পূর্ব বর্ধমান: কোভিডের সময় যখন আতঙ্কে ঘরবন্দি ছিল সকলে, তখন একদল প্যাঁচা রাস্তায় নেমে বাঁচিয়ে দিয়েছিল একটা গোটা শহরকে। না না, কোনও গল্পকথা নয়, বাস্তবেই এমনটা ঘটেছিল পূর্ব বর্ধমান জেলার কাঞ্চননগরে। এখনও শহরের একটি স্কুলে গেলে দেখা মিলবে সেই প্যাঁচা বাহিনীর। কারণ নিশাচর এই প্রাণীগুলির বন্ধু সেই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক। তাঁর কথায় ওঠে বসে স্কুলের প্যাঁচারা। স্কুল প্রাঙ্গনের বটগাছ থেকে স্কুল বিল্ডিং, সব জায়গাতেই অবাধ বিচরণ তাদের। প্রধান শিক্ষকের কথাও দিব্যি শোনে তারা। এদিকে পঠনপাঠন ও স্কুলের কাজকর্ম সামলানোর পাশাপাশি একরাশ পশুপাখি নিয়ে দিব্যি আছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকও। পূর্ব বর্ধমান জেলার কাঞ্চননগরের ডি এন দাস হাইস্কুলে গেলে আপনার হয়তো এক মুহূর্তের জন্য মনে হবে যে আপনি চিড়িয়াখানায় এসে দাঁড়িয়েছেন। সরকারি স্কুলের এমন এমন ব্যতিক্রমী পরিবেশ তৈরির নেপথ্য রয়েছেন প্রধান শিক্ষক সুভাষচন্দ্র দত্ত। কিন্তু কীভাবে তিনি স্কুলের মধ্যে প্যাঁচাদের সাম্রাজ্য তৈরি করলেন? চলুন এবার সেই গল্পটা জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: স্কুলের অ্যাকাউন্ট ছাড়াই ঢুকছে মিড-ডে মিলের টাকা, কোথায়?
সালটা তখন ২০১৫। শীতের এক ভোরে কাঞ্চননগরের এই স্কুলের একটি কুলুঙ্গিতে এসে বসে বার্ন আউল প্রজাতির একটি ছোট্ট প্যাঁচা। সেটিকে স্নেহের সঙ্গে লালনপালন করতে করতে এক অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে পড়েন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুভাষচন্দ্র দত্ত। তারপর থেকেই প্রাণীদের সাম্রাজ্য গড়ে তোলা শুরু। ধীরে ধীরে লক্ষ্মী প্যাঁচা, হুতুম প্যাঁচা, কাল প্যাঁচাদের আশ্রয় ও খাবার দেওয়া শুরু করেন তিনি। দিনের পর দিন সুভাষবাবুর এই পরিবার বড় হতে শুরু করে। এখন কাঠবিড়ালী থেকে বেজি, সাপ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি- কী নেই তাঁর এই সংসারে! তবে শুধুমাত্র প্যাঁচাদের লালনপালন নয়, তাদের মাধ্যমে এক বড় গবেষণাও করেছেন তিনি। তাঁর মতে, কাঞ্চননগরে কোভিড সংক্রমণ কমাতে সেই সময় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল তাঁর এই প্যাঁচা বাহিনী। কারণ, করোনাকালে প্যাঁচাদের খাদ্যাভ্যাস পাল্টে গিয়েছিল। ইঁদুর, ছুঁচো, বেজি ছেড়ে প্যাঁচারা বাদুড় ও চামচিকে খেতে শুরু করে। এর মাধ্যমে এলাকায় কোভিড সংক্রমণ কম হয়েছিল বলে ধারণা তাঁর। তবে কোভিড কমাতে প্যাঁচার ভুমিকা কতটা ছিল, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হতে হবে। কিন্তু মানুষ ও নিশাচর পাখির এমন সহাবস্থান সত্যিই অবাক করার মত একটি বিষয়। কারণ, আজ অবধি স্কুলের কোনও পড়ুয়াকে আক্রমণ করেনি প্যাঁচা বাহিনী। তাই পূর্ব বর্ধমান জেলার ডি এন দাস হাই স্কুলকে মহামিলনের আনন্দমঠ বললেও হয়তো খুব একটা ভুল কিছু হবেনা।
দেখুন আরও খবর: