রাজনৈতিক নেতাদের নামে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়, বরং তা এতটাই স্বাভাবিক আর পুরনো যে মানুষ সেসব কথায় আর কানই দেয় না। রাজনীতি করছে, সে চুরি করছে? করছে তো করছে, রাজনীতি করবে আর চুরি করবে না? এমনটা হয় নাকি? সেসব নিয়ে আমজনতার আপাতত মাথাব্যথা নেই, আমজনতা মানে ম্যাঙ্গো পিপল এখন পাক্কা বেনিয়া। কী পাচ্ছি? কী দিচ্ছে? কে দিচ্ছে? সেই হিসেব কষেই এখন তাদের সমর্থনের পাল্লা ঝুঁকছে। সেটা না বুঝে যে দিচ্ছে তার বিরোধিতা করলে যে শূন্যে যেতে হবে তা আমাদের রাজ্য রাজনীতিতে আজ প্রমাণিত। জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব? হিন্দুরাষ্ট্র, ধনী লোকেদের অত্যাচার, শোষণ? হিন্দু খতরে মে হ্যায়? এসব বেশিরভাগ মানুষের কাছে নন ইস্যু। তাঁরা এ নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন। তাঁদের চিন্তা লক্ষ্মীর ভান্ডারে কত টাকা আসবে, রেশনে কত চাল ডাল ফ্রি পাব? স্কুলে ছেলেমেয়েরা ডিম-ভাত পাচ্ছে কি না। বিদ্যুতের বিলে ছাড় কতটা পাব? মানে যাকে বলে লেনদেন রাজনীতি, ফেলো কড়ি মাখো তেল আমি কি তোমার পর? কিন্তু মানুষের একটা চোখ, একটা সবল ইন্দ্রিয় কেচ্ছা খোঁজে। সেটা পাড়ার দাদা, বৌদি থেকে সিনেমা অভিনেতা অভিনেত্রীদের যে কারও হতেই পারে। কিন্তু সব থেকে ভালো খেতে পাউরুটি আর ঝোলা গুড়ের মতোই, সব থেকে বেশি নজর কাড়ে রাজনৈতিক নেতাদের কেচ্ছা, সে আমেরিকার বিল ক্লিন্টনের হতে পারে বা বাংলার দিলু ঘোষ। রাজনৈতিক নেতাদের কেচ্ছা অনায়াসে নজর কেড়ে নেয় মানুষের, আমজনতার। সেটাই বিষয় আজকে, কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি আর বিজেপির নেতারা।
বিজেপি নেতাদের নিয়ে কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির একটা বই অনায়াসে লেখা যায়। সেই কবে দিল্লির বিভিন্ন মহলে চিরকুমার অটল বিহারীর প্রেম নিয়ে জোর চর্চা হত। ওনার আশিকানা মেজাজ নিয়ে চর্চা হত। ওনার সান্ধ্য মজলিস নিয়ে আলোচনা হত। সত্যি মিথ্যে জানি না, কিন্তু বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী প্রকাশ্যেই মোদিজির বান্ধবী নিয়ে লাগাতার বলে যাচ্ছেন। কিন্তু রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন বিজেপি নেতাদের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি আর এখন কেবল চর্চা নয়, এখন তা ভাইরাল ভিডিও।
আরও পড়ুন: Aajke | ১৮ জুলাই দিলীপ ঘোষ আর বিজেপির ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে
কিছুদিন আগে এই বাংলাতেই রাজ্য বিজেপির এক বড় নেতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ রীতিমতো পুলিশের কাছে জানিয়েছিলেন এক মহিলা। বর্তমান বিজেপি রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে এক মহিলার অভিযোগের অডিও কেচ্ছা ভাইরাল, আর সর্বশেষ ভাইরাল দিলীপ ঘোষের নামে এক কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির ভিডিও। এগুলোর কোনওটার সত্যতা আমাদের জানা নেই। কিন্তু যেটা জানা আছে যে এই সমস্ত কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি কিন্তু বিরোধী দলের তরফে কেউ ছড়িয়েছে, ভিডিও ভাইরাল করেছে এমন নয়। এগুলোর প্রত্যেকটা হয়েছে বিজেপি রাজ্য নেতাদের বিভিন্ন লবি থেকে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবেই এই ভিডিওগুলোকে ভাইরাল করা হয়েছে। এবং এই কথা আমি বা আমরা বলার আগেই দিলীপ ঘোষ নিজেই বলে দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে, তাঁকে কাঠিবাজি করা হয়েছে, তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে শেষ করে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে নেমেছেন কিছু নেতা, তাঁরাই ইউটিউবারদের পয়সা খাইয়ে এইসব নোংরা কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির ভিডিও ভাইরাল করছেন। প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলে গোষ্ঠী থাকে, লবি থাকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকে, লবিবাজি থাকে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপিতে তা এক চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে, তার প্রধান কারণ হল দলের মধ্যে কেবল গোষ্ঠী নয়, এক সমান্তরাল দল চালানোর কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। প্রত্যেক কেন্দ্রে মাথায় বড় নেতারা রয়েছেন, তাঁদের অর্থে ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারের ব্যবস্থা রয়েছে আর রয়েছে আসল বিজেপি, নকল বিজেপি, আদি বিজেপি নব বিজেপির লড়াই। সব মিলিয়ে দলের মধ্যে যা চলছে তাকে শুম্ভ-নিশুম্ভের লড়াই বললেও কম বলা হবে। তা না হলে বিজেপির প্রতিটা কাজের সমর্থক, বিজেপির প্রতিটা পদক্ষেপের প্রচারে জান লড়িয়ে দেওয়া ইউটিউব চ্যানেলেই দলের নেতাদের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি এবং তার পাল্টা কেচ্ছা ভিডিও ভাইরাল করা হবে কেন? একে তো এ রাজ্যে বিজেপির বেড়ে ওঠা কঠিন, কারণ এখানে ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু আছেন, আর শক্তি চট্টোপাধ্যায় আউড়ে তাদের ভোট তো আর জুটবে না। এ রাজ্যের সরকারের ডাইরেক্ট বেনিফিশিয়ারি প্রকল্পগুলোতে যে মানুষেরা সাহায্য পান তাঁরা এখন সরকারের, তৃণমূলের বড় সমর্থক, যেখানে বিজেপির খুব বেশি কিছু করার নেই। এ রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে সিবিআই বা ইডি এখনও পর্যন্ত একজন তৃণমূল নেতা বা সরকার ঘনিষ্ঠ কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার প্রথম ধাপও পার করেনি। বরং মানুষের মনে বিজেপি বিরোধী বলেই তাদের ঘরে সিবিআই ইডি যাচ্ছে এরকম একটা ধারণা ক্রমশ বাড়ছে। সে রকম একটা অবস্থায় তৃণমূলের হাতে নতুন অস্ত্র ভাষা আন্দোলন। কাজেই এক হতাশ, জনবিচ্ছিন্ন দলের মধ্যে তীব্র হতাশা জন্ম নিচ্ছে আর সেই হতাশার বহিঃপ্রকাশ হল এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর তার অঙ্গ হিসেবেই এ ওর নামে, সে তার নামে ক্রমাগত কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি রটিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে রাজ্য বিজেপির বিভিন্ন নেতাদের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি বেরিয়ে আসছে কিন্তু তাদের কাছ থেকেই। দলের মধ্যে একে অন্যের বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন সেসব কেচ্ছার ভিডিও ভাইরাল করে দিচ্ছেন। কেন এরকম হচ্ছে বলে মনে হয়? এটা কি বিজেপির আদি নব দ্বন্দ্ব? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
২০২৬-এর ভোটের আর মাত্র ৮ মাস, তারমধ্যে দুর্গাপুজো আছে, যেখানে মমতা একাই একশো, দলের হাতে নতুন অস্ত্র বাংলা, বাঙালিদের উপরে আক্রমণ। ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন মমতা। ওদিকে সংখ্যালঘু ভোট এককাট্টা হয়ে তৃণমূলের দিকে। অন্যদিকে বিজেপির মধ্যে এক চূড়ান্ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের লড়াই এক নোংরা চেহারা নিয়ে হাজির। ২০২৬-এ বিজেপি ৫০টা আসনও পাবে তো?