কলকাতা: ২০১৫ সালে প্রথমবারের জন্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বেই ১৮টি আসন পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। এই সাফল্যে ভর করে ২০২০-তে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় দ্বিতীয়বারের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। বাংলা জয়ের লক্ষ্যে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর ওপরই আস্থা রেখেছিলেন মোদি-শাহ। তবে ম্যাজিক ফিগার দূর, মাত্র ৭৭-এই থামতে হয় বিজেপিকে (BJP)। এর পর থেকেই রাজ্য বিজেপিতে ডামাডোল শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজ্য বিজেপিতে ডামাডোল, ছুটি কাটাতে ভূস্বর্গে দিলীপ
মুকুল রায়ের (Mukul Roy) মতো শীর্ষ নেতা দল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। দলে থাকলেও সৌমিত্র খাঁ, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত, বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo), চন্দ্র বসু, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা নিয়ম করে বেসুরো গাইছেন। সপ্তাহ দু’য়েক আগে বিজেপির যুব মোর্চার পদ থেকে ইস্তফাও দেন সৌমিত্র খাঁ। পরে অবশ্য ইস্তফা প্রত্যাহার করেন। বাবুল-দিলীপ দ্বন্দ্বও নতুন করে প্রকাশ্যে আসে। মন্ত্রিত্ব হারানোর পর বিজেপির উপর সোশাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাবুল। প্রকাশ্যেই তাঁর সমালোচনা করেন দিলীপ ঘোষ।
দলের ডামাডোলের মধ্যেই দিল্লি গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক করেন দিলীপ ঘোষ। এই অবধি সব ঠিকঠাকই ছিল। তবে আচমকা তাল কাটে দিলীপের একটি ফেসবুক পোস্টে। সূর্যাস্তের ছবি পোস্ট করেন তিনি। সঙ্গে ক্যাপশন, ‘কখনও কখনও সূর্যাস্ত উপভোগ করা উচিত। কারণ সূর্য অস্ত যাওয়া মানেই নতুন ভোর আসছে।’ এই সূর্যাস্ত আসলে কীসের ইঙ্গিত তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় জল্পনা। গেরুয়া শিবিরে জোর জল্পনা, দিলীপ কি রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়ছেন মানে অস্তে যাচ্ছেন?
আরও পড়ুন: দূর্গাপুর হাইওয়েতে সূর্যাস্ত ফ্রেমবন্দী করলেন দিলীপ
ফেসবুকে সূর্যাস্তের ছবি পোস্টের কয়েকদিনের মাথায় ‘লম্বা ছুটি কাটাতে যাচ্ছি’ বলে দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন দিলীপবাবু। সেখান থেকে জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখে ঘুরতে যান মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ। সেই সময় দলের কাজে ‘অতি সক্রিয়’ ভূমিকায় দেখা যায় শুভেন্দুকে। দিলীপ যখন ভূস্বর্গে ধ্যানে মগ্ন, তখন শুভেন্দুর এই ভূমিকা নিয়েও জল্পনা ছড়ায়।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দিলীপবাবুর সম্পর্কের কথাও সর্বজনবিদিত। নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন হাসিমুখে দু’জনে ছবি তুললেও ভোটের ফল বেরোনের পরই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দিলীপের ঠান্ডা লড়াই প্রকাশ্যে এসেছে। ফল ঘোষণার পর দিলীপের ডাকা প্রথম বৈঠক এড়িয়ে দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন শুভেন্দু। পরেও আরেকবার দিল্লি গিয়ে শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন শুভেন্দু। দু’টি বৈঠক নিয়েই দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ অন্ধকারে ছিলেন।
আরও পড়ুন: বর্ধমানে দিলীপ ঘোষের সামনেই দলীয় কর্মীর বিক্ষোভ
এই পরিস্থিতিতে ২০২১-এ রাজ্য সভাপতি পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে দিলীপবাবুর। বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, তাঁর পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। তাই চলতি বছর শেষের আগেই গদি ছাড়তে হবে দিলীপকে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি হিসেবে দিলীপবাবুর পারফম্যান্সে যে বিজেপির হাইকম্যান্ড খুব খুশি তাও বলা যাবে না। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে দিলীপের নেতৃত্বে বিজেপি ১৮টি আসন পেলেও, ২১-এর বিধানসভায় ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির।
মনে করা হয়েছিল, মন্ত্রিসভার রদবদলে দিলীপবাবুকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু বাংলা থেকে ৪ সাংসদকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হলেও মোদির নতুন ক্যাবিনেটে জায়গা হয়নি তাঁর।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে তীর্থে গিয়ে ধ্যানমগ্ন দিলীপ, মন পড়ে কলকাতায় পুলিশের ‘লাঠি’তে
সূত্রের খবর, দিলীপবাবুর জায়গায় দায়িত্ব পেতে পারেন রায়গঞ্জের সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। সে কারণেই তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার আগে দেবশ্রী ছিলেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক। দেবশ্রী আরএসএসের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য সভাপতির দৌড়ে তিনি বাকিদের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে। এখন প্রশ্ন একটাই, দিলীপকে তবে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে? গেরুয়া শিবিরে লাখ টাকার প্রশ্ন এখন এটাই।