পূর্ব বর্ধমান: দু’সপ্তাহ আগেই দাঁইহাট পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ রায়ের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। এবার রীতিমতো পথসভা করে পুর চেয়ারম্যান প্রদীপ রায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তাঁরা। এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন দলের নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য দাঁইহাট পুরসভার মোট ১৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। সবকটিই শাসকদলের দখলে। বিগত একবছর ধরেই পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ রায়ের বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের একাংশ ক্ষোভপ্রকাশ করে আসছিলেন। সম্প্রতি ভাইস চেয়ারম্যান অজিত বন্দোপাধ্যায় সহ ১১ কাউন্সিলর প্রদীপ রায়ের পদত্যাগের দাবিতে অভিযোগ জানিয়ে আসেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সহ দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। বিগত প্রায় একবছর ধরেই পুরসভার বোর্ড মিটিংগুলিতেও অংশ নেওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন কাউন্সিলরদের একাংশ।সোমবার বিকেলে দাঁইহাটে দেখা গেল শাসকদলের মধ্যেই প্রকাশ্য বিদ্রোহ।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে বাড়বে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, কলকাতায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা
এদিন ২১ জুলাইয়ের সমর্থনে দাঁইহাটে মিছিল করা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। মূলত ভাইস চেয়ারম্যান সহ ১১ কাউন্সিলর এই মিছিলে ছিলেন। তবে এই মিছিলে দেখা যায়নি দাঁইহাট শহর তৃণমূল সভাপতি রাধানাথ ভট্টাচার্য এবং পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ রায়কে। দাঁইহাটের স্টেশনবাজার তৃণমূল কার্যালয় থেকে এই মিছিল শুরু করে পুরমার্কেটের সামনে পথসভা করে শেষ হয়। এই পথসভায় ভাইস চেয়ারম্যান অজিত বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্যের আগাগোড়াই ছিল দলীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
অজিত বন্দোপাধ্যায় বলেন, আমরা ১১ জন কাউন্সিলর উপস্থিত হয়েছি। বর্তমান চেয়ারম্যান সবাইকে নিয়ে চলতে পারছেন না। চেয়ারম্যানের কাছে এঁরা কেউ সম্মান পান না। এই মহিলা কাউন্সিলররা সম্মান পাচ্ছেন না বলে তাঁরা চেয়ারম্যানের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। দাঁইহাটের পরিষেবা এখন একদম বন্ধ। রাস্তাঘাট, নর্দমা, ডাষ্টবিন পরিষ্কার করা হয় না। দুর্গন্ধ ছড়ায়। জল দিয়ে পোঁকা বের হচ্ছে। সেদিকে লক্ষ্য রাখেন না চেয়ারম্যান। ওনার গদিটা কীভাবে থাকবে তাই নিয়ে উনি ব্যস্ত। তাই এই মিছিল থেকেই আমি জনগনের হয়ে ধিক্কার জানাই। আপনি অবিলম্বে বেড়িয়ে যান। তাতে এদের সম্মান থাকবে। কিন্তু উনি তা করবেন না। নিজের গদি আকড়ে পড়ে থাকবেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদলের বিপুল জয়জয়কার হলেও দাঁইহাট পুরসভায় প্রায় আড়াই হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। এই প্রসঙ্গ তুলে অজিত বন্দোপাধ্যায় বলেন, বিগত পুরসভার ভোটে দাঁইহাটে লিড হয়েছিল। লোকভা ভোটে দাঁইহাটের ৯টি ওয়ার্ড বিজেপি দখল করে নিল। যাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে তাঁরা কেউ বিজেপি নন। এঁরা বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। এঁরা চেয়ারম্যানের কাজকর্মের উপর বিতশ্রদ্ধ হয়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। আবার এরা ফিরে আসবে যখন চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়ে যাবে। বক্তব্যের শেষে ভাইস চেয়ারম্যান দলেরই স্লোগানের অনুকরণে স্লোগান তোলেন, জনগণের গর্জন – চেয়ারম্যানের অপশাসনের অবসান।
এ বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, দলের মধ্যে ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকলেও দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানানো দরকার। এভাবে রাস্তায় এসে ঝগড়া করা দলবিরোধী কাজ। ওরা ভুল করছে। ২১ জুলাইয়ের সভা জেলার সব জায়গাতেই হচ্ছে। দলের ওই মিছিল বা সভার বিরোধিতা যদিও আমরা করছি না। তবে দাঁইহাটের ওই সভা দলের নিয়ম মেনে হয়নি।
এ বিষয়ে দাঁইহাট পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ রায়ের দাবি, আমি চেয়ারম্যান থাকব নাকি সরে যাব, সেটা দলই ঠিক করবে। ২১ জুলাইয়ের সমর্থনে প্রচার-মিছিলের বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।