ওয়েবডেস্ক: কাশ্মীর- ভূস্বর্গ। অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁও (Pahalgam Attack)। দেশ বিদেশের পর্যটকদের (Tourists) আকর্ষণের কেন্দ্র। সবুজ উপত্যকা। বিক্ষিপ্ত বনানী। লিডার নদীর ধার। নিরালায় সবুজে শান্তির সমারোহ। মঙ্গলবারও পর্যটকরা সৈই নৈসর্গ উপভোগ করছিলেন। সঙ্গে ছিল পরিবার (Family) প্রিয়জনেরা। আচমকাই জঙ্গীদের নৃশংস বিকারে ঝাঁঝরা হয়ে যান ২৭ জন পর্যটক। পর্যটকদের আনন্দে বৈসারণ উপত্যকা প্রাণ চঞ্চল ছিল। মুহূর্তেই আর্তনাদ। পরিবারের লোকেদের সামনেই গুলিবিদ্ধ হয়ে যন্ত্রণাতে মৃত্যু। যে ঘটনার পর থমকে যান পর্যটকরা। আতঙ্কে কাশ্মীর ছাড়েন। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার জেরে কাশ্মীরের পর্যটনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা (Uncertainity)। অস্তিত্বের সংকট। পর্যটনের পাশাপাশি প্রভাব পড়তে চলেছে বেকারত্ব, আর্থিক বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও।
পহেলগাঁও পর্যটকদের সেরা গন্তব্য। আচমকায় সেখানে বুলেটের শব্দ, সন্ত্রাসবাদীদের হুমকি, চোখ রাঙানি। কাশ্মীরের নৈসর্গিক পরিবেশকে এক লহমায় বদলে দেয়। শুধু প্রাণহানির দিক থেকে নয়। অর্থনীতির উপর ধ্বংসাত্মক আঘাত। সবেমাত্র পর্যটনকে সামনে রেখে আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল ভূস্বর্গ। এই হামলার প্রভাব এখন বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে পর্যটনে প্রতিফলিত হওয়ার আশঙ্কা। গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছিল। নিরাপত্তা, বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অগ্রগতির লক্ষ্যে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছিল কাশ্মীর।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে পৌঁছলেন রাহুল গান্ধী
পর্যটক
ভূস্বর্গে ২০২০ সালে ৩৪ লক্ষ পর্যটক গিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয় ২ কোটি ১১ লক্ষ।
২০২৪ সালে বেড়ে রেকর্ড ২ কোটি ৩৬ লক্ষ পর্যটক যান। এর মধ্যে ৬৫,০০০ বিদেশি পর্যটক। পর্যটনের সাফল্যে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য জিডিপি বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ৭.০৬%। টাকার অঙ্কে ২ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৮৯%
কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলা
২০১৮ সালে সন্ত্রাসবাদী হামলার সংখ্যা ছিল ২২৮। ২০২৩ সালে ওই হামলা কমে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৪৬-এ। এর ফলে পর্যটনকে ঘিরে বিনিয়োগ বাড়ছিল। যা অর্থনৈতিক গতির প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠছিল। এই হামলার আগে পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরের অর্থনৈতিক গতি ছিল শক্তিশালী। কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়া বাঙালি পর্যটকের সংখ্যাও যথেষ্ট। কিন্তু সন্ত্রাস হামলার আবহে বেড়াতে গিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে ট্যুর বাতিল করছেন ট্যুর অপারেটররা।
কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবস্থায় ১৫০০ র বেশি হাউসবোট, ৩ হাজারের বেশি হোটেল রুম, ট্যাক্সি অপারেটর, ট্যুর গাইড, ঘোড়া চালক আছে। হস্তশিল্প বিক্রেতারা রয়েছেন। এঁদের অনেকেই ঋণ নিয়ে পর্যটনে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু এই হামলা হঠাৎ করেই তাদের সেই আশা ও বিনিয়োগকে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে।
প্রচুর বুকিং বাতিল হয়েছে। এর ফলে আয় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ২০২৩ সালের মে মাসে শ্রীনগরে জি২০ (G20) পর্যটন ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল। যা আন্তর্জাতিক স্তরে কাশ্মীরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কাশ্মীর আবার ভ্রমণ মানচিত্রে ফিরে আসে। এই হামলার ফলে ‘নিরাপদ ও আতিথেয় কাশ্মীর’-এর ভাবমূর্তিই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে।
দেখুন অন্য খবর: