শিলিগুড়ি: দলের তরফ থেকে আগে স্পষ্ট করা হয়েছিল। আর এবার স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) স্পষ্ট করে দিলেন, সিবিআই (CBI) বিজেপির (BJP) হয়ে কাজ করলে পথে নেমে আন্দোলন করা হবে। রবিবার ফাঁসিদেওয়ায় এক সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মমতা বলেন, বীরভূমের রামপুরহাটে (Rampurhat Violence) সিবিআই তদন্তে করছে। আমরা সিবিআইকে সবরকম সাহায্য করব। কিন্তু যদি সিবিআই ঠিকমত কাজ না করে, বিজেপির হাত শক্ত করার চেষ্টা করে, তাহলে তৃণমূল রাস্তায় নেমে আন্দোলন করব। শিলিগুড়ির সভা থেকে মমতার স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, সিট গঠন করে তদন্ত ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল। কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা অবশ্যই ঘটেছিল। এটা বড় ষড়যন্ত্র। এর আগেও একাধিক মামলায় সিবিআই নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। সিবিআই বিজেপির হয়ে কাজ করলে বড়সড় আন্দোলন হবে।
এদিন মমতা উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গও তুলে আনেন। বলেন, হাথরস, উন্নাও, লখিমপুরের ঘটনা আপনাদের মনে আছে? তাঁর প্রশ্ন, সেখানে খুন হয়েছিল। গণধর্ষণের পরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে সিবিআই যায়নি কেন? অসম-দিল্লির ঘটনায় সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়নি কেন? মমতার কটাক্ষ, এর আগে শান্তিনিকেতনে নোবেল চুরির ঘটনায় সিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এখনও নোবেন ফিরিয়ে আনতে পারেনি। সিবিআই একের পর এক ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছে। কোনওটাতেই সফল হয়নি। সিবিআইয়ের পুরোটাও বিজেপির হাত ধরে কাজ করছে, মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর।
এদিন রামপুরহাটের ঘটনাকে সামনে রেখে মমতা বলেন, সেদিন পুলিসের ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই। সিট গঠন করা হয়। পুলিসের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যে তৃণমূলের নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগে উঠেছে, তাঁকে গ্রেফতারও করে্ছে পুলিস। তদন্ত ঠিক পথেই এগোচ্ছিল বলে দাবি করে মমতার মন্তব্য, সেদিন যিনি খুন হন, তিনি তৃণমূলের কর্মী। যার বাড়িতে আগুন লাগে, তিনিও তৃণমূলের সদস্য। তদন্ত করছে তৃণমূল সরকার। আর কিছু লোক বদনাম করার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: মে-জুনে জিটিএ নির্বাচন, পাহাড়েও পাট্টা: মমতা
বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমকে একযোগে কাঠগড়ায় তুলে তৃণমূলনেত্রীর মন্তব্য, বাংলাকে বদনাম করতে উঠেপড়ে লেগেছেন কিছু নেতা-রাজনৈতিক দল। এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। বলেছেন, কিছু সংবাদমাধ্যম রাজ্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে বদনাম করার চেষ্টা করে চলেছে। বাংলায় একের পর এক উন্নয়মূলক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, গোটা বিশ্বে এত জনকল্যাণমূলক কাজ হয়নি, যা বাংলায় হয়েছে। কী করে বাংলার মানুষ উপকৃত হবেন, তা ভাবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে-উদ্যোগ এইসব নেতাদের মধ্যে দেখা যায় না। উল্টে তাঁরা পথ খোঁজেন, কীভাবে বাংলাকে বদনাম করা যাবে।
এদিন প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে নিজের চিন্তাভাবনা তুলে ধরতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের ভুমিকার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাকে বদনাম করুন, কিন্তু বাংলার বদনাম করবেন না। রামপুরহাটের ঘটনাকে সামনে রেখে মমতা বলেন, সেদিনের ঘটনা নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। অনেকের ক্ষতি হয়েছে। সিট দ্রুত তদন্তে নেমেছিল। রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করেছে। এর পরেই তাঁর প্রশ্ন, ভিন রাজ্যে বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে একের পর এক হত্যালীলা চলছে। বিজেপি-কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে কাজের সন্ধানে যান অনেকে। তাঁদের নিথর দেহ ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। এর উত্তর কী কংগ্রেস-বিজেপি দিতে পারবে, প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার কথায়, যখন ভিন রাজ্যে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার হয়, তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন কেউ তোলার সাহস পায় না। হাথরস, উন্নাও, অসমে তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধি দল গিয়েছিল, তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দিল্লি থেকে ১০০-র বেশি নেতা এসেছেন বাংলায় ঢোকার জন্য। সকলের উদ্দেশ্য একটাই, বাংলার বদনাম করা। মমতার চ্যালেঞ্জ, বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করবেন না। লড়াই করছি, করব, আগামী দিনেও বাংলার জন্য লড়াই করব।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: গন্ডগোলের আভাস পেলেই পুলিসকে জানান: মমতা