১৯টি বার ম্যাট্রিকে সে ঘায়েল হয়ে থামল শেষে, কিন্তু সিপিএম তো গঙ্গারাম নয়, সে থামবে না, পুষ্পা ঝুকতা নহি আর সিপিএম রুকতা নহি। সে ভুলের পর ভুল আবার ভুল, আবার ভুল তারপরে আবার ভুল। কমরেড সেলিমকে কেউ গিয়ে বলছে না যে গিনেস বুক একই রেকর্ড একই জনের কাছ থেকে তিন বারের বেশি নেয় না, কাজেই গিনেস বুক অফ রেকর্ডসেও সিপিএম-এর ভুল পাত্তা পাচ্ছে না। কিন্তু ওই যে রুকেগা নহি, তারা ভুলের পরে ভুল করেই চলেছে। নতুন ভুলটা এই কিছুদিন হল তারা জানতে পেরেছেন। ওই যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, সেটা নাকি মহিলাদের মন কেড়েছে, ভোটের দিন মহিলাদের দীর্ঘ লাইনের বেশিরভাগটাই নাকি ওই জন্যই ঘাসফুলে যাচ্ছে, কী কেলো বলুন দেখি। এই ক’দিন আগে বাবার পয়সায় এসইউভি চড়া কমরেড এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে ভিক্ষার দান বলেছে, আসলে মানুষকে ভিক্ষা দেওয়া হচ্ছে নিজেদের অক্ষমতা ঢাকতে, এইসব কথা বলেছেন, কথা তাঁকে বলতেই হয়, আনন্দে নিরানন্দে মধু আছে, চারবার জামানত হারানো নেতার সঙ্গে তাঁরা দেশের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেন, মানুষ আসলে কী চায় তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে নেমে পড়েন। এবং সেই বক্তিয়ার খিলজিই শুধু নয়, আরও অনেক সিপিএম-এর খাঞ্জা খাঁ বার বার বলেছেন এই টাকা দিয়ে শিল্প হত, এই টাকা দিয়ে শিল্প হলে কত শত মানুষের চাকরি হত, এই টাকা নয় ছয় করা হচ্ছে, আমরা এলে আবার শিল্পে জোর দেব, কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। তো এতদিন পরে হঠাৎ কী হইতে কী হইয়া গেল, সিপিএম নেতৃত্ব জানাচ্ছে যে ওইসব বলা ইত্যাদি ছিল এক ভুল। মানে আবার ভুল স্বীকার। কাজেই সেটাই বিষয় আজকে, আবার, এবারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে সিপিএমের ভুল স্বীকার।
ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানের কথা পড়েছেন নিশ্চয়ই, সেটা ছিল এক টিলার উপরে গড়ে তোলা বাগান, রাজপ্রাসাদের জানলা দিয়ে, সভাসদদের বসার জায়গা দিয়ে দেখলে মনে হত বাগানটা শূন্যে ঝুলছে। আসলে তা ছিল না, তা হতেই পারে না। কারণ গাছ বাড়ার জন্য মাটি লাগে। ঠিক তেমনিই রাজনৈতিক দলকে বেড়ে ওঠার জন্য সেই মাটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়, মানুষ কী চায়, মানুষ কী বলছে সেটা বোঝা খুব জরুরি, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মাটির যোগাযোগটা শক্ত থাকা খুব জরুরি, যখনই সেই যোগাযোগ নড়বড়ে হয়ে যায়, ঠিক তখন সেই রাজনৈতিক দলের পতন কেউ আটকাতে পারে না। এক বিশাল প্রাসাদের মতো কাঠামো ঝুপ করে ভেঙে যায়।
আরও পড়ুন: Aajke | ডাঃ কিঞ্জল নন্দ, ডাঃ অনিকেত মাহাতোরা আসলে অভয়ার বিচার চান না
সিপিএম বা বলা ভালো কমিউনিস্ট পার্টি আজ নয় বহু আগের থেকেই সেই যোগাযোগ হারিয়েছে। জন্মলগ্ন থেকে বললেও ভুল হবে না। তাহলে টিকল কেন? টিকল কারণ তাদের কৃষক আর শ্রমিক সংগঠনগুলো এক বড় অংশের মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে তাদের সঙ্গে থেকেছে, তাদের দাবিদাওয়াগুলো তুলে ধরেছে। আর সেগুলো ছিল এক্কেবারে পাওনাগন্ডার ব্যাপার। ধরুন কৃষক আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভিত্তি কী? ফসলের ভাগের লড়াই, জমির অধিকারের লড়াই, এই তো। এর সঙ্গে কোনও আত্মিক সম্পর্ক ছিল না, এক্কেবারে পাওনাগন্ডার প্রশ্নে কৃষকরা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ছিল। অন্যদিকে শ্রমিকরা মজুরি বাড়ানো, ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে, অন্যান্য সুযোগ সুবিধের জন্য লড়াইয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ছিল। যতদিন কমিউনিস্ট পার্টির সেই বার্গেনিং পাওয়ার ছিল, হক আদায় করার ক্ষমতা ছিল, ততদিন সেই মানুষগুলো থেকেছে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে, লাল ঝান্ডার সঙ্গে, বাম শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে। যেই সেই ক্ষমতা অন্য সংগঠনের কাছে গেছে, মানুষ সেদিকে সরে গেছে। ধরুন বিজেপি, কিসের জন্য বাড়ছে? তারা চাকরি দিচ্ছে? মূল্যবৃদ্ধি কমাচ্ছে? গরিব মানুষগুলোর জন্য বিশাল কিছু করছে? না, করছে না। কিন্তু তারা এক কল্পিত শত্রু মুসলমানদের হাত থেকে তাদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলছে, বলছে আমরা ক্ষমতায় না আসলে তোমাদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে, তাদের পূজ্য দেবতার জন্মভূমিতে বিরাট মন্দির কেবল বানায়নি আরও সেরকম বহু জায়গাতে মন্দির ভেঙে নাকি মসজিদ তৈরি হয়েছে, সেগুলোরও দখল পাইয়ে দেবে আরএসএস-বিজেপি। অন্যদিকে কমিউনিস্ট পার্টি, পড়াশুনো জানা কিছু মানুষের মধ্যে এক বিপ্লবের আদর্শ দিতে পেরেছিল, কিন্তু সে বিপ্লবের মন্দিরগুলো ছিল রাশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, পোলান্ড, যুগোশ্লাভিয়া, রোমানিয়া, কিউবা। সেসব মন্দির ধসে পড়েছে, আর সেই যুবকেরা সাফ দেখতে পাচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ ইলন মাস্কের হাতে। কাজেই পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি, জমির হক, ফসলের ভাগ, বেশি মজুরি বা বোনাস কোনওটাই তাঁদের হাতে নেই, নেই আদর্শের এক উজ্জ্বল স্বপ্ন, সেই জায়গাতে গরিবস্য গরিব মানুষজনদের হাতে ১৫০০ টাকা দেওয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আসলে তারা নিজেদেরকে ওই মানুষজনদের কাছ থেকেই বিচ্ছিন্ন করে তুলল। এবং যতদিনে তারা এই ভুল বুঝতে পারল, ততদিনে ঘটি তো উল্টেইছিল, যে ক’ ফোঁটা জল ছিল তাও গড়িয়ে গেছে। তবে এটাই কি শেষ ভুল? দাঁড়ান, পুষ্পা ঝুকতা নহি, সিপিএম রুকতা নহি, মানে ওই ভুলের ক্ষেত্রে তারা আরও অনেক পথ চলবে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, মমতা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার শুরু করার পরে প্রায় সমস্ত রাজ্যে বিভিন্ন দলের সরকার এই ধরনের প্রকল্প চালু করেছে, আজ এতদিন পরে সিপিএম বুঝতে পারল এই প্রকল্পের বিরোধিতা করা ঠিক নয়, মানে আবার ভুল স্বীকার। আপনাদের মতামত কী? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
যদিও সিপিএম গরিবস্য গরিব মানুষগুলোকে ন্যূনতম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি নিয়েই সরকারে এসেছিল, সরকারে আসার পর থেকেই তাদের ফোকাস সরে গিয়েছিল অনেকটাই। তাদের চোখে ছিল শহরের উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। হ্যাঁ, তাদের সামান্য সমর্থন তারা পেয়েছে, কিন্তু লক্ষ কোটি মানুষের সমর্থন তাদের চলেও গিয়েছে এটাও সত্যি। আজ এতদিন পরে যখন তাদের সেই ভুল ভাঙল তখন অনেক অনেক দেরি হয়ে গেছে আর নিশ্চিন্তে থাকুন আবার আমাদের সিপিএম-এর আরও একটা নতুন কোন ভুল স্বীকার নিয়ে খুব তাড়াতাড়িই প্রোগ্রাম করতে হবে।
The post Aajke | আবার, এবারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে সিপিএমের ভুল স্বীকার first appeared on KolkataTV.
The post Aajke | আবার, এবারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে সিপিএমের ভুল স্বীকার appeared first on KolkataTV.