ভারত-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টের প্রথমদিনের শুরু যেন আগের টেস্টের শেষের দিনের ছবি হয়ে উঠছিল। লর্ডসে কিন্তু এমন আকাশের মুখ ভার হওয়ার কথা ছিল না। বৃষ্টির আবহাওয়া পূর্বাভাস ছিল না। কিন্তু হল কই! শুরুতে হাল্কা বৃষ্টি,টস করার সময় পিছিয়ে যাওয়া-এই ছিল দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের শুরুয়াত। প্রথম সেশনটা আকাশের মুখ ভার দিয়ে শুরু। দিনের শেষ পর্বেও তাই। বাকি সময় লড়াই হল ব্যাট আর বলের। প্রথম দিনের শেষে টস হেরে ভারতের সংগ্রহ:৩ উইকেটে ২৭৬ রান।
দিনের শুরুতে যে আবহাওয়া ছিল,তাতে ভারতীয় ওপেনাররা যা করে দেখলেন,কয়েক বছর এটাই হচ্ছিল না। ওপেনার জুটি রোহিত শর্মা আর কেএল রাহুল সেঞ্চুরি রানের পার্টনারশিপ গড়ে দিলেন! যা বড় রানের শক্ত ভিত বানানোর প্রথম শর্ত ছিল । বিরাট-ফর্মে না ফিরলেও রানের মধ্যে ফিরলেন। দিনের শেষ প্রায় তিনশো রানের কাছাকাছি ভারত, ওপেনের কেএল রাহুল ক্রিজে ১২৭ রানে। এখনও ব্যাট করে চলেছেন।
এই প্রথমদিনের প্রথম ইনিংস অনেক কিছু ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটে ঘটার সুযোগ করে দিল । সেগুলো,একবার দেখে নেওয়া যাক।
অবশেষে ওপেনারদের ১০০ রানের জুটি:
প্রচলিত ধারণা হল, ইংল্যান্ডের পরিবেশে যে কোনও দলের ওপেনারদের শক্ত চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়। আর এশিয়ার দল হলে তো কথাই নেই। ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশ, কেউ এমন পরিবেশে খেলতে অভ্যস্ত নয়।
আরও পড়ুন: মেসির আগমনে পিএসজির লক্ষ্মী লাভ
ভারত এই চলতি শতকে (২০০০ সাল থেকে) মাত্র একবারই ওপেনিং জুটি ১০০ রান করতে পেরেছিল। যা প্রায় ১৪ বছর আগে! বৃহস্পতিবার রোহিত-রাহুল জুটি শুরুর আবহাওয়া আর পেসার অ্যান্ডারসন-রবিনসনের চ্যালেঞ্জ শুধু সামালই দিলেন না,১২৬ রানের ওপেনিং জুটিতে রান লুটে,দলকে মজবুত ভিতে দাঁড় করিয়ে দেয়।
ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০০০ সালের পর থেকে চলতি দৌড়ে এটাই এখন ভারতীয় টেস্ট ওপেনারদের দ্বিতীয় সেরা সংগ্রহ। ২০০৭ সালে ওয়াসিম জাফর-দীনেশ কার্তিক ১৪৭ রান তুলেছিলেন।
এই দুই ওপেনারের আরও কিছু কীর্তি সারা হয়ে গেল, ১. রোহিত-রাহুল একমাত্র অ-ব্রিটিশিও ওপেনিং জুটি যাঁরা লর্ডসে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি জুটি গড়লো।
২. টস হেরে লর্ডসে ওপেনিং জুটিতে ১২৬ যে উঠল, এটাই এখন সেরা প্রথম ইনিংসের সংগ্রহ। এর আগে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০৮ সালে অ্যান্ড্রু স্ট্রস-অ্যালেস্টার কুক করেছিলেন ১১৪ রান।
৩.এই জুটির সেঞ্চুরি ইংল্যান্ডের মাটিতে যে কোনও টেস্টের বিচারে কম সময় হয়েছে (৪৩.৪ ওভারে)। এরআগে ২০০৩ সালে হার্সেল গিভস আর গ্রিম স্মিথ নিয়েছিলেন ৭৪.৫ ওভার। আর ২০০৪ সালে স্টিফেন ফ্লেমিং-মার্ক রিচার্ডসন সময় নিয়েছিলেন ৫১.৪ ওভার।
বিদেশের মাটিতে রোহিতের সেরা সংগ্রহ:
রোহিত শর্মার ক্রিকেট কেরিয়ারটাই ইউ টার্ন নিয়েছে ওপেনার হয়ে ওঠার পর। প্রথমে তা ঘটে লিমিটেড ওভার ক্রিকেটে। তারপর টেস্ট। কিন্তু এই ওপেনার এখনও ঘরে- বাইরে কোথাও টেস্ট সেঞ্চুরি পাননি। পরিসংখ্যান জানিয়ে দিচ্ছে, হিটম্যান ৩০-৪৯ রান করেছেন চারটি ইনিংসে। একটা আছে ৫২ রান। আর এই ম্যাচে ৮৩ রান। এই ম্যাচে দারুণ শুরু করেছিলেন তিনি। নিজের ৫০ রানের গণ্ডি যখন টপকে যান, তখনই ৩২ রান আসে শুধু ৮টি বাউন্ডারি থেকে। ৮৩ রানের মধ্যে আছে ১১টি বাউন্ডারি আর একটি ওভার বাউন্ডারি। অর্থাৎ ৫০ রান শুধু চার-ছয়ে। এবারও এই রান তিন অঙ্কে বদলে নিতে পারলেন না। যেমন পারেননি ২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে করা ৭৯ রানের ইনিংসটিতেও।
লর্ডসে সেঞ্চুরি, রাহুল তৃতীয় ভারতীয় ওপেনার :
কর্নাটকের ওপেনের ময়াঙ্ক আগরওয়াল চোট পাওয়ায় প্রথম টেস্ট থেকেই আচমকা সুযোগ পান কেএল রাহুল। প্রথমদিন থেকে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। সেই প্রথম টেস্টে ১৪ রানের জন্য (৮৬ রানে আউট হন) সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে আর সামান্যতম ভুল করেননি। লর্ডসের মাঠে সেঞ্চুরি। তৃতীয় ভারতীয় ওপেনার রাহুল, যিনি এমন কৃতিত্ব গড়লেন। ওপেনার হয়ে ১৯৫২ সালে ভিনু মানকাদ (১৮৪ রান) আর ১৯৯০ সালে রবি শাস্ত্রী (১০০ রান) এমনটা করেছিলেন। রবি নিজে এদিন লর্ডসে ভারতীয় দলের চিফ কোচ হয়ে বসে সেই দৃশ্য দেখলেন।
এলিট ক্লাবে রাহুল:
২০১৮ তে রাহুলের ইংল্যান্ড সিরিজ কেমন গেছে তা না বিচার করে, ওদেশের মাটিতে শেষ তিনটে টেস্টের পরিসংখ্যান দেখছিলাম। ২০১৮ সালের ওভাল টেস্টে তাঁর স্কোর ছিল:৩৭ ও ১৪৯। তারপর এবার আবার ইংল্যান্ড। প্রথম টেস্টে:৮৪ ও ২৬। আর দ্বিতীয় টেস্টে:এখনও ব্যাট করছেন ১২৭ রানে।
পরপর তিনটি ম্যাচে ৫০ রানের বেশি স্কোর আছে দুই এশিয়ার ব্যাটসম্যানের। দুজনই আবার ভারতীয়! প্রথমজন-সুনীল গাভাস্কর। ১৯৭৯ সালের সফরে পরপর চারটি ম্যাচে ৫০ রানের বেশি স্কোর করেছিলেন। দ্বিতীয়জন-দীনেশ কার্তিক। ২০০৭ সালের সিরিজে তিনটি ম্যাচে ৫০ রানের বেশি স্কোর করেছিলেন।
জোড়া সেঞ্চুরি জুটি:
দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের শেষে ভারতীয় দল যে সুবিধাজনক অবস্থায়, তার কৃতিত্ব কেএল রাহুলের এবং তাঁর দুটি জুটি তৈরি করে দলকে টেনে নিয়ে যাওয়া। এই ম্যাচে এখনও পর্যন্ত জোড়া জুটির সেঞ্চুরি দেখা গেল।
প্রথমটা হয়েছে রাহুল-রোহিতের ওপেনিং জুটিতে। এসেছে ১২৬ রান। পরেরটা অধিনায়ক কোহলির সঙ্গে। আসে ১১৭ রান। এর আগে ১৭টি টেস্ট ভারত লর্ডসে খেলেছে। একের অধিক জুটিতে সেঞ্চুরি হয়নি একটিও ইনিংসে। সেই হতাশার রেকর্ড এদিন ভাঙলো।
ছবি: সৌ – টুইটার।