ঝাড়গ্রাম: ঠিক যেন উলটপুরাণ। তৃণমূলের (TMC) গোষ্ঠী কোন্দলের (Inner Clash) জেরে ঝাড়গ্রামের (Jhargram) লালগড়ের দহিজুড়ি অঞ্চলের ফুলবেড়িয়া সংসদে প্রার্থী দিতে পারল না শাসকদল। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। গ্রামবাসীদের দাবি, যাকে প্রার্থী হিসেবে ভাবা হয়েছিল, তাঁর বদলে অন্যকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। তাই গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করেন। এরপরই তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচীতে গ্রামবাসীদের ভোটে নির্বাচিত প্রার্থী নির্দল হিসেবে মনোনয়ন পেশ করেন দহিজুড়ি পঞ্চায়েতের ফুলবেড়িয়া সংসদ থেকে। পরবর্তী সময় চাপে পড়ে তৃণমূল প্রার্থী নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। আর সময়ের অভাবে গ্রামবাসীদের পছন্দের প্রার্থী প্রতীক জমা দিতে পারেননি।
স্থানীয় তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রার্থী দিতে না পারার কারণে শেষে নির্দল প্রার্থীকেই সমর্থন করছে শাসকদল। গত দুমাস ধরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘তৃণমূলের নবজোয়ার’ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। জনসংযোগ ছাড়াও এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল তৃণমূল কর্মীরা যাকে নির্বাচন করবে তাঁকেই প্রার্থী করবে শাসকদল। কিন্তু ঝাড়গ্রাম জেলায় বেশ কয়েকটি আসনে অন্যরা টিকিট পেয়েছেন বলেই অভিযোগ।
আরও পড়ুন:Jalpaiguri River Land Erosion | ভোটের মুখে জলপাইগুড়িতে বাসিন্দাদের ভাবাচ্ছে নদী ভাঙ্গন
ফুলবেড়িয়া সংসদে শাসকদলের হয়ে প্রার্থী নির্বাচন করা হয় ঝর্ণা মুর্মুকে। তবে অভিযোগ, প্রার্থী তালিকায় নেই নির্বাচিত ওই মহিলার নাম। তার বদলে রয়েছে কামিনী হেমব্রম নামে অন্য একজন। এরপরই ক্ষেপে যান তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। তাঁদের নির্বাচিত প্রার্থীকে নির্দলে দাঁড় করান। অবস্থা বেগতিক দেখে জেলা তৃণমূল আবার দলীয় প্রতীকে দাঁড়ানো প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করায়। এবং নির্দল প্রার্থী ঝর্ণাকে প্রতীক দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এরপরও কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। যেহেতু ওই প্রার্থী নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা করেন ফলে এই স্থানে এবার ভোটে লড়বে বিজেপি ও নির্দল।
তবে গোষ্ঠী কোন্দলের বিষয়ে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অস্বীকার করে বলেন, “প্রার্থী ছিল। আমরা দুজনের নাম পাঠিয়েছিলাম ব্লক সভাপতিকে। একজনকে নির্দল করে দেওয়া হয়। সেই কারণে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এর মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব নেই।” এই পরিস্থিতিতে বিজেপির দাবি, ‘গোষ্ঠীকোন্দলের জন্যই প্রার্থী দিতে পারেনি তৃণমূল। ফলে এই আসনে জেতার ব্যাপারে আশাবাদী বিজেপি প্রার্থী।’
অপরদিকে ঝাড়গ্রাম শহরের এক কিলোমিটার দূরেই জোড়াখালি সংসদে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি। রাধানগর পঞ্চায়েতের জোড়াখালি সংসদে প্রার্থী দেয়নি প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও। ফলে ব্যাপারটা বেশ গুরুতর। তিনজন প্রার্থীই নির্দল। এলাকাটি কুড়মি মাহাত অধ্যুষিত। তাই কুড়মি ভোটের লক্ষ্যে নাকি পরাজয়ের ভয়ে এই সিদ্ধান্ত? দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গলমহলে কুড়মি-মাহাতদের আন্দোলন চলছে। নিজেদের দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীদের একাংশ এবার পঞ্চায়েত ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে অনেক জায়গাতেই কুড়মি সম্প্রদায়ের লোকজন নির্দল হয়ে মনোনয়ন জমা করেছেন। রাধানগর পঞ্চায়েতের জোড়াখালিতেও মাহাত সম্প্রদায়ের তিনজন নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। ফলে ভোটের অঙ্ক জটিল। তবে কুড়মি-মাহাতদের তরফে একজন প্রার্থী জেতার ব্যাপারে ১০০ শতাংশ আশাবাদী।