সেই সময় নিজে কথা বলেছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে। তখন তিনি ছিলেন কোচ নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান। চেয়েছিলেন, শাস্ত্রী নন-জাতীয় সিনিয়র ক্রিকেট দলের কোচ থাকুন অনিল কুম্বলে। তখন বিসিসিআই চালাতেন প্রয়াত ডালমিয়া, অভিজ্ঞ শ্রীনিবাসন আর অনুরাগ ঠাকুরের মতন ক্রীড়া প্রশাসকরা। তাই অধিনায়কের পছন্দ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এখন সেই তিনি বিসিসিআই সভাপতি। সচিব দেশের সবচেয়ে শক্তিমান রাজনৈতিক নেতা অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ। এবার সৌরভের সামনে আবার সুযোগ অনিল কুম্বলেকে সসম্মানে জাতীয় দলের কোচ করে আনার। রবি শাস্ত্রীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর।
রদ বদল যে হতে যাচ্ছে, তা অধিনায়ক স্বয়ং বুঝে গেছেন। ইংল্যান্ড সফরে শেষ টেস্ট বাতিল হতেই কোহলির কাছে বার্তা পৌঁছে যায়। এবার ‘রবি ভাই’কে যেতে হবে। তাহলে নিজেও সরে যাও। নাহ্, দারুণ এই ক্রিকেটারের আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে দেশকে। ব্যাটসম্যান হয়ে তা পেলে দলের ভালো। দু’বছর হল, কোনও ফরম্যাটে কোহলির সেঞ্চুরি নেই। ‘রান মেশিন’ ট্যাগ খসে পড়তে চলেছে। রবি শাস্ত্রী না থাকলে, তাঁর ‘নেতা গিরি’ মাঠের বাইরে খাটবেই না। অতএব? টি – টোয়েন্টিতে আর নেতা হতে চান না জানিয়ে রাখলেন কোহলি। নেতা কোহলির শেষ সুযোগ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দল সফল হলে ‘বিরাট’জয়।
?? ❤️ pic.twitter.com/Ds7okjhj9J
— Virat Kohli (@imVkohli) September 16, 2021
কোহলি দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে যে মেল পাঠিয়েছেন তাতে তিনি লিখেছেন,’রবি ভাই,রোহিত,বোর্ড সচিব, বোর্ড সভাপতি, নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি ওয়ান ডে ইন্টারন্যাশনাল আর টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিতে চান। সৌরভ-জয় শাহরা কী চান? বিরাট জানেন, বোর্ড টেস্ট আর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আলাদা নেতার কথা ভাবতে শুরু করেছে। এখন বোর্ডের শীর্ষ স্থানে যিনি বসে তিনি দেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক। তিনি জানেন, কার থেকে কী, দলের জন্য বের করে আনা যায়। তাই ধরে নেওয়া ভালো ৫০ কিংবা ২০ ওভারের ফরম্যাটে নয়া নেতা পেতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট। আর ব্যাটসম্যান বিরাটে ভরসা রাখতে চান সকলে।
একটা সময় কুম্বলের সঙ্গে বনিবনা হয়নি কোহলির। বলা ভালো, কোহলির জন্যই হেড কোচ কুম্বলকে সরতে হয়েছিল।
আর শুরুতেই লিখেছি, সৌরভ – সচিন – লক্ষ্মণরা চেষ্টা করেছিলেন কুম্বলকে রাখতে। কিন্তু কোহলি চেয়েছিলেন বলেই বিসিসিআই রবি শাস্ত্রীকে ২০১৭ সালে হে়ড কোচ হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। সেই সময়ে খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল কুম্বেলের। এই ঘটনার চার বছর পর হেড কোচ হিসেবে কুম্বলেকেই চাইছে বিসিসিআই। আর বিরাট কোহলি এক ভাগ নেতৃত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন। সকলেই কিন্তু মনে করছেন, নেতৃত্বের চাপ সরে গেলে কোহলি ব্যাট হাতে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবেন।
আরও পড়ুন: সৌরভের বার্তা বিরাটকে
কোহলির উপর চাপ বাড়াতেই কি কুম্বেলেকে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বোর্ড? কোহলি টুইটারে মেলটি পোস্ট করার সঙ্গে বেশ কয়েকজনকে ট্যাগ করেন। তাতে পর্যায়ক্রমে দেখা গেছে, বোর্ড সচিব জয় শাহকে আগে রেখেছেন, বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আগে। এটা কি ভেবে চিন্তে? নাকি বোর্ড সচিবকে সামনে রেখে অনেকের বিষ দাঁত ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে?
While it is surprising to hear that @imVkohli has decided to quit the captaincy of the T-20 format, the timing of the announcement is even more surprising as T-20 world cup is just around the corner. Whatever it may cost, it is his decision and so be it.
— Mohammed Azharuddin (@azharflicks) September 17, 2021
বোর্ডের আনাচে কানাচে ঘুরছে, একদিনের ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ থেকেও সরানো হতে পারে কোহলিকে। আসলে বিরাটের কিছু সিদ্ধান্ত বিসিসিআই-এর একদমই পছন্দ হয়নি। যেমন পুরো ইংল্যান্ড সিরিজে অশ্বিনের মতো বোলার দলে থাকা সত্ত্বেও তাঁকে খেলাননি কোহলি। নিজের ইচ্ছে মতো চলেন তিনি। এই সব কারণেই নাকি কোহলির উপর বেশ বিরক্ত বোর্ড। সেই কারণেই কি কুম্বলেকে এনে ‘নেতা’ কোহলিকে চাপে রাখতে চাইছে বোর্ড? সৌরভ ঘনিষ্ঠদের থেকে জানা যাচ্ছে, অন্য কিছু। সেঞ্চুরি করার ছন্দে কোহলিকে ফেরাতে চান সকলে।
তবে, পরবর্তী ভারতীয় কোচ নিয়ে রটনার শেষ নেই। কুম্বলের আগে নাকি বিসিসিআই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কোচ এবং শ্রীলঙ্কার তারকা ক্রিকেটার মাহেলা জয়বর্ধনেকে ভারতীয় দলের হেড কোচ হওয়ার জন্য বাজিয়ে দেখেছিল। কিন্তু জয়বর্ধনে নাকি শ্রীলঙ্কা টিম এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বাইরে আপাতত অন্য কোনো দলের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ভাবছেন না বলে জানা গেছে। ভারতীয় দলের কোচ হলে, আইপিএলে কোনও দলের সঙ্গে থাকা যাবে না।
এই মুহুর্তে কুম্বলে পঞ্জাব কিংস দলের সঙ্গে যুক্ত । তিনি এই ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট অপারেশন। পাশাপাশি তিনি আবার সংযুক্ত আরব আমির শাহি ক্রিকেট দলের হেড কোচ। তবে ভারতীয় দলের কোচ হলে কুম্বলেকে এসব দায়িত্ব ছাড়তে হবে।
যারা মুখিয়ে বসে আছেন, কুম্বলে কোচ হলে-কোহলির হাল দেখবেন-তাঁদের তেমন মশলা মিলবে বলে মনে হয় না। দু’জনের মানসিকতা একদিক দিয়ে একরকমই। জয় ছাড়া দু’জনই অন্য কিছু বোঝেন না। বরঞ্চ দেখার-কুম্বলে কোচ হলে সীমিত ওভারের নয়া নেতার (সম্ভবত রোহিত শর্মা) সঙ্গে জুটি কেমন হয়।
ছবি: সৌ- টুইটার