কেটলবেল(Kettlebell)l একধরনের ফিটনেস প্রোগ্রাম। বহু পুরাতন এক কসরৎ। মেদ ঝড়ানোর জন্য আমেরিকায় দারুণ চল। আজ তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বাদ নেই ভারত, পিছিয়ে নেই শহর কলকাতা। সেই কলকাতার ‘মেয়ে-বউ-মা’ শিবানী আগরওয়াল দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে জোড়া সোনার পদক জিতে ফিরলেন।
বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সামনে নিজের কীর্তির কথা বলার সময় চোখে-মুখে ছিল বিষ্ময়ের ঘোর। সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে গুজরাটি পরিবারের শিবানী বাড়তি মেদ ঝড়াতে গিয়েছিলেন ট্রেনার অর্ণব সরকারের কাছে। পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউটেন্ট সময় বের করে অনুশীলন সারতেন। তাঁর একাগ্রতা-মনের জোড় আর ফিটনেস ফ্যানাটিক হয়ে ওঠা তাঁর সামনে এক ভিন্ন জগতের দরজা খুলে দেয়।
আরও পড়ুন:Badminton: চোটের কারণে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নেই সাইনা নেহওয়াল
শরীর সচেতনতা টপকে তিনি নিজেকে নানান প্রতিযোগিতার জন্য তৈরী করতে শুরু করেন স্বামী ময়াঙ্ক আগরওয়ালের উৎসাহে। শুরুর দিনগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে গুটিয়ে যেতে দেখা যায় আজও।‘ আমার দুই বাড়িই রক্ষণশীল পরিবার। ছোটো স্পোর্টস প্যান্ট পরে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ির সামনে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারতাম না। স্বামীর সাহস আর ভরসা, আমাকে লড়ে যাওয়ার ইন্ধন জোগায়। আর কোচের গাইডেন্স-অসম্ভবকে সম্ভব করে দিয়েছে’।
পাশে বসা ৬ বছরের ছোট্ট ছেলে। সে টিভিতে ক্রিকেট দেখে,কার্টুন দেখে, ডব্লু ডব্লু এফ কুস্তি দেখে। কিন্তু মা গোল বলটা (১৬ কেজি ওজনের) তো নাড়াতেই পারে না। ইন্টারন্যাশানাল কেটলবেল ম্যারাথন ফেডারেশনের (IKMF)বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবার বসেছিল ২৬-২৮ নভেম্বর ফ্রান্সে। ১৬ টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।লড়েছেন-৩৬৯ জন। ভারত থেকে ৪ জন অংশ নেন। সেই দলের একমাত্র মহিলা প্রতিনিধি ছিলেন বাংলার শিবানী। বাকি ৩ জন পুরুষ অ্যাথলিট ছিলেন দিল্লির। শিবানী সেই অর্থে অ্যাথলিট নন। সঙ্গে ট্রেনার নিয়ে ঘোরেনও না। প্রথম ভারতীয় মহিলা হয়ে এই সম্মান নিয়ে ফিরেছেন। যদিও এর আগে অন্য সংস্থার বিশ্ব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দু’বার সোনার পদক জেতেন। ৩৯ বছরের শিবানী এমন সাফল্য পেয়ে আরও একবার প্রমাণ নারী মোটেই অবলা নয়।
https://www.ikmf-world.com/disciplines/ikmf-kettlebell-marathon/
কথায় বারবার ফিরে আসছিল, তাঁর কোচ অর্ণব সরকার, স্বামী মৈনাক আগরওয়াল ও তাঁর বাবা অনিল শাহের কথা। কোনোদিন তিনি দেশের হয়ে সোনা জিতবেন বা এমন খেলা নিয়ে মাতবেন তা কষ্মিনকালেই ভাবেনই নি। ভাবনাটার জন্ম ২০১৫ সালে-সন্তান জন্মের পর।
১৯৯০ সাল থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা শুরু হয় রাশিয়ায়। শিবানীর কোচ অর্ণব সরকার তাঁকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। এরপর থেকেই তিনি কেটেলবেলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতা অংশ নিতে থাকেন। ২০১৮,২০১৯ এ যথাক্রমে উজবেকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ায় সোনা যেতেন শিবানী। মাঝে কোভিড পরিস্থিতিতে এইসব টুর্নামেন্ট বন্ধ থাকলেও এবছর ২৬ থেকে ২৮ শে নভেম্বর ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে ২টি গোল্ড পদক জিতে নেন। আজ দেশে ফিরেই-তা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে সমর্পন করেন ।
শিবানীর এই জয়ে স্বভাবতই খুশি শিবানীর পরিবার।তাদের আশা আগামী দিনে এই খেলা অলিম্পিক্সে জায়গা করে নেবে।শিবানী দেশকে আরও সাফল্য এনি দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
নিজস্ব চিত্র।