কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী হবার প্রস্তাব পেয়েও না হতে পারার বিশ্বরেকর্ড কার? সম্ভবত জ্যোতি বসুর। সাড়ে চারবার তিনি এহেন সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু একদিনের জন্যও প্রধানমন্ত্রী হননি। ‘সাড়ে’ কেন বলছি? ক্রমশপ্রকাশ্য। বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পরে ফিরে দেখা যেতে পারে সেই অদ্ভুত ইতিহাসের দিকে।
৪৫ বছর হয়ে গেল বামফ্রন্ট সরকারের প্রতিষ্ঠার। ১৯৭৭ সালের ২১ জুন প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। এই সাড়ে চার দশকে গঙ্গা তিস্তা দিয়ে কত জলই না গড়িয়ে গেছে। ভালোর তুলনায় ভালো না লাগার পরিণতিতে রাজ্যবাসী বিদায় দিয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারকে। কিন্তু বাম জমানার প্রথম কান্ডারি জ্যোতিবাবুর নানা কীর্তি থেকে গেছে অমলিন। আমাদের সাধারণ চর্চায় ১৯৯৬ সালের ঘটনা ও জ্যোতি বসুর ‘ঐতিহাসিক ভুল’ মন্তব্য বারবার সামনে এলেও আরও অনেক বার দেশের কান্ডারি হবার সুযোগ এসেছিল তাঁর সামনে। ১৯৯০-এ বিজেপি নেতা আদবানী রামমন্দির রথযাত্রা শুরু করেন, দেশ জুড়ে দাঙ্গা শুরু হয়, মাসখানেক পরে আদবানি বিহারে গ্রেফতার হন। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ-র সরকার থেকে বিজেপি সমর্থন তুলে নিলে সরকার পড়ে যায়। এহেন ডামাডোলে দেশের হাল ধরার জন্য রাজীব গান্ধি জ্যোতি বসুর কাছে প্রস্তাব পাঠান, এমনটাই জানিয়েছেন প্রাক্তন আমলা অরুণ প্রসাদ মুখোপাধ্যায়, তাঁর লেখা বইয়ে। অরুণবাবু এ রাজ্যের ডিজিপি, পরে সিবিআই-এর ডিরেক্টর, কেন্দ্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্পেশাল সেক্রেটারি, তারও পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তর উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে লেখেন, একবার নয় অল্প সময়ের ব্যবধানে দু’বার এমন প্রস্তাব করা হয়েছিল।
প্রথম ও দ্বিতীয় প্রস্তাব
১৯৯১ সালে লোকসভা ভোট চলাকালীন রাজীব গান্ধি খুন হয়ে যান। সহানুভূতির হাওয়ায় কংগ্রেস বেশ ভালো ফল করে, নরসিংহ রাও প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। পাঁচ বছর পরে ১৯৯৬-এর ভোটে কংগ্রেসের ফল খারাপ হলে আবার জ্যোতি বসুর কাছে একই প্রস্তাব আসে।
তৃতীয় ও সাড়ে-তৃতীয় প্রস্তাব
১৯৯৬ সালে শপথ নেওয়া দেবগৌড়া সরকার বেশিদিন টেকেনি। ১৯৯৭-এ আই কে গুজরাল প্রধানমন্ত্রী হন, ১৯৯৮-এর মার্চে সেটাও পড়ে যায়। সে বছর লোকসভা ভোটে বিজেপি আগের থেকে ভালো ফল করে, প্রধানমন্ত্রী হন বিজেপির অটলবিহারী বাজপেয়ি। কিন্তু ১৩ মাস পরে এআইএডিএমকে সমর্থন তুলে নিলে বাজপেয়ি সরকার পড়ে যায়। এই সময়ে, ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে তৃতীয় ফ্রন্টের দলগুলো, বিশেষ করে মুলায়ম সিংহ যাদব আবার জ্যোতি বসুর নাম উত্থাপন করেন। এবার কিন্তু সিপিএম রাজি হয়ে গেল, তবে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে কংগ্রেস এবার বেঁকে বসল। জ্যোতিবাবুর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হলো না। এর দেড় বছর পরে তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্বও ছেড়ে দেন, দিনটা ছিল ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর। বাঙালির প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে কি সেই খরা কাটবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের আসন পাবেন? উত্তরটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুটা সময়।