কলকাতা: ‘বাবুল বাবুল পয়সা উসুল’। ‘আই আই বাবুল কি বাহার’। ‘সুবহ্ বাবুল কি তো দিন তুমহারা’।
বাবুলকে নিয়ে বিজেপির ‘পয়সা উসুল’ হয়ে গিয়েছে। এক সময়ে বাবুলের হাত ধরেই আসানসোলে বাহার অর্থাৎ বসন্ত এসেছে। বিজেপি’র সকাল শুরু হয়েছে বাবুলকে দিয়েই। ২০১৪ সালের কথা। বাবুল তখন একাই একশো।
আরও পড়ুন: ফেসবুক পোস্টের লাইন মুছে দলবদলের জল্পনা উসকে দিলেন বাবুল
বাবুলও হয়ত তাই বলছেন ‘আমার যে দিন গেছে ভেসে…’ আর বাবুলের মেন্টর বাবা রামদেব কী বলছেন? বাবার কল্যাণেই তো ২০১৪ সালের টিকিটটা পকেটে পুরেছিলেন বাবুল। আসানসোল থেকে জিতে ‘দন্তকান্তি’ চমকিয়ে সংসদ ভবনে পা রেখেছিলেন বলিউডের প্লে-ব্যাক সিঙ্গার।
বাবুল নিজেই লিখছেন, ২০১৪ আর ২০১৯-এর অনেক ফারাক। কিন্তু সময়টা তো ২০২১। তা হলে কোথাও কী কিছু ভুল হচ্ছে? ‘তখন বিজেপির টিকিটে আমি একাই ছিলাম।’ ২০১৯। পদ্মশিবির ফুলে ফেঁপে উঠল। তখন ‘মুকুল’ ফুটেছে পদ্মে। বিজেপির ভিতর চোরাস্রোতের টানে তৈরি হল একাধিক উপদল। কৈলাশ শিবির। দিলীপ শিবির। ইত্যাদি। বাবুল ছিলেন এ সবের খানিক বাইরে। সরাসরি অ্যাকসেস ছিল জগৎপ্রকাশ নাড্ডা এবং অমিত শাহ্-এর ঘরে।
তা হলে কী এমন ঘটল যে মন্ত্রিসভা থেকে কেটে দেওয়া হল বাবুলের নাম। বাবুল নিজেই লিখছেন, ভোটের আগে থেকেই রাজ্য নেতৃত্বের সাথে মতান্তর হচ্ছিল। রাজ্য নেতৃত্ব মানে দিলীপ ঘোষ। কী নিয়ে মতান্তর, প্রার্থীতালিকা না অন্য কিছু? বাবুলের ফেসবুক টাইমলাইনে গেলেই এ সবের খানিকটা হলেও উত্তর পাওয়া যাবে। লিখছেন, ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য অন্য নেতারাও ভীষণভাবে দায়ী।’ অর্থাৎ বাবুল বিজেপির অন্তর্কলহে শুধু নিজেকেই জড়াচ্ছেন এমনটা নয় আরও একাধিক নেতাকেই টেনেই এনেছেন তাঁর ফেসবুক পোস্টে। সেটা লিখেই আবার ব্যালান্সের খেলা খেলেছেন। ‘যদিও কে কতটা দায়ী সে প্রসঙ্গে আমি আজ আর যেতে চাই না। কিন্তু সিনিয়র নেতাদের নেতাদের মতানৈক্য ও কলহে পার্টির ক্ষতি তো হচ্ছিলই।’ লাইনে লাইনে দলের ভিতরের চোরাস্রোতের প্রমাণ। বাবুলের লেখায় কারা এই সিনিয়র নেতা? দিলীপ ঘোষ। শুভেন্দু অধিকারী। কৈলাস বিজয়বর্গীয়। রাহুল সিনহা। মুকুল রায় (জুন মাসে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন)। সৌমিত্র খাঁ। এ রকম একাধিক নাম করা লেখা যায়। যাঁরা নিজেদের মত করে ‘শিবির’ তৈরি করেছেন। বাবুলের পোস্টে বিজেপি নেতাদের সেই বিভাজন স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: সাংসদ পদ থেকে ইস্তফার ঘোষণা, রাজনীতি ছাড়ছেন ‘অভিমানী’ বাবুল
আসানসোলে পাঁচ শূন্য গোলে হেরেছেন বাবুল সুপ্রিয় ২০২১-এর নির্বাচনে। ‘নমো টু পয়েন্ট ও’ মোদির নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। আর তারপর থেকেই বেসুরে বাজছেন। এবং বেজেই চলেছেন।
সূত্রের খবর ২০২৪ লোকসভার লড়াইয়েও বাবুল সুপ্রিয়’র টিকিট পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। বাবুল নিজেই লিখছেন, ২০১৪ আর ২০১৯-এর অনেক ফারাক। কিন্তু সময়টা তো ২০২১।
অভিমানী বাবুল তাই নিজের কথা বলতে গিয়ে পুরনো বাংলা গানেই ভরসা রেখেছেন। পোস্ট পড়তেই পড়তেই ভিতর থেকে উঠে এসেছে বিদায়বেলার সুর। বেশ কিছু সময় তো থাকলাম.. কিছু মন রাখলাম কিছু ভাঙলাম… যার সঙ্গে মিল রয়েছে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা, নচিকেতা ঘোষের সুর দেওয়া আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া এক গোছা রজনীগন্ধা হাতে দিয়ে বললাম, চললাম চললাম…বেশ কিছু সময় তো থাকলাম। বাবুল নিজেও তাই পোস্টের সাথে ট্যাগ করে দিলেন সত্তরের জনপ্রিয় বাংলা গান।
আরও পড়ুন: বাবুলের ‘রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া’ নিয়ে মুখ খুললেন দিলীপ
বাবুল কি ‘মৃত কোনও জোনাকি’ নাকি ফিনিক্স পাখি? রামদেব বাবা হয়ত বলতে পারবেন।