লখনউ: ভোটপূর্ব সমীক্ষা রিপোর্ট উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে এগিয়ে রাখলেও, গোবলয়ের বাস্তবিক ছবিটা কিন্তু একেবারেই সরল সমীকরণ নয়। প্রথম দফায় ভোট শুরু হতে হতে আরও প্রায় একমাস। কিন্তু তার আগে রাজনৈতিক সমীকরণটা সিঁড়িভাঙা অঙ্কের মতো ধাপে ধাপে বদলাতে শুরু করেছে। গোবলয়ে পরিবর্তনের পালে যে হাওয়া লেগেছে, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব তা আগেই টের পেয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে রাজ্যে নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে তীব্র অসন্তোষও রয়েছে। কিন্তু ঘরশত্রু বিভীষণের মতো দলেরই মন্ত্রী-বিধায়করা গেরুয়া শিবির ছেড়ে বিরোধীপক্ষ অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টিতে গিয়ে ভিড়বেন, সে ইঙ্গিত মোদি-শাহ তো দূর অস্ত, উত্তরপ্রদেশ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বও কি টের পেয়েছিলেন?
বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশে দলের এই ভাঙনে রীতিমতো চাপে বিজেপি। প্রথম দফার নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা অফিশিয়ালি ঘোষণা হওয়ার আগেই ‘বিদ্রোহী বিধায়ক’-এর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, প্রভাবশালী দলিত নেতা স্বামী প্রসাদ মৌর্য নিজে ইস্তফা দিয়ে গেরুয়া শিবিরে আক্ষরিক অর্থেই ধস ধরিয়ে দিয়েছেন। মৌর্য একা বিজেপি ছাড়েননি, অনুগত নেতা-কর্মীদের নিয়েই অখিলেশ যাদবের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।
বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিনের শুরুটা করেছিলেন স্বামী প্রসাদ মৌর্য। দিনের শেষে কিন্তু চার উইকেট খুইয়েছে বিজেপি। মৌর্য ছাড়াও আরও তিন বিজেপি বিধায়ক ব্রিজেশ প্রজাপতি, ভগবতী সাগর, রোশনলাল ভার্মা দল ছেড়েছেন।
আরও পড়ুন: Swami Prasad Maurya: উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগেই ঘর ভাঙল বিজেপির, ইস্তফা দিলেন স্বামী প্রসাদ মৌর্য
বিধায়ক ব্রিজেশ প্রজাপতি স্বামী প্রসাদ মৌর্যের অনুগামী হিসেবই পরিচিত। বিজেপির সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার চিঠিতে স্বামী প্রসাদ মৌর্যকে ‘আমাদের নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করেন ব্রিজেশ প্রজাপতি।
বিজেপিতে ভাঙন নিয়ে একটি কথাও বলেননি যোগী আদিত্যনাথ। না কোনও মন্তব্য করেছে রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব। কিন্তু, দল ছাড়ার আগে যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে বিজেপি বিধায়করা যে ভাবে কাঠগড়ায় তুলছেন, তা যোগী শুধু নয়, উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের জন্য আদৌ ভালো বিজ্ঞাপন নয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও একই কথা মনে করছেন।
এ দিন মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার সময় স্বামী প্রসাদ মৌর্য অভিযোগ করেন, দলিতদের উপেক্ষা করেছে যোগী সরকার। পিছড়েবর্গের লোকজনের জন্যও কোনও কাজ করেনি। এমনকী কর্মহীনদের কথা ভেবেও কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। একই সুরে কথা বলে, দলিত নেতা স্বামী প্রসাদ মৌর্যকে ‘আমাদের নেতা’ বলে সংহতি প্রকাশ করে বিজেপি ছেড়েছেন ব্রিজেশ। দল ছেড়ে যাওয়া ‘বিদ্রোহী বিধায়ক’দের এই ‘দলিত তাস’ উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে বিজেপিকে বিপাকে ফেলতে পারে। উলটে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির জন্য এটাই হয়ে উঠতে পারে ‘তরুপের তাস’।
এই চার বিধায়কের ইস্তফায় শেষ নয়। রাজনৈতিক মহলের খবর, বিজেপিতে আরও বড় ভাঙন অপেক্ষা করছে। সূত্রের খবর, ৭৫ থেকে ৮০ জন বর্তমান বিধায়ককে এ বার টিকিট দিতে অস্বীকার করে বিজেপি। ছ’জন বিধায়ক মৌর্যের বাড়িতে গিয়ে বৈঠকও করেছেন। পরিস্থিতি দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরপ অভিমত, আরও বিধায়ক হারাতে চলেছে বিজেপি।
উত্তরপ্রদেশের মতো হাইভোল্টেজ নির্বাচনের আগে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই বিদ্রোহীদের কী করে সামাল দেন, এখন সেটাই দেখার।