খনউ: ৩ অক্টোবর লখিমপুরে গণপিটুনিতে মারা গিয়েছেন হরি ওম মিশ্র৷ পরিবার তো বটেই, গোটা দেশ জেনে গিয়েছে তাঁর মৃত্যুর খবর৷ জানেন না কেবল একজনই৷ তিনি হরি ওমের ৭০ বছর বয়সী বাবা রাধে শ্যাম মিশ্র৷
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলের গাড়ির ধাক্কায় চার কৃষকের মৃত্যু নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি৷ অথচ সেদিন আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছিল৷ কিন্তু তাঁদের মৃত্যুতে সমবেদনা জানানো দূরে থাক, কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত উল্টে বড় গলায় বলেছেন, ‘ওঁদের পিটিয়ে মেরে কেউ অন্যায় করেননি৷’ ওই চারজনের কেউ কৃষক ছিলেন না৷ দু’জন বিজেপি কর্মী, একজন স্থানীয় সাংবাদিক৷ এবং চতুর্থ জন ২৬ বছর বয়সী হরি ওম মিশ্র৷ মন্ত্রীর কনভয়ের একটি গাড়ির চালক ছিলেন তিনি৷
আরও পড়ুন: পরিবেশ-নিজেদের বাঁচাতে ৩০০ কিমি হাঁটলেন ছত্তীসগড়ের ওঁরা…
হরি ওমের মৃত্যুতে কেউ কেনই বা দুঃখপ্রকাশ করবেন! কৃষকদের চোখে তিনি তো ‘ভিলেন’৷ কিন্তু একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে হারিয়ে পরিবার দিশাহীন৷ লখিমপুরের ওই দুর্ঘটনাস্থল থেকে হরি ওমের বাড়ি ১০০ কিমি দূরে৷ সেখানেই থাকেন তাঁর বাবা, মা, ছোট ভাই এবং এক বোন৷ হরি ওমের আরও দুই বোন আছে৷ তাঁদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে৷ এঁরা সকলেই জানেন হরি আরও কখনও বাড়ি ফিরবে না৷ জানেন না শুধু বাবা৷ তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ৷ তাই তাঁকে জানানো হয়নি৷ হরি ওমের অবিবাহিত বোন মাহেসুরি দেবী বলেন, ‘ভাইয়া নেই বাবা সেটা জানেন না৷ তিনি মানসিক রোগী৷ শরীরেও কোনও জোর নেই৷ কারও সাহায্য ছাড়া নড়তে-চড়তেও পারেন না৷’
গত ৩ অক্টোবর গাড়ি নিয়ে হরি ওম যাচ্ছিলেন একটি অনুষ্ঠানে৷ সেখানে কুস্তির আয়োজন করা হয়েছিল৷ হরি ওমের ছোট ভাই শ্রীরামের বিবৃতি অনুযায়ী, বনভীরপুরের ওই দঙ্গলের প্রধান অতিথি ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব মৌর্য৷ তাঁকে আনতে গিয়েছিলেন হরি৷ লখিমপুরে হিংসার খবর তাঁরা টিভি দেখে জানতে পারেন৷ অনেকবার চেষ্টা করেন হরি ওমের সঙ্গে যোগাযোগ করার৷ কিন্তু ফোন সুইচড অফ ছিল৷
আরও পড়ুন: মৃত ব্যক্তির মোবাইল ফোন চুরি করে সাসপেন্ড পুলিশ কর্মী
অনেকক্ষণ পর দাদার মৃত্যুর খবর পান ভাই-বোন৷ টিভি দেখেই সেটা জানতে পারেন৷ খবর শুনেই ভেঙে পড়েন তাঁরা৷ বাড়ির মধ্যে একমাত্র হরিই রোজগার করত৷ মাইনে ছিল ১২ হাজার টাকা৷ কিন্তু বাবার চিকিৎসার জন্য কখনও কখনও দশ হাজার টাকাও খরচ হয়ে যেত৷ তবুও ওই টাকা জমিয়ে দুই বোনের বিয়ে দিয়েছে৷ বাবার চিকিৎসার জন্য টাকা জমিয়েছিলেন৷ ছেলের মৃত্যুর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মা নিশা দেবী৷ বলেন, বেরনোর সময় বলেছিল দঙ্গল থেকে সোজা বাড়ি ফিরবে৷ তার পর বাবাকে ডাক্তার দেখাতে লখনউ নিয়ে যাবে৷ কিন্তু দঙ্গল থেকে আর ঘরে ফেরা হল না ছেলের৷