কলকাতা: ভোট কৌশলের পরিকল্পনায় তাঁকে দায়িত্ব দেওয়ার পর বিধানসভা ভোটে বিপুল সাফল্য এসেছিল। তাঁর কথা মতো এগিয়ে উপনির্বাচনে জয় এসেছে। আর সেই প্রশান্ত কিশোর এবং আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের একটা ফাটল যেন লক্ষ্য করা গিয়েছিল শেষ পুরভোটকে সামনে রেখে। ব্যবধানটা বাড়তে শুরু করেছিল বোধহয় ভিন রাজ্যের ভোটে তৃণমূলের পথ চলার সময় থেকে। হঠাৎই কিছু টুইট-মন্তব্য মমতা-পিকের সম্পর্কের নতুন সমীকরণকে ইঙ্গিত করছিল। আর ঠিক তখনই মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে একই ফ্রেমে ধরা দিলেন তৃণমূলনেত্রী এবং দলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা। মাঝখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুরভোটে প্রার্থী তালিকা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল এবং আইপ্যাকের মধ্যে কোথায় যেন একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। একপক্ষ দাবি করেছিল, মমতার অনুমতি ছাড়াই নিজেদের মতো করে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে আইপ্যাক। এমনকি প্রশান্ত কিশোর যেভাবে দলকে পরিচালনার কথা বলছিলেন, তাতে গোঁসা হচ্ছিল তৃণমূলপন্থী অনেক নেতারই। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত নেতারা প্রকাশ্যেই মুখ খুলছিলেন। পরিস্থিতি তীব্র হয়, যখন মমতার গলায় আইপ্যাক-পিকে সম্পর্কে ভিন্নসুর শোনা গিয়েছিল।
আইপ্যাকের সঙ্গে চুক্তি ছিল মূলত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হঠাৎই অভিষেকের সঙ্গেও যেন দলের একটা অংশের ব্যবধান চোখে পড়তে শুরু করেছিল। সাংসদ, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কিছু মন্তব্য নিয়ে জল্পনা বাড়তে শুরু করে। এমন সময় দলের সাংগঠনিক রদবদলকে কেন্দ্র করে জল্পনা আরও নতুন মাত্রা নেয়।
আরও পড়ুন: Prashant Kishor: প্রশান্ত কিশোরের ইউ-টার্ন, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে মোদি-বিরোধী জোট অসম্ভব
গোয়ায় তৃণমূলের পথচলাকে কেন্দ্র করে একটা চোরা স্রোত বইতে শুরু করেছিল কালীঘাটের অন্দরে। হঠাৎই যেন তৃণমূলের কিছু নেতার সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরদের দূরত্ব বাড়ার ইঙ্গিত মিলছিল। জল্পনা যখন বাড়ছিল, ঠিক তখনই নজরুল মঞ্চের ছবিটা সামনে এল, যে মঞ্চে একই সঙ্গে দেখা গেল অভিষেক-মমতা-প্রশান্তকে। এমনকি ভাষণ শেষে নেত্রীর সঙ্গে একান্তে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা গেল পিকেকে। যা ইঙ্গিত করে, এতদিন যা বাতাসে উড়ছিল, তা সবই জল্পনা। মমতা-তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কে কোনও ফাটল হয়নি পিকের।
সাংগাঠনিক বৈঠক শেষে অভিষেক বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে বেরিয়ে যান ডেরেক ও’ব্রায়েন ও প্রশান্ত কিশোর। অভিষেকের তড়িঘড়ি যাওয়ার কারণ বিমান ধরা। বিশেষ বিমানে আজই গোয়া যাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ফলপ্রকাশের দিন পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন তিনি। বুঝতে অসুবিধা নেই, গোয়ায় তৃণমূলের পথচলা অনেকটাই প্রশান্ত কিশোরের মস্তিষ্কপ্রসূত। প্রথম দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকবার গোয়ার প্রচারেও গিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সমস্যা চূড়ান্ত আকার নিয়েছিল পুরভোটে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সুব্রত বক্সির সই করা প্রার্থী তালিকা দলীয় ওয়েবসাইট, টুইটার হ্যান্ডেলে প্রকাশ না করাকে কেন্দ্র করে।
অবশেষে সব জল্পনার অবসান। সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমের মঞ্চে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে একই সঙ্গে দেখা প্রশান্ত কিশোরকে। যিনি মমতার সঙ্গে কথা বললেন, তাঁর পুরো বক্তব্য মন দিয়ে শুনলেন। যা বুঝিয়ে দিল, দল-নেত্রীর সঙ্গে কোনও দূরত্ব হয়নি প্রশান্ত কিশোরের। ২০২৬ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে আইপ্যাক। একই সঙ্গে বাংলার বাইরেও তৃণমূল-আইপ্যাক একসঙ্গে কাজ করবে বলে ঠিক হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রশান্ত কিশোরের বক্তব্য ঘিরে টুইটযুদ্ধ কংগ্রেস-তৃণমূলের