দেবাশিস দাশগুপ্ত
রাজ্য বিধানসভার উপনর্বাচনে ছয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছে তৃণমূল। বিরোধী সব দলেরই প্রায় জামানত জব্দ হয়েছে। মহারাষ্ট্রে মহা বিকাশ আঘাড়ি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কংগ্রেস, শরদ পাওয়ারের এনসিপি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার জোট আঘাড়ি ৫০ আসনও ছুঁতে পারেনি। ৪৮- এ থেমে গিয়েছে তাদের বিজয়রথ। ঝাড়খণ্ডে জেএমএমের নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এলেও কংগ্রেসের ফল ভালো হয়নি। কয়েক মাস আগে প্রত্যাশা জাগিয়েও হরিয়ানায় জিততে পারেনি কংগ্রেস। জম্মু কাশ্মীরেও তাদের ফল আশানুরূপ হয়নি। যদিও ওয়েনাডে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী চার লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতেছেন। এটাই সান্ত্বনা কংগ্রেসের কাছে। তবে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি ইন্ডিয়া জোটের অনুকূলে নয়।
আরও পড়ুনঃ ড্র দিয়ে শুরু ম্যান ইউয়ের অ্যামোরিম যুগ, শীর্ষে লিভারপুলই
এই আবহে তৃণমূল মমতা ব্যানার্জিকেই ইন্ডিয়া জোটের মুখ হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য শরিক দলগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছে। দলের প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি রবিবার সংবাদমাধ্যমে বলেন, অহং ছেড়ে এখন মমতাকেই নেত্রী বলে মেনে নেওয়া উচিত। সারা ভারতে কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধী দলগুলি পিছিয়ে পড়েছে। মমতা ছাড়া আর কোনও বিরোধী মুখ নেই। সকলেই ব্যর্থ। তাই সকলকে বলব, দ্বিধা সরিয়ে মমতাকেই ইন্ডিয়া জোটের নেত্রী হিসেবে মেনে নিন।
সোমবার থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তার ঠিক আগেই তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ এবং মমতার ঘনিষ্ঠ কল্যাণ তাঁকেই ইন্ডিয়া জোটের নেত্রী হিসেবে মেনে নেওয়ার কথা বলে নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন। দেশের উপনির্বাচন এবং দুই রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর তৃণমূল নেতৃত্বও মনে করছেন, ইন্ডিয়ায় এখন প্রধান শক্তিশালী দল তৃণমূল।
গত লোকসভা ভোটের আগে থেকেই কংগ্রেস সম্পর্কে তৃণমূলের একটা এলার্জি কাজ করছিল। ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেসের দাদাগিরি তৃণমূল মেনে নিতে চায়নি। ডেরেক ও ব্রায়েন থেকে শুরু করে সুদীপ ব্যানার্জির মতো অনেক নেতাই খোলাখুলি সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূলের গুরুত্ব না পাওয়া নিয়ে খোদ দলনেত্রীও তাঁর অসন্তোষ চাপা রাখেননি। কংগ্রেস যে আঞ্চলিক দলগুলিকে পাত্তা দিচ্ছে না বা দাবিয়ে রাখতে চাইছে, সে কথা তিনি বারবার বলেছেন। ভোটের আগে তৃণমূল দেশের অন্য আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে আলাদা করে যোগাযোগ রাখছিল। গত জুলাই মাসে মুম্বইতে মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের ফাঁকে মমতা আলাদা করে উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। অভিষেক ব্যানার্জিও দিল্লিতে আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে মুম্বই চলে গিয়েছিলেন উদ্ধব, শরদ পাওয়ারের সঙ্গে কথা বলতে। এইসব ঘটনা যে কংগ্রেসকে সবক শেখানোরই বার্তা ছিল, তা স্পষ্ট।
এখন কংগ্রেস খানিকটা দুর্বল। এই আবহে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণের মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সাম্প্রতিক ভোটের আবহে সংসদের অধিবেশনে বিরোধী দলগুলির সমীকরণ কোন পথে চলে, তার দিকে নানা মহলের নজর থাকবে। অতীতে বিরোধী দলগুলির মধ্যে সমন্বয় রেখেছে কংগ্রেস। এবার কি কংগ্রেস কিছুটা চাপে থাকবে, প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক শিবিরে।
দেখুন অন্য খবর