এবারের আই এস এল-এর প্রথম ম্যাচে জামশেদপুর এফ সি-র সঙ্গে প্রথমে গোল করে শেষ পর্যন্ত ১-১ করে এসসি ইস্ট বেঙ্গল যে আশা জাগিয়েছিল, দ্বিতীয় ম্যাচে এটিকে মোহনবাগানের কাছে ল্যাজে গোবরে হয়ে তিন গোল খাওয়ার পর সেই আশার শুধু সলিল সমাধিই হয়নি, বাকি টুর্নামেন্টে লাল হলুদের ভবিষ্যৎ নিয়েই বিরাট প্রশ্নচিহ্ণ উঠে গেছে। ডার্বিতে হারজিৎ তো আছেই। গত বছরেও তো ইস্ট বেঙ্গল দুটো ডার্বিতেই হেরেছিল। কিন্তু এ রকম কুৎসিত ফুটবল খেলেনি। তেইশ মিনিটের মধ্যে তিন গোল খাওয়ার পর ইস্ট বেঙ্গল এমন খেই হারিয়ে ফেলে যে আরও বেশি গোলে হারতে পারত। তাদের নতুন গোলকিপার শুভম সেন অনেকগুলো গোল বাঁচিয়েছেন। কিন্তু তাতে হয়তো লজ্জার বহরটা একটু কমেছে, ইস্ট বেঙ্গলের সার্বিক খেলা নিয়ে লজ্জা কিন্তু কমেনি। যে ছয়জন বিদেশিকে ইস্ট বেঙ্গল নিয়ে এসেছে তাদের মান এতই খারাপ যে কে কার চেয়ে বেশি খারাপ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। সবচেয়ে খারাপ ড্যানিয়েল চিমা। তাঁকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায় ততই মঙ্গল। বাকিরাও যে ভাল তা বলা যাবে না। সবে দুটো ম্যাচ খেলেছে লাল হলুদ। জানুয়ারির আগে ফুটবলার বদলানো যাবে না। এই বিদেশি নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল সামনের ম্যাচগুলোতে কতটা সামাল দিতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারই ইস্ট বেঙ্গল মুখোমুখি হচ্ছে ওড়িশা এফ সি-র। গত বছর এগারো টিমের লিগে ওড়িশা ছিল সবার নীচে। এগারো নম্বরে। এবার তারা দুর্দান্ত শুরু করেছে। প্রথম ম্যাচেই ৩-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফ সি-কে। জোড়া গোল করেছেন জ্যাভি হার্নান্ডেজ। শুধু তাই নয়, লাল হলুদ সমর্থকদের নিশ্চয়ই মাথায় আছে গত বছর এই ওড়িশাই তাদের দলকে ৬-৫ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল। একে ডার্বিতে তিন গোলের লজ্জা, তার উপর ওড়িশার সাম্প্রতিক ফর্ম। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার আবার কী অমঙ্গল ডেকে আনে তা নিয়েই আশঙ্কা লাল হলুদ শিবিরে। ভাস্কোর তিলক ময়দানে ইস্ট বেঙ্গলের সামনে কিন্তু কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে।
গত শনিবার মোহনবাগানের কাছে তিন নম্বর গোলটা খাওয়ার পরেই মাঠ ছেড়েছিলেন লাল হলুদের অধিনায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য। তিন নম্বর গোলটা খুব বাজে খেয়েছিলেন অরিন্দম। বলটা গ্রিপ করতে গিয়ে চোট পান গোড়ালিতে। তাঁর স্ক্যান করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তবে আপাতত তাঁকে বেশ কয়েকটা ম্যাচ বিশ্রাম দেওয়া হবে। তাঁর বদলে যে শুভম সেন খেলবেন এটা জানিয়ে দিয়েছেন কোচ ম্যানুয়েল দিয়াজ। বাকি দশটা জায়গায় কারা খেলবেন সে সম্পর্কে তিনি কোনও ইঙ্গিত দেননি। সাংবাদিক সম্মেলনে শুধু বলেছেন, “আমরা জেতবার জন্য মাঠে নামব।” তবে কারা খেলবেন সে সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট ধারনা না দিলেও তাঁর কথাবার্তা থেকে পরিষ্কার সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে আদিল খান শুরু করবেন।
ছয় বিদেশির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হচ্ছেন ড্যানিয়েল চিমা। আসলে চিমা নামটার প্রতি লাল হলুদ সমর্থকদের এতটাই আবেগ আছে যে নতুন চিমার কাছ থেকে তাদের প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বি। কিন্তু গত দুটো ম্যাচে সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি। এস সি ইস্ট বেঙ্গল কতৃপক্ষও তাঁর বদলে ব্রাইট এনোবাখরেকে আনার প্রস্তুতি নিয়েছে। তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে সেই কথাবার্তা বেশ ইতিবাচক। ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রি সিটি-তে এখন খেলছেন ব্রাইট। জানুয়ারি উইন্ডোতে তাঁকে পাওয়া যাবে। তত দিন পছন্দ হোক কিংবা না হোক ড্যানিয়েল চিমাকে নিয়েই কাজ চালাতে হবে ম্যানুয়েল দিয়াজকে।
লাল হলুদের অপর অ্যাটাকার আন্তোনিও পেরোসেভিচকে ডার্বিতে বল ধরতে দেয়নি মোহনবাগান ডিফেন্স। তবে ক্রোয়াশিয়ার আন্তোনিও খুব খারাপ প্লেয়ার নন। একটু সময় পেলে দাঁড়িয়ে যাবেন। দুই ডিফেন্ডার টমিস্লাভ মার্সেলা এবং ফ্রাঞ্জো পার্সে-র উপর ভরসা করা যাবে কি না তা ওড়িশার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়েই বোঝা যাবে। কিন্তু কী করবেন ভারতীয় ফুটবলাররা? তাদের সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভাল। গোলকিপার শুভম ঠিক আছে। আদিল খান ঠিক আছে। কিন্তু বাকিরা? এই বাকিদের ভাল খেলার উপরেই নির্ভর করছে ওড়িশার বিরুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গলের ভাগ্য। খোঁচা খাওয়া ইস্ট বেঙ্গল নাকি ভয়ঙ্কর। সেটা আরেক বার প্রমাণ করার সময় এসেছে। দেখা যাক, ম্যানুয়েল দিয়াজের ছেলেরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন কি না।