নয়াদিল্লি: তৃণমূলে যোগদান করেই বাবুল সুপ্রিয় জানিয়েছিলেন, বিজেপির টিকিটে জেতা লোকসভার সাংসদ পদ ছেড়ে দেবেন। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে জানান, বুধবার দিল্লি যাচ্ছেন। স্পিকারের কাছে সময় চেয়েছেন। স্পিকার ওম বিড়লা তাঁকে সময় দিলেই ইস্তফাপত্র তুলে দেবেন। সেইমতো আজ দিল্লি যাচ্ছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তবে স্পিকার তাঁকে সময় দিয়েছেন কি না তা এখনও জানা যায়নি।
সাংসদ পদ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপির কটাক্ষ শুনতে হয়েছে বাবুলকে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আসানসোলের সাংসদকে বলেছেন, সাংসদ পদ ছেড়ে দলবদল করলে বেশি খুশি হতাম। বাবুল অবশ্য তৃণমূলে যোগ দিয়েই জানিয়ে দিয়েছিলেন, দ্রুত সাংসদ পদ ছেড়ে দেবেন তিনি। দিদির প্রথম একাদশে থাকার লক্ষ্য নিয়ে তৃণমূলে আশা বাবুলের কাছে সাংসদ পদ খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, এমনটাই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। বাবুলের দ্রুত পদত্যাগের পিছনে অন্য রহস্য রয়েছে।
আরও পড়ুন: বিজেপিতে বাবুল এফেক্ট? সাংসদ-বিধায়ক ভাঙিয়ে দলকে শেষ করা যাবে না, বলছেন নতুন সভাপতি
তৃণমূল সূত্রের খবর, বাবুল সাংসদ থেকে ইস্তফা দিলেই কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী এবং তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর সাংসদ পদ খারিজে চাপ বাড়াবে দল। কাঁথি এবং তমলুকের দুই সাংসদ এ বার লোকসভার বাদল অধিবেশনে যোগ দেননি। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে তাঁদের গতিবিধি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে বিজেপি সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছিলেন তাঁরা। কাঁথিতে অমিত শাহের সভামঞ্চে শিশিরকে দেখা গিয়েছিল। আবার হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর একটি সরকারি কর্মসূচির মঞ্চে হাজির ছিলেন দিব্যেন্দু।
অমিতের সভায় যোগদানের ছবি দেখিয়ে শিশিরের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই লোকসভার স্পিকারকে চিঠি লিখেছে তৃণমূল। দিব্যেন্দুর বিরুদ্ধে তেমনটা করতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল। দিব্যেন্দু অবশ্য বিজেপি ঘনিষ্ঠতার কথা মানতে চাননি। তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘আমি এবং বাবা (শিশির)— দু’জনেই তৃণমূলে আছি। অন্য কোনও দলে যাইনি। যাওয়ার প্রশ্নও নেই।’
আরও পড়ুন: মুসলিমবিদ্বেষী বাবুলকে আক্রমণ সুমনের, নিশানায় নচিকেতা-শ্রীজাতও
এবার প্রশ্ন হল, আগামীকে কী ভূমিকায় দেখা যাবে বাবুলকে দু’বারের বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর যে লোকসভা-রাজ্যসভার সাংসদ পদের প্রতি খুব একটা মোহ নেই, তা সাংবাদিক বৈঠকেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, পুজোর পরই বাকি চারটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে কোনও একটি আসন থেকে বাবুলকে প্রার্থী করা হতে পারে। জিতলে হয়তো মমতার মন্ত্রিসভায় তাঁকে ঠাঁই দেওয়া হবে।
গেরুয়া শিবিরের হাত ধরে ২০১৪ সালে প্রথম রাজনীতিতে প্রবেশ করেন বাবুল৷ সেই বছরই তাঁকে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করে বিজেপি৷ ভোটের প্রচারে আসানসোলে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘মুঝে বাবুল চাহিয়ে৷’ মোদির কথা রাখেন আসানসোলবাসী৷ বিপুল ভোটে জিতিয়ে বাবুলকে সংসদে পাঠান ভোটাররা৷ ওই বছর রাজ্য থেকে দু’জন সাংসদ পায় বিজেপি৷ দু’জনকেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেন মোদি৷
আরও পড়ুন: বিজেপিতে ‘বেসুরো’ বাবুল, দিদির আশ্বাসে প্রাণ ঢেলে গাইতে চাইছেন তৃণমূলে
এর পর ২০১৯ সালে সেই আসানসোল কেন্দ্র থেকে পুনরায় ভোটে দাঁড়ান বাবুল৷ ফের জিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন৷ তবে একুশের ভোটে বিপর্যয় সব ওলট-পালট করে দেয়৷ টালিগঞ্জ কেন্দ্রে অরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ালেও জিততে পারেননি। তার পর বাবুলের মন্ত্রিত্বও কেড়ে নেওয়া হয়।