ওয়েবডেস্ক- বিমান দুর্ঘটনায় (Plane crash) অতি গুরুত্বপূর্ণ উড়ানে থাকা ব্ল্যাক বক্স (Black Box)। যেকোনও বিমান দুর্ঘটনায় এটির অবদান অন্যতম। কারণ এই ব্ল্যাক বক্সের মাধ্যমেই জানা যায় দুর্ঘটনার আসল কারণ। কাজেই তদন্তকারিদের কাছে এই ব্ল্যাক বক্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্ল্যাক বক্স হল এক কথায় ‘ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার’ (Flight Data Recorder) । নিরাপত্তার স্বার্থে এই ব্ল্যাক বক্স বিমানে পিছনের দিকে রাখা হয়। এটি টাইটানিয়াম ধাতু দিয়ে গড়া।
প্রতিটি বিমানেই একটি করে ব্ল্যাক বক্স থাকে। এটি এমন শক্ত ধাতব পদার্থ যা প্রচণ্ড উত্তাপ, ভাঙচুর, জল ও প্রচণ্ড চাপের মধ্যেই অক্ষত থাকে। ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে। স্টেইনলেস স্টীল বা টাইটেনিয়ামের খোলস দিয়ে বাক্সের আবরণ তৈরি করা হয়। টিকে থাকার অনেকগুলো পরীক্ষায় পাস করার পরেই এটি মর্যাদা পায়।
যেকোনও বিমান দুর্ঘটনা, ধ্বংসাবেশেষ পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেই ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে ভরসা সেই ব্ল্যাক বক্স।
আরও পড়ুন- দুর্ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল, বিমানকর্মীদের তালিকা প্রকাশ্যে
ব্ল্যাক বক্সের মধ্যে দুটি আলাদা বক্স থাকে: ১. ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার: এই বক্সে ফ্লাইটের দিকনির্দেশ, উচ্চতা, জ্বালানি, গতি, টার্বুলেন্স ও কেবিনের ভিতরের নানা তথ্য থাকে। প্রায় ২৫ ঘণ্টা ধরে 88 ধরনের বিভিন্ন ডেটা রেকর্ড করতে সক্ষম। এছাড়া হল ককপিট ভয়েস রেকর্ডার: এই বক্সটি শেষ দুঘণ্টার মধ্যে বিমানের মধ্যে ঘটে যাওয়া শব্দ রেকর্ড করে। ইঞ্জিন, ইমার্জেন্সি অ্যালার্ম, কেবিন এবং ককপিটের শব্দ রেকর্ড করে। দুর্ঘটনা ঘটার আগে বিমানের অবস্থার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়।
ককপিট ভয়েস রেকর্ডার বা সিভিআর এটিতে ককপিটের ভেতর পাইলটদের নিজেদের মধ্যের কথাবার্তা, পাইলটদের সঙ্গে বিমানের অন্য ক্রুদের কথা, ককপিটের সঙ্গে এয়ার কন্ট্রোল ট্রাফিক বা বিভিন্ন বিমান বন্দরের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগের কথা রেকর্ড হয়। দুইটি রেকর্ডার একত্রে ফ্লাইট সম্পর্কে নিখুঁত তথ্য দিতে সক্ষম, যা পরবর্তী তদন্তের কাজে লাগে। এফডিআর এবং সিভিআর একত্রে একক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
বাক্সটি উজ্জ্বল কমলা রংয়ের হওয়ায় সেটি দ্রুত খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়। সমুদ্রের তলদেশেও ৩০দিন পর্যন্ত এটি অক্ষত থাকতে পারে। ব্ল্যাক বক্সটি পাওয়ার পরেই বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে থাকা অফিসাররা বিমান সংস্থা, এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি দল তৈরি করে কাজ শুরু করেন। সেই সঙ্গে প্রযুক্তিবিদদের সমন্বয়ে তারা ব্ল্যাক বক্স থেকে তথ্য উদ্ধারের কাজটি শুরু করেন।
তবে যদি বক্সটি ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়, তাহলে উদ্ধার করতে দেরি হয়, অনেক সময় ঘটনার পর একমাসও লাগতে পারে। কারণ, বিশেষজ্ঞদের সচেতন থাকতে হয়, যাতে তথ্য উদ্ধার করতে গিয়ে কিছু মুছে না যায়।
আধুনিক ব্ল্যাক বক্সগুলোয় ২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিমানের ফ্লাইট ডাটা ধারণ করে রাখতে পারে। এর ভেতর অনেকগুলো মেমরি চিপ পাশাপাশি সাজানো থাকে।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ ধরনের যন্ত্র তৈরির প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সত্যিকারের কাজ শুরু হয় ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে। অস্ট্রেলীয় সরকারের অ্যারোনটিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে গবেষণা শুরু হয়। বিজ্ঞানী ডেভিড ওয়ারেন এটি আবিষ্কার করেন। ১৯৬২ সালের ২৩ মার্চ প্রথম অস্ট্রেলিয়ার একটি বিমানে পরীক্ষামূলক ভাবে এটির ব্যবহার করা হয়।
দেখুন আরও খবর-