কলকাতা: রাজ্যের পুরভোটকে কেন্দ্র করেও ফের একবার রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত বেধে গেল। রাজ্য সরকারের একাধিক বিল এর আগে সই না-করে ফিরিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। পুর নির্বাচনের আগে হাওড়া পুরসভাকে দ্বিখণ্ডিত করে বালিকে আলাদা করতে রাজ্য যে সংশোধনী বিলটি আনে, তা-ও সই না-করে ঝুলিয়ে রেখেছেন রাজ্যপাল। মঙ্গলবার রাজ্য নির্বাচন আধিকারিক সৌরভ দাসকে জগদীপ ধনখড় রাজভবনে ডাকায়, রাজনৈতিক মহলের অনেকেই আশা করেছিলেন তিনি হয়তো বিলটিতে সই করবেন। তার আগে আলোচনা করতেই রাজ্য নির্বাচন আধিকারিককে ডাকা হয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। উলটে একঘণ্টা ধরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তার ভূমিকা বুঝিয়ে দিয়েছেন ধনখড়। পুর বিলটি আটকে যাওয়ায় এদিন কলকাতা ও হাওড়া পুরসভার নির্বাচন নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে পারেনি কমিশন। রাজ্যপাল বিলে সই না-করায়, হাওড়া পুরভোট করানো নিয়ে সমস্যায় পড়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
এ ভাবে ফের বিল আটকে রেখে দুই পুরসভায় ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করায়, ফের রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত অনিবার্য। বিশেষত, রাজ্যপালের এদিনের টুইটের পর। রাজ্য নির্বাচন আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকের পরেই টুইটটি করেন রাজ্যপাল। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিছু না-বললেও রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিয়ে টুইটিতে তাঁকে ট্যাগ করা হয়েছে। কী বলেছেন রাজ্যপাল?
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা মনে করিয়ে দিয়ে জগদীপ ধনখড় লিখেছেন, নিরপেক্ষ, স্বাধীন ভাবে কাজ করতে হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারের অধীন নয়। রাজ্য সরকারের আইনে রাজ্য নির্বাচন কমিশন গঠন হয়নি। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মতোই ক্ষমতা রয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। ফলে কমিশনকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। শুধু টুইটেই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি। একই বক্তব্য জানিয়ে কড়া চিঠিও দিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে রাজ্যপালের প্রশ্ন তোলার কারণ পুরভোট। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া সবক’টি বিরোধী রাজনৈতিক দল একদিনে পুরভোট চাইছে। সর্বদল বৈঠকেও সেই দাবি পেশ করা হয়েছে। এমনকী বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টেও গিয়েছে বিজেপি। উচ্চ আদালতে শুনানি চলছে। সেখানে রাজ্যের বক্তব্য শোনার পাশাপাশি কমিশনের মতামতও শুনেছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত বীরভূমের দুবরাজপুর, জখম ৬
রাজ্য সরকারের তরফে স্পষ্টতই জানানো হয়েছে, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পথ অনুসরণ করে তারা কয়েক দফায় পুরভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘটনা হল, বিরোধী– বিশেষত বিজেপির প্রবল চাপেই অতিমারির আবহে আট দফায় একুশের বিধানসভা ভোট করিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কোভিডের কারণে সেসময় রাজ্যের শাসকদল ভোটগ্রহণের দিন কমাতে বললেও তাতে কান দেয়নি জাতীয় নির্বাচন কমিশন। শাসক নেতৃত্বের প্রশ্ন, তা হলে এখন কেন একদিনে পুরভোট চাইছে বিরোধীরা? তখনও বিরোধীদের পাশে ছিলেন, এখনও বিরোধীদের পক্ষে রাজ্যপাল। ফলে পুরভোট নিয়েও রাজ্যের সঙ্গে বিরোধের পথেই গেলেন জগদীপ ধনখড়। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে কড়া চিঠি দিয়ে লিখেছেন, ‘রাজ্যের পদাঙ্কা অনুসরণ করেছে কমিশন। আমার কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আছে।’
আরও পড়ুন-অপ্রতুল ইভিএমের কারণেই একসঙ্গে পুরভোট সম্ভব নয়, হাইকোর্টে জানাল কমিশন
এর পরেও যে কিন্তুর জায়গাটা, রাজ্য রাজি হলেও রাজ্য নির্বাচন কমিশন কি পারবে একসঙ্গে ১১২ পুরসভার ভোট করাতে? হাইকোর্টে রাজ্য নির্বাচন কমিশন হলফনামা দিয়ে কিন্তু অপারগতার কথাই জানিয়েছে। কমিশনের দাবি অনুযায়ী, রাজ্যে ১১২ পুরসভায় একদিনে নির্বাচন করাতে ৩০ হাজার ১৭৩ ইভিএম প্রয়োজন। অথচ নির্বাচন কমিশনের হাতে রয়েছে ১৫ হাজার ৬৮৭ ইভিএম। এমত অবস্থায় হাইকোর্টের রায় গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
আরও পড়ুন – স্বাস্থ্য সাথী নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে হলফনামা চাইল হাই কোর্ট
রাজ্যপালের টুইট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও টুইট করেননি। তৃণমূলের তরফে তাপস রায় বলেন, ‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা রয়েছে। রাজ্যপাল সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।’ রাজ্য-রাজ্যপালের এই সংঘাতের জল এখন কদ্দূর গড়ায়, সেটাই এখন দেখার।