ওপার বাংলার, মানে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার দেখে শুভেন্দু অধিকারী চোখের জল ফেলছেন। বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে ওই হনুমান সেনারা ভাঙচুর করছে। আগুন লাগাতে শুভেন্দু চলে গেলেন সীমান্তে। তিনি প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের। সেই প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেছেন, ওপারে আছেন মহম্মদ ইউনুস, যিনি হিন্দু মন্দির ভাঙছেন, আর এধারে আছেন বেগম মমতা, যিনি দুর্গামূর্তি ভাঙেন। বিজেপি হওয়ার প্রথম শর্ত হল অনর্গল মিথ্যে বলতে পারা, মিথ্যে বলতে গিয়ে যদি জিভ আটকে যায়, তাহলেই বিজেপি থেকে বাদ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গামূর্তি ভাঙছেন? এরকম একটা অভিযোগ আগে কখনও কারও মুখে শুনেছেন। যখন রাজ্যের তথাকথিত বাম প্রগতিশীল আন্দোলনজীবীরা দুর্গাপুজো বয়কটের ডাক দিচ্ছে, তখনও একটা কটু কথা না বলেই তিনি পুজো উদ্বোধন করছেন, পুজো কার্নিভালের ব্যবস্থা করছেন, আমরা সবাই দেখেছি। কিন্তু ওই যে, বিজেপিতে থাকার প্রথম আর প্রধান শর্ত হল মিথ্যে বলতে হবে, সেই শর্ত মেনেই তিনি এই কথাগুলো উচ্চারণ করলেন। এমনিতে তিনি যা বলেন তাতেই তাঁর অনুগামীরা হাততালি দেয়, কিন্তু এই কথা বলার পরে সবাই একটু সময়ের জন্য হলেও থমকে গিয়েছিলেন। আসলে ইস্যু খুঁজে পাচ্ছেন না শুভেন্দু অধিকারী, তিনি বিলক্ষণ জানেন তাঁর সিদ্ধান্তের জন্যই বিজেপি আরজি কর ইস্যুতে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে চূড়ান্ত ব্যর্থ। সেদিন ওই বাংলাদেশ মডেলে ছাত্র সমাজের নামে আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে ল্যাজেগোবরে হয়েছেন আর পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের ল্যাজ ধরারও সুযোগ পাননি। কাজেই নতুন ইস্যু হল বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু মানুষজনের উপরে অত্যাচার, আপাতত তিনি ক’দিন এই ইস্যু নিয়ে বাজার গরম করার চেষ্টা করবেন, এবং তা করার জন্য অসংখ্য মিথ্যে, অনর্গল মিথ্যে বলে যাবেন। সেটাই বিষয় আজকে, শুভেন্দু অধিকারী হয় বোকা, নয় মূর্খ।
বাংলাদেশ এক সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন দেশ। কিন্তু তা বলে পৃথিবীর কোনও স্বাধীন দেশই তাদের দেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করতে পারে না। কোনও মতেই না। আর সেরকমটা হলে প্রতিটা দেশ, তাদের নাগরিকরা সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতেই পারে। কিন্তু আমাদের দেশের কাদের কথা বলার অধিকার আছে? কোন সরকারের? রাজ্যের হাতে বিদেশ দফতর নেই, অর্থ দফতর নেই, প্রতিরক্ষা দফতরও নেই। কাজেই এ বিষয়ে অফিসিয়াল কথা বলতে পারে একমাত্র ইউনিয়ন গভর্নমেন্ট, মোদি সরকার।
আরও পড়ুন: Aajke | বিজেপি এই রাজ্যে অনাথ, ছন্নছাড়া, দিশাহীন?
কিন্তু কোন মুখে বলবেন? নিজেদের দেশে আকছার সংখ্যালঘু মানুষজনকে পিটিয়ে মারার ভূরি ভূরি অভিযোগ আছে। অভিযোগ আছে সংখ্যালঘু মানুষদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার, অভিযোগ আছে সংখ্যালঘু মানুষজনকে প্রায় বিনা বিচারে জেলে পুরে রাখার, অভিযোগ আছে সংখ্যালঘু মানুষজনকে আতঙ্কিত করে রাখার, বুলডোজার চলেগা, হুমকি দিচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, জানেন না দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংখ্যালঘু কুকি আর হিন্দু মেইতেইদের মধ্যে জাতিদাঙ্গা লাগিয়ে চুপচাপ বসে বসে যে সরকার দেখেই যাচ্ছে, সেই সরকার কীভাবে সংখ্যালঘু অধিকারের কথা বলবে। যেই অকাট মূর্খ জনপ্রতিনিধি দেশের নির্বাচক মণ্ডলীর ৩০ শতাংশের ভোট চাই না, আমরা সংখ্যাগুরুর ভোটে জিতব, এরকম নোংরা কথা বলেন, তিনি সংখ্যালঘুর উপর অত্যাচারের দুঃখে কুমির কান্না কাঁদছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী, দেশের সরকার জানিয়েছেন তাঁরা খুব আশঙ্কায় আছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের খবরে তাঁরা চিন্তিত, ব্যথিত। এই মহাপুরুষেরা চীনে উইঘুর মুসলমানদের উপর অত্যাচার নিয়ে চীন সরকারকে তাঁদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন? জানাননি। কেন? কারণ তাঁরা সংখ্যালঘু কিন্তু মুসলমান। তো আমাদের কাঁথির খোকাবাবুর যদি এত দুঃখ, তাঁর বুক ফেটে হু হু করে চোখের জল গড়াচ্ছে, তো তিনি দিল্লি যান, নরেন্দ্র মোদিকে বলুন, যা করার তো তিনিই করবেন। এবং এটাও তো জিজ্ঞেস করতে হবে যে কতদিন তিনি ওই বেগম হাসিনাকে তাঁর আশ্রয়ে রেখে দেবেন। এ নিয়েও তো বাংলাদেশের সংখ্যাগুরুদের ক্ষোভ আছে। আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নিয়ে চিন্তিত শুভেন্দু অধিকারী ১) প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিকারের দাবি জানাচ্ছেন না কেন? ২) দেশের মধ্যে সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর অত্যাচারের সময় তিনি চুপ করে থাকেন কেন? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
আসলে শুভেন্দু অধিকারী হয় অত্যন্ত বোকা, নয় অত্যন্ত মূর্খ আর না হলে এক নোংরা রাজনীতি করতে নেমেছেন। পাশের এক সার্বভৌম দেশের ভিতরে যা ঘটছে তা নিয়ে কিছু করার হলে, কিছু বলার হলে তা তো মোদি সরকারকেই করতে বা বলতে হবে, তিনি কলকাতায় ভারতীয় দূতাবাসে বিক্ষোভ দেখিয়ে বা বেনাপোল পেট্রাপোলে সমাবেশ করে কী করতে চাইছেন? আসলে সেই ভোটের রাজনীতি, হিন্দু ভোট কনসলিডেশনের রাজনীতি, এটাই ওনার কাছে একমাত্র পথ, এক নোংরা সংখ্যাগুরুর সাম্প্রদায়িকতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলার মসনদে বসার চেষ্টা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন যা কোনওদিন পূরণ হবে না।
The post Aajke | শুভেন্দু অধিকারী হয় বোকা, নয় মূর্খ first appeared on KolkataTV.
The post Aajke | শুভেন্দু অধিকারী হয় বোকা, নয় মূর্খ appeared first on KolkataTV.