Placeholder canvas
কলকাতা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ |
K:T:V Clock

Placeholder canvas
পলিটিকালবিট: বিবেকানন্দ নিরাপদ নন হিন্দুত্ববাদীদের হাতে
শুভাশিস মৈত্র Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২, ০৭:৫৭:৩১ এম
  • / ৮৫৩ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

শুভাশিস মৈত্র: রাম মন্দিরের শিলান্যাসের পর, ৫ অগস্ট, ২০২০, যোগী আদিত্যনাথকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, যখন অযোধ্যায় মসজিদ তৈরি হবে তখন তাঁকে ডাকলে তিনি কি যাবেন সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে? যোগীর জবাব ছিল,’ না’। নরেন্দ্র মোদি তো বলেইছেন, আন্দোলনকারীদের পোশাক দেখে (লুঙি) চিনতে। উত্তরপ্রদেশে ভোটের মুখে যোগী বলছেন উত্রপ্রদেশের লড়াই নাকি ৮০ শতাংশ বনাম ২০ শতাংশের। অর্থাৎ হিন্দু বনাম মুসলিমের। আর বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘আমি মানসচক্ষে দেখতে পাচ্ছি, এই বিবাদ বিশৃঙ্খলা ভেদ করে ভবিষ্যতের পূর্ণাঙ্গ ভারত বৈদান্তিক মস্তিষ্ক ও ইসলামীয় দেহ নিয়ে মহামহিমায় অপরাজেয় শক্তিতে জেগে উঠছে’।

বিবেকানন্দর শিক্ষা ছিল, সব দেবতাকে ভুলে গিয়ে ভারতবাসীর উচিত দেশের মানুষের পুজো করা। সেখানে ধর্মের কোনও স্থান নেই। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সংস্কারে বিশ্বাসী নহি, স্বাভাবিক উন্নতিতে বিশ্বাসী’…. ‘আগামী পঞ্চাশৎবর্ষ ধরিয়া তোমরা কেবলমাত্র স্বর্গাদপী গরীয়সী জননী জন্মভূমির আরাধনা কর; অন্যান্য অকেজো দেবতাগণকে এই কয় বর্ষ ভুলিলেও কোনও ক্ষতি নাই। অন্যান্য দেবতারা নিদ্রিত। একমাত্র দেবতা তোমার স্বজাতি….তোমরা কোন্ নিষ্ফলা দেবতার অন্বেষণে ধাবিত হইতেছ, আর তোমার সম্মুখে, তোমার চতুর্দিকে যে দেবতাকে দেখিতেছ, সেই বিরাটের উপাসনা করিতে পারিতেছ না? এই সব মানুষ, এই সব পশু, ইহারাই তোমার ঈশ্বর; আর তোমার স্বদেশবাসীগণই তোমার প্রথম উপাস্য’। এখানেই প্রশ্ন। হিন্দুত্বাদীরা যে বিবেকানন্দকে দেশবাসীর সমনে তুলে ধরতে চাইছেন, আর বাস্তবের বিবেকানন্দ কি এক? মাননীয় নরেন্দ্র মোদির বিবেকানন্দ, যোগী আদিত্যনাথের বিবেকানন্দ, আর আমাদের, মানে মানুষের বিবেকানন্দ এক?

বিবেকানন্দ বলেছিলেন, মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই। চণ্ডাল ভারতবাসীকে কি হিন্দুত্ববাদীরা বিবেকান্দের চোখে দেখেন? যখন যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে, হাথরাসে দলিত মেয়েকে উচ্চ বর্ণের দুষ্কৃতীরা ধর্ষণ করে হত্যা করল, তখন হিন্দুত্বাদীদের ভূমিকা কী ছিল? যোগী সরকারের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। বাড়ির লোকককে না জানিয়ে রাত দুটোর সময় মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী এই নিয়ে যোগী সরকারের কোনও নিন্দা করেননি। উল্টে বলেছেন, দেশের মধ্যে সেরা প্রশাসন হল যোগী-প্রশাসন।

হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু বইয়ের লেখক, ভারতের একজন প্রথম সারির বুদ্ধিজীবী কাঞ্চা ইলাইহা শেপার্ড ওই ঘটনার পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় লিখেছিলেন, হাথরাসের অভিযুক্ত ধর্ষণকারীরা ক্ষত্রিয় (রাজপুত বা ঠাকুর) । যেহেতু যোগী আদিত্যনাথও ওই একই ‘কাস্ট’, তাই অভিযুক্তকে বাঁচাতে দ্রুত রাষ্ট্রের হাতে থাকা সবগুলি বিভাগ এক হয়ে কাজ করতে শুরু করেছিল। প্রশাসনের উপরে থেকে নীচ পর্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছিল যোগী আদিত্যনাথ এবং তাঁর সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট করতে। অপরাধের প্রমাণগুলি মুছে দিতে। কাঞ্চা ইলাইহা শেপার্ড লিখেছেন, নরেন্দ্র মোদী এবং যোগী আদিত্যনাথ আরএসএস এবং বিজেপির বৃহত্তর পরিবারের প্রধান দুই নেতা। প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনা নিয়ে কোনও নৈতিক বিবৃতি দেননি। বিগত ৯৫ বছর ধরে আরএসএস প্রচার করে চলেছে, সমস্ত বর্ণই বৃহত্তর হিন্দুদের অংশ (যার অর্থ সমস্ত বর্ণ ও সংস্কৃতি একই পরিবারের)। তবে আমরা যদি গত ৯৫ বছর ধরে আরএসএসের কাজ-কর্ম এবং তাদের সংগঠনের প্রচারপত্র এবং তাদের সংগঠনের বই-পত্রের দিকে নজর দিই, দেখতে পাব , আজ অবধি, এই ৯৫ বছরে, তাদের কোনও লেখা-পত্রই নেই যে তারা কী ভাবে দেশ থেকে অস্পৃষ্যতা দূর করবে, কী ভাবে তারা দেশের ‘কাস্ট’ সমস্যা মেটাবে। তারা আসলে মনে করে, যেমন চলছে সেটাই ঠিক। এগুলো কোনও সমস্যা নয়।

প্রসঙ্গত বলা যায়, যেসব অভিযোগ দলিত লেখক কাঞ্চা ইলাইহা তুলেছেন হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে, বলেছেন তাদের চোখে দলিতের উপর অত্যাচার তত গুরুত্বপূর্ণ নয়, এই নিদান কিন্তু দিয়ে গেছেন মনু। মনু সংহিতায় বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণ, অর্থাৎ উচ্চবর্ণ কর্তৃক শূদ্রহত্যা সামান্য পাপ। হিন্দুত্ববাদীরা কখনও এই মনুস্মৃতির সমালোচনা করে না। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ছিল বিবেকানন্দের ওই আহ্বান, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই। বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘আমি সেই দেবতার পূজারী অজ্ঞেরা যাকে ভুল করে মানুষ বলে ডাকে’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে কথাটা খেয়াল করবেন, বিবেকানন্দ ‘মানুষ’ বলেছেন, হিন্দু-মানুষ বা মুসলমান-মানুষ বলেননি।

বিবেকানন্দ ১৮৯৩ তে ঘোষণা করলেন সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সমন্বয় ছাড়া পথ নেই। ১৮৯৯ সালে উদ্বোধন পত্রিকার ভূমিকাতে স্বামীজী লিখলেন পুব পশ্চিমের মিলনই হবে উদ্বোধনের উদ্দেশ্য। দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবের আদর্শ। প্রথমবার বিদেশ থেকে এসে বললেন we are not going to accept the tyranny of the minority over majority। অর্থাৎ গুটি কয় সাহেব দেশ চালাবে আর, ভারতবাসী মাথা নিচু করে থাকবে তা মেনে নেওয়া যায় না। এই ছিল বিবেকানন্দের মত এবং বিশ্বাস। ভয় পেলো সাহেবরা। ১৯০১ সালে ঢাকায় যুবকদের বললেন, যে লুঠেররা তোদের মাকে অত্যাচার করছে তাদের দেশ থেকে তাড়া। ব্রিটিশ পুলিশ গুলি চালাক, দেশে রক্ত গঙ্গা বয়ে যাক, আর তার প্রথম বুলেটটা এসে লাগুক আমার বুকে।

ভয় বাড়লো সাহেবদের। সশস্ত্র বিপ্লবীদের প্রেরণার উৎস্য, কারণ, তাঁদের কর্ম পদ্ধতি ইত্যাদি অনুসন্ধানের জন্য বিচারপতি রাওলাটের নেতৃত্বে যে সিডিশন কমিটি হয়েছিল, ১৯১৮ সালে সেই কমিটির রিপোর্টে ৭ বার বিবেকানন্দের উল্লেখ আছে, দু’বার উল্লেখ আছে নরেন্দ্র নাথ দত্তের নাম। রিপোর্টে বলা হয়েছে ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবীদের কাছে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বিবেকান্দের ভাবনা প্রেরণা, গীতা তাঁদের কাজের যুক্তি।

বিবেকানন্দের জন্মের পর দেড়শো বছরেরও বেশি পার হয়ে গিয়েছে। বিবেকানন্দ নিয়ে আলোচনা ফুরোয়নি। হিন্দুত্ববাদীরা বাঙালির নরেন বা বিলেকে সম্পূর্ণ ভুল ভাবে তুলে ধরে তার দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন হল বিবেকান্দর মতো একজন উদার, সমাজতান্ত্রিক, সাম্যপন্থী মানুষকে কি আমরা কতিপয় হিন্দু মৌলবাদীর হাতে ছেড়ে দেব? না কি আমরা নতুন করে বিবেকানন্দ পড়তে শুরু করব!

সরলাদেবী সম্পাদিত বৈশাখ সংখ্যা ভারতী পত্রিকায় ১৯০৯ সালে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘অল্পদিন পূর্বে বাংলাদেশে যে মহাত্মার মৃত্যু হইয়াছে সেই বিবেকানন্দ পূর্ব ও পশ্চিমকে দক্ষিণে ও বামে রাখিয়া মাঝখানে দাঁড়াইতে পারিয়াছিলেন। ভারতবর্ষের ইতিহাসে পাশ্চাত্যকে অস্বীকার করিয়া সংকীর্ণ সংস্কারের মধ্যে ভারতবর্ষকে সীমাবদ্ধ করা তাঁহার জীবনের শিক্ষা নহে। গ্রহণ করিবার সৃজন করিবার মিলন করিবার অপূর্ব প্রতিভা তাঁহার ছিল। তিনি ভারতের সাধনাকে পশ্চিমে, পশ্চিমের সাধনাকে ভারতে দিবার ও লইবার পথ রচনা করিতে গিয়া নিজের জীবনকে উৎসর্গ করিয়াছিলেন’।

একটা কথা প্রথমেই বলে নেওয়া জরুরি। বিবেকানন্দের কর্মজীবন বছরের হিসেবে খুব ছোট। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তাঁর লেখার সঙ্গে তাঁকে বোঝার জন্য আমাদের আশ্রয় নিতে হয় তাঁর অসংখ্য চিঠি, বক্তৃতা ইত্যাদির। এবং যে কোনও সুস্থ মানুষের মতোই তাঁর লেখায়ও কখনও কখনও এমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায়, যা দেখে মনে হতে পারে, তিনি তো আগে এই নিয়ে অন্যরকম বলেছিলেন! একজন অতি প্রতিভাধর মানুষের কম বয়সে মৃত্যুর জন্য এমন হতেই পারে। সেখানে দেখা উচিত, তাঁর মূল বক্তব্যের স্পিরিট বা ঝোঁক কোন দিকে!

সিপিএমের তাত্ত্বিক নেতা ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ পার্টির খবরের কাগজ দেশাভিমানী-তে ধারাবাহিক ভাবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস লিখেছিলেন, পরে সেটা বই হয়ে প্রকাশিত হয় বিভিন্ন ভাষায়। সেখানে নাম্বুদিরিপাদ লিখেছেন, ‘বিবেকানন্দের ভাষণে, চিঠিপত্রে থাকতো- কিছুটা স্পষ্টাস্পষ্টিভাবেই – এমন সব মন্তব্য, যা আধুনিক বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তোলার পথে পরম সহায়ক। এমন সব কথাও তাঁর মুখ দিয়ে বেরোতো যা বাহ্যত ধর্ম প্রতিষ্ঠান, পুরোহিতদেরই বিরুদ্ধে যেত। যেমন, তাঁর এক শিষ্যের কাছ থেকে শোনা – বিবেকানন্দ একবার এই কথা বলেছিলেন যে , দেশ যখন চরম দারিদ্রে, দুঃখ দুর্দশায় ডুবে আছে, তখন ধর্ম নিয়ে বাগাড়ম্বর করার সময় নয়।… মাঝে মাঝে তাঁর মুখে এমন কথাও প্রকাশ পেয়েছে যে, যারা গরিব, যারা নিঃস্ব, যারা দুর্বল, তারাই তো আসল দেবতা… তিনি যত ভাষণ দিয়েছেন তাদের সবেরই ভিতরে জাতির মুক্তিলাভের দুর্মর কামনা অনুভব করা যেত’।

কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে বিবেকানন্দ নিয়ে একটি আলোচনাচক্রে যোগ দিয়ে নাম্বুদিরিপাদ বলেছিলেন, ‘স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন সেই বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিক যিনি শুধু তাঁর চোখে দেখা ভারতীয় সমাজকেই ব্যাখ্যা করেননি, তার পরিবর্তনও চেয়েছিলেন- এই পরবর্তন বুদ্ধের স্বপ্নে দেখা প্রাচীন ট্রাইবাল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, বরং তিনি দেখেছিলেন একটি আধুনিক বিজ্ঞান-কেন্দ্রিক, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, রাজনৈতিক ভারত গড়ে তুলতে। যে বেদান্ত দর্শনের উপর ভিত্তি করে শঙ্করাচার্য জাত-পাত ভিত্তিক সমাজকে সংহত করতে চেয়েছিলেন, তাকেই বিবেকানন্দ ব্যবহার করলেন জাত-পাত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষকে সমবেত করতে। তিনি শূদ্র-শাসনের তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন। …তার সময়ে কেরালার বল্গাহীন জাত-পাত ভিত্তিক শোষণের চেহারা দেখে তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন, এই দেশ প্রকৃতই এক উন্মাদাগার। তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অর্থাৎ সার্বিক সাম্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই হল নাম্বুদিরিপাদের চোখে বিবেকানন্দ।

বিবেকানন্দকে নিয়ে বাংলার কমিউনিস্ট নেতা বিনয় চৌধুরীর মত, ‘বিবেকানন্দের মধ্যে এমন সমস্ত চিন্তাধারা ছিল যা সাম্যবাদীদের সঙ্গে অনেকাংশে মিলে যায়। বিনয় চৌধুরী লিখছেন. ‘তাঁর যে উক্তি আমাকে এখনও শিহরিত করে- তিনি যখন বলেন, অভিজাত মানুষদের উদ্দেশে- তোমরা শূন্যে বিলীন হও, নতুন ভারত বেরুক, বেরুক চাষার কুটির ভেদ করে, জেলে, মালো, মুচি, মেথরের ঝুপড়ির মধ্যে থেকে’। এই যে ঝুপড়ির মধ্যে থেকে নতুন ভারত বেরবে, বিবেকানন্দের এই স্বপ্ন এখনও সফল হয়নি। কিন্তু, মনে রাখতে হবে, চিরকাল মনে রাখতে হবে, এই বিবেকানন্দ, হিন্দুত্ববাদীদের বিবেকানন্দ নয়। এই বিবেকানন্দ সমাজ পরিবর্তনের বিবেকানন্দ, মানবিক সমাজ গড়ার বিবেকানন্দ।

যদিও এটাও ঠিক, বিনয় চৌধুরী ব্যতিক্রম। বিবেকানন্দকে বাংলার কমিউনিস্টরা কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, এড়িয়ে চলেছেন। সেভাবে আলোচনার মধ্যেই আনেননি। তাতে ক্ষতি হয়েছে। বিবেকানন্দের দখল নিয়েছে সঙ্কীর্ণ হিন্দুত্ববাদীরা। আজকের তরুণদের সামনে সমাজতন্ত্রের মডেল হিসেবে উত্তরকোরিয়া বা চিনকে তুলে ধরলে তারা কখনই তাকে আদর্শ সমাজ বলে মানতে চাইবে না। আজকের ইন্টেরনেট, ডিজিটাল লাইব্রেরির যুগে চিনের একনায়কতন্ত্রী-সমাজতন্ত্রের অন্ধকারমাখা ছবি আর চেপে রাখা যায় না। ফলে এইসব তথাকথিত সমাজতন্ত্র নতুন যুগের মানুষদের চোখে আর কোনও স্বপ্ন তৈরি করে না। যদিও সাম্যের আদর্শের প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীতা সারা বিশ্বেই বাড়ছে। বামপন্থীদের এবং সমাজতন্ত্রের সংকটের অনেক কারণের মধ্যে এটা অন্যতম। কিন্তু ভারতে বিবেকানন্দের জনপ্রিয়তা ম্লান হয়নি এখনও এত বছর পরেও। বামপন্থীদের এর উত্তর খূঁজতে হবে।

একটা কথা স্পষ্ট করে বলা উচিত। বিবেকানন্দ কেন, পৃথিবীর কারও ভাবনা বা আদর্শই একশো ভাগ অনুসরণযোগ্য হয় না। সেটাই স্বাভাবিক। ধর্মে বা রাজনীতিতে কোনও একটি নির্দিষ্ট ভাবনাকে ‘ইজম’ ইত্যাদি তকমা দিয়ে, একটা দুটো তথাকথিত পবিত্র কেতাবকে সব অসুখের মহাবটিকা বলে দাবি করা একধরনের মৌলবাদী আচরণ। বিবেকানন্দের মতে ভারত ধর্মপ্রাণ দেশ। এবং তাঁর অদ্বৈত-বেদান্ত নির্ভর মানবসেবার ভাবনা বলে, ‘সর্বভূতে ঈশ্বর বিদ্যমান’। ঈশ্বর কেউ মানতে পারেন, না-ও মানতে পারেন, কিন্তু এই কথার যে মূল অর্থ, তা কিন্তু সাম্যের কথা বলে। সব মানুষ এক। সবাই সমান। বিবেকানন্দ মনে করতেন সব মানুষের মধ্যে রয়েছে অনন্ত সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাকে রূপ দেওয়ার পথ হল, উন্নতমানের শিক্ষা সবার জন্য। কারণ তাঁর মতে সবার মধ্যে ঈশ্বর আছেন। অজ্ঞানতার জন্য প্রকাশের কম-বেশি হয়। ফলে, বিবেকানন্দের মতে, যিনি নাস্তিক, ঈশ্বর মানেন না, তাঁর মধ্যেও ঈশ্বর বিদ্যমান। ফলে নাস্তিকের সঙ্গে তাঁর তর্ক থাকতে পারে, নৈতিক বিরোধ নেই।

আরও পড়ুন-চতুর্থ স্তম্ভ: মহামৃত্যুঞ্জয় যজ্ঞ

ঐতিহাসিক অমলেন্দু দে ১৯৮৮ সালে চতুরঙ্গ পত্রিকায় স্বামী বিবেকানন্দের ‘সমাজ ভাবনা’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘অদ্বৈত-বেদান্তের সূত্র ধরেই বিবেকানন্দ ভারতে “এক শ্রেণিহীন , বর্ণহীন সমাজ” গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কারা এই নতুন সমাজ গড়বেন? বিবেকানন্দের কথায়, “খাটি চরিত্র’, ‘সত্যকার জীবন’, দেবমানব’-ই পথ দেখাবেন। ‘অনন্ত প্রেম ও করুণাকে বুকে নিয়ে শত-শত বুদ্ধের আবির্ভাব প্রয়োজন’।

বুদ্ধ কেন? কারণ বুদ্ধ মানুষের কষ্টের কারণ জানতে সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন। বিবেকানন্দ যখন বলেন ‘সর্বভূতে ঈশ্বর’ তখন বাবরি মসজিদেও ঈশরের অধিষ্ঠান, তাকে ভাঙা যায় না। তার উপর হামলা করা যায় না। এইখানেই হিন্দুত্বাদীদের সঙ্গে বিবেকান্দের হিন্দু ধর্মের ফারাক। বামপন্থীরাও সর্বত্যাগী নেতা-কর্মীদের ত্যাগের মধ্যে দিয়ে সাম্যবাদে পৌঁছতে চান। বিবেকানন্দও শত-শত বুদ্ধের সাধনার মধ্যে দিয়ে শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন। লক্ষ্য এক, পথ আলাদা। এই হল, গণতন্ত্রের মর্মবস্তু, যত মত, তত পথের কথা।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২ ১৩
১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯ ২০
২১ ২২ ২৩২৪ ২৫ ২৬ ২৭
২৮ ২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর উৎকর্ষ কেন্দ্র চালু আইইএম-এর
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
রাজারামের নজরে ছিল ভিক্টোরিয়া, হাওড়া ব্রিজও, দাবি পুলিশের
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
জন্মদিনে স্মৃতিচারণায় ‘শচীন’
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
নির্বাচনী সভায় ভাষণ দেওয়ার সময় অজ্ঞান হয়ে গেলেন নীতিন গড়করি
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
দু’ দেশের পতাকা হাতে ভারত-পাক মৈত্রীর বার্তা দিলেন পাকিস্তানি অ্যাথলিট
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
বিজেপির ১০ শীর্ষ নেতা তৃণমূলে আসার অপেক্ষায়, দাবি অভিষেকের
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
দ্বিতীয় দফার আগেই রাজ্যে আরও ৫৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে মনোনয়ন জমা দিলেন দিলীপ
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
বিশ্বকাপের দলে হার্দিককে রাখলেন না বীরু
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
কেষ্ট মাটির ছেলে, আউশগ্রামের সভায় সার্টিফিকেট মমতার
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েও বিতর্কে জড়ালেন অধীর
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
দেবাংশুকে ঘিরে ‘চোর চোর’ স্লোগান
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
অন এয়ার নোংরা শব্দ বলে বসলেন সাংবাদিক!
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বরের ফরেনসিক রিপোর্ট আদালতে
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
টাকা ফেরত দিন চাকরিহারাদের, না হলে কলার ধরব: দিলীপ ঘোষ
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team