কলকাতা: ‘লম্বা ছুটি কাটাতে যাচ্ছি।’ কলকাতা বিমানবন্দর থেকে দিল্লি যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে এ কথা বলেছিলেন বিজেপির (BJP) রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। রাজ্য বিজেপিতে যখন ডামাডোল, যখন একাধিক নেতা বেসুরো, সেই সময় দিলীপ ঘোষ ছুটিতে কেন? রাজনৈতিক মহলে এখন চর্চার বিষয় এটাই।
দিনকয়েক আগে জেপি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করে ‘বিদ্রোহী’দের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তারপরেই আচমকা ‘ছুটি’তে যাওয়ায় রাজনৈতিক মহলে জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। সংগঠনের কাজে সদা ব্যস্ত দিলীপের ছুটি প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘দিলীপবাবু লাদাখ এবং কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছেন। একেবারে ব্যক্তিগত সফর।’
‘ব্যক্তিগত’ সফরে অবশ্য কয়েকজন কার্যকর্তাকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন দিলীপবাবু। এ প্রসঙ্গে তিনি আগেই বলেছেন, ‘৫ দিনের জন্য ছুটিতে কাশ্মীর যাচ্ছি। কোনও কাজে যাচ্ছি না। বেড়াতে যাচ্ছি আমি। ১৯ জুলাই দিল্লিতে ফের সংসদের অধিবেশনে যোগ দেব।’ বুধবার তিনি লাদাখ যান। সেখান থেকে কাশ্মীর ঘুরে দিল্লিতে লোকসভার অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর।
মঙ্গলবার দিলীপবাবুর একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় পড়ে যায়। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে সূর্যাস্তের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। সঙ্গে লেখেন, ‘কখনও কখনও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে হয়। কারণ সূর্যাস্ত হলেই নতুন ভোর দেখা যায়।’
Sometimes it is important to cherish the sunset because it is only when the sun sets that we see a new dawn.
-From Durgapur Expressway. pic.twitter.com/H49pCYlAoU
— Dilip Ghosh (Modi Ka Parivar) (@DilipGhoshBJP) July 13, 2021
মঙ্গলবার ইঙ্গিতবহ ফেসবুক পোস্ট, বুধবার ছুটি কাটাতে যাওয়া-এ দুইয়ের মধ্যেও যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। নেটাগরিকরা একধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘সূর্যের মতন দিলীপ দাও এবার অস্ত যাচ্ছে’। রাজ্য বিজেপিতে শুভেন্দুর উত্থানের পর দিলীপের গদি কিছুটা হলেও টলমল, এমনটাই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে দিলীপের নেতৃত্বে বিজেপি ১৮ আসন পেলেও, ২১-এর বিধানসভায় ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। রাজ্য সভাপতি পদে দিলীপবাবুর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২২-এই। মনে করা হয়েছিল, দিলীপকে মন্ত্রী করে বঙ্গ বিজেপির ব্যাটন অন্য কারও হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষকে মন্ত্রী করা হয়নি।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি হিসেবে তাঁর পারফম্যান্সে যে বিজেপির হাইকম্যান্ড খুব খুশি তাও বলা যাবে না। ভোট মিটতেই বহু নেতা কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অনেকে দলে থাকলেও তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। সৌমিত্র খাঁ, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত, চন্দ্র বসু, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দলে থেকেও দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।
মন্ত্রিত্ব হারানোর পর বিজেপির উপর সোশাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়ো। প্রকাশ্যেই তাঁর সমালোচনা করেছিলেন দিলীপ ঘোষ। দলের এই টানাপোড়েনের মধ্যেই সোমবার দিল্লিতে জেপি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক করেছেন দিলীপ ঘোষ। বৈঠকে বেসুরোদের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি।
দিলীপবাবু কলকাতা বিমানবন্দর থেকে রওনা হওয়ার সময় বলেন, দলে যাঁরা বিশৃঙ্খলা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি দিল্লিতে বলেছি। দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি যা করার করবে। তিনি এও বলেন, দলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত খুব শীঘ্রই নেওয়া হবে। সেটা আপনারাও জানতে পারবেন। বঙ্গে ডামাডোল থামাতে কী সিদ্ধান্ত নেয় গেরুয়া শিবির, সেটাই এখন দেখার।