্থাৎ রবিবার রাতে নিয়ে আসা হয় আলিপুর চিড়িয়াখানায়, তার সেবা শুশ্রূষার জন্য।
রবিবার রাতেই বাঘিনীকে নিয়ে আসা হয় আলিপুর চিড়িয়াখানায়। জানা যাচ্ছে, পরবর্তী ২ দিন তাকে সেখানেই রাখা হবে। সেখানে চিকিৎসা হবে তার। আর তারপর তাকে আবারও ছেড়ে দেওয়া হবে জঙ্গলে, বলে জানা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই, জিনাতের চিকিৎসার জন্য দেশের বিখ্যাত পশু চিকিৎসকদের আনা হয়েছে, পাশাপাশি উপস্থিত রয়েছে ওড়িশা বনদফতরের কর্মীরাও। জিনাত যেন সঠিক খাবার এবং বিশ্রাম পায় সেই ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ওড়িশা থেকে ঝাড়গ্রাম ঘুরে বাঘিনী এসে পৌছয় বাংলার পুরুলিয়ায়। সেখানে দিন পাঁচেক ঘুরে বেড়ানোর পর অবস্থান বদলে সে আসে বাঁকুড়ায়। মানবাজার-সহ বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায় বাঘিনী। বিভিন্ন টোপ থেকে শুরু করে ফাদ পাতা হয় সবই করা হয় বন দফতরের পক্ষ থেকে বাঘিনীকে বাগে পাওয়ার জন্য। কিন্তু কোনভাবেই তাকে বাগে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। শনিবার থেকে বাঘিনীকে বাগে আনতে বন দফতরের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয় বিশেষ পদক্ষেপ। বার বার তাকে কাবু করতে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। কিন্তু কিছুতেই বাগে আনা যায়নি তাকে। বন দফতরের পক্ষ থেকে গতকাল সারা রাত বাঘিনী জিন্নাতকে খাঁচাবন্দি করার চেষ্টা করেন বনকর্মীরা। অবশেষে, আজ অর্থাৎ রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ বাঘিনীকে লক্ষ্য করে ফের ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়েন বনকর্মীরা। আর সেই গুলি অবশেষে বাঘিনীর গায়ে লাগে। আর তাতেই কাবু হয় বাঘিনী। পরে তাকে খাঁচাবন্দি করা হয়।
আরও পড়ুন: শেষ হল ‘বাঘবন্দি’ খেলা
এতদিন বাঘিনী এই জঙ্গল সেই জঙ্গল ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু তার কোথায় সঠিক অবস্থান তা কোনভাবেই জানতে পারছিল না বন দফতর। আজ অর্থাৎ রবিবার বন দফতর অবশেষে বাঘের অবস্থান জানতে পারে। পুরুলিয়ার জঙ্গল থেকে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থানার গোঁসাইডিহি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল জিন্নাত। তারপরেই ছড়া হয় ঘুমপাড়ানি গুলি। সারা জঙ্গল জাল দিয়ে ঘিরেও রাখা হয়। আর অবশেষে সমস্ত প্রয়াসের পর বাঘিনীকে নিজেদের কাবু করতে সক্ষম হয় বন দফতর।
উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে সদ্য যুবতী জিন্নতকে নিয়ে আসা হয় ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে। কয়েকদিন সেখানে ঘেরাটোপে রেখে পর্যবেক্ষণের পরে রেডিয়ো কলার পরিয়ে তাকে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ছাড়া হয়। কিন্তু সেখান থেকেই ঝাড়খণ্ডের পথে হাঁটতে আরম্ভ করে সে। কয়েকদিন সেখানে ঘোড়ার পর সে বঙ্গে ঢুকে পরে। আর আজ, রবিবার অবশেষে প্রায় এক সপ্তাহ পর বন দফতরকে নাকানি চুবানি খাইয়ে বাঘিনীকে জালে আনল বন দফতর।
দেখুন অন্য খবর