কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: নির্মলা সীতারমণ, আমাদের অর্থমন্ত্রী ছড়াচ্ছেন, ছড়িয়েই চলেছেন। এমনিতে দেশে এক পরধান সেভক পরধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কোনও মন্ত্রীরই তেমন গুরুত্ব নেই, তবুও অর্থ মন্ত্রী বলে কথা, এরকম আবোলতাবোল বকলে দেশ ছেড়ে দিন বিদেশের মানুষজনও তো হাসবে। এই কদিন আগেই তিনি গেছেন তেলেঙ্গানায়। কেন? সব্বাই জানেন তেলেঙ্গানার নির্বাচন আসছে, কাজেই এখন থেকে ছোট, বড়, আধা, সিকি, কচি ও ধেড়ে মন্ত্রী নেতাদের চার্টার্ড ফ্লাইট দিল্লি হায়াদ্রাবাদ, হায়দ্রাবাদ দিল্লি যাবে। প্রতিদিন খবর হবে, তাঁরা যা বলবেন, সন্ধ্যেবেলায় এক চিল্লানোসরাস চিৎকার করে বলবে, দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো, অ্যানসার মাই কোয়েশ্চেন মিঃ রাহুল গান্ধী। ২০ টা বড় চ্যানেলে এই উচ্চকন্ঠে প্রচার এর ফলে নিশ্চিত এক আবহ তৈরি হবে, তারপর কিছু দল ভাঙানো, কাঁথির খোকাবাবু কিকেবল কাঁথিতেই পাওয়া যায়, বিশ্বাসঘাতক আছে সর্বত্র, তার বের হবে, হৈ হৈরব উঠবে, গেল গেল সরকার গ্যালো। তারপর মিডিয়াতে সমীক্ষা, বিজেপি সামান্য একটু পিছিয়ে, সামান্য এগিয়ে টি আর এস। কদিন পরে মোটা ভাই বলবেন আমরা ১১৯ এ ৮৫ টা আসন পাবো। মিডিয়া আবার সমীক্ষা করে বলবে না ৮৫ না পেলেও অনেকটা এগিয়ে গেছে বিজেপি, লোকজন বলবে তাহলে তো অন্তত ৬৫ টা তো পাবেই, মানে সরকার বিজেপির। টি আর এস বা কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ঘরে রেইড হবে, নির্বাচনে টাকার যোগান তো আছে একমাত্র মোটাভাই এর দল বিজেপিরই। এবং বিজেপি জিতছে, জিতলে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তাই নিয়ে চর্চা শুরু। রেজাল্ট যাই হোক না কেন, এটাই আর এস এস – বিজেপির স্ট্রাটেজি। হ্যাঁ আর এস এস এর নামটা সচেতনভাবেই নিচ্ছি, কারোর আর এস এস সম্পর্কে দুর্বলতা থাকলে সে ভুল অচিরেই ভাঙবে। অক্টোপাসের মাথা হল আর এস এস, শুঁড়্গুলো হল, বিজেপি, হিন্দ মজদুর সভা, এ বিভিপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ইত্যাদি। তো যাই হোক সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই মন্ত্রী সান্ত্রীরা যাচ্ছেন, নির্মলা সীতারমনও গেছেন। প্রথম দিন তিনি গিয়েই এক রেশন দোকানে ঢুকলেন, ওখানে যাকে বলে ফেয়ার প্রাইস শপ। সেখান থেকে ঐ ফ্রি র্যাশন দেওয়া হয়, গিয়ে বললেন মোদিজী এই ফ্রি র্যাশনের ফলে কত গরীব মানুষ এই আকালে দুবেলা দুমুঠো খেতে পারছেন। এদিকে এ রাজ্যে, মানে আমাদের বাংলায় দিলু ঘোষ ফ্রিতে র্যাশন দিয়ে বাংলার মানুষ কে অকর্মণ্য করে তোলা হচ্ছে, রোজ বলছেন। অবশ্য তিনি তো কত কিছুই বলেন, শুনছে কে? বলছিলাম নির্মলা সীতারমন এর কথা। তিনি র্যাশন দোকানে গেলেন, বললেন মোদিজীর জন্যেই ফ্রি র্যাশন পাচ্ছে গরীব মানুষজন, তো দোকানে মোদিজীর ছবি কই? একটা ছোট ছবিও তো রাখা উচিত। কেন? উনি ফ্রি তে র্যাশন দিচ্ছেন বলে? কেমন ফ্রি? উনি ওনার পিতৃপুরুষের টাকা দিয়ে চাল ডাল কিনে মানুষ কে দিচ্ছেন? না। ওনার চায়ওলার রোজগারের পয়সা থেকে দিচ্ছেন? না। ওনার মাইনের টাকার থেকে দিচ্ছেন? না। তাহলে? মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় সরকার কিনছে চাল গম, সেই চাল গম আবার মানুষ কে দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে ফ্রি টা কোথায়? সর্দারজীরা নিজেদের পয়সায় লঙ্গর চালান, তাকে ফ্রি বলে। মাথায় কাপড় ঢাকা দিয়ে বসলেই হল, ফ্রিতে ডাল রুটি পাবেন। বিড়লা রা নিজেদের পয়সায় হাসপাতাল চালান সেখানে কিছু ফ্রি চিকিৎসাও হয়। কিন্তু মোদিজী ফ্রি তে দিচ্ছেন মানে কি? নির্মলা সীতারমন এইসব কথা বললেন স্থানীয় ডি এম এর সামনে, মানে ধরেই নেওয়া যায় দিন কয়েকের মধ্যে কমকরে ২ ফিট বাই চার ফিটের সহাস্য মোদিজী ঝুলবেন প্রত্যেক র্যাশন দোকানে। তো আমার এক দুষ্টু বন্ধু এই শুনে বললেন ভাগ্যিস নির্মলা সীতারমন প্রধানমন্ত্রী শৌচালয় প্রকল্প দেখতে যান নি, না হলে প্রত্যেক শৌচালয়ে মোদিজীর ছবি ঝুলতো। পরেরদিনও তিনি ঐ হায়দ্রাবাদেই, এদিন তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে কিছু তথ্য দিলেন, তিনি ছাত্রী ছিলেন জে এন ইউর, কথা শুনে বোঝা যায় না, তাতে কি? উনি বলেন। তো এবার বললেন খুব খারাপ চলছে এই তেলেঙ্গানা, কতটা খারাপ চলছে তার হিসেব দিতে গিয়ে বললেন, জানেন এখানে প্রতি মানুষ পিছু কত টাকা ঋণ? উনি জানালেন তেলেঙ্গানার মানুষ প্রতি ঋণ হল ১.২৫ লক্ষ টাকা। এই ঋণ থেকে মুক্তি পেতে হলে টি আর কে সরিয়ে বিজেপি কে আনুন। কি কান্ড? জন্মেই দেখছে মাথার ওপর ১.২৫ লক্ষ টাকার ঋণের বোঝা। হয় তিনি এতটুকুও হোমটাস্ক করেন নি, নাহলে মানুষকে বোকা ভাবেন। সত্যি হিসেবটা কী? ১৯৪৭ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১৪ জন প্রধানমন্ত্রীর আমলে দেশের ঋণের পরিমাণ ৬৭ লক্ষ কোটি টাকা। আর কেবল এই ৮ বছরে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে এই ঋণ বেড়েছে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা। দেশের মোট ঋণ কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথা পিছু ঋণের পরিমাণ ১.২৫ লক্ষ টাকা। উনি তেলেঙ্গানা রাজ্যের কথা বলছেন, মানুষ কে ভুল বোঝাচ্ছেন। আরও দেখুন, দেশের মাথা পিছু গড় বাৎসরিক আয় ১.৪৯ লক্ষ টাকা, তেলেঙ্গানার মানুষের মাথা পিছু গড় আয় ২.৭৮ লক্ষ টাকা। তেলেঙ্গানায় ঋণ এবং রাজ্যের জিডিপি রেশিও ২৩.৫% দেশের মধ্যে ২৩ নম্বরে আছে, আর গোটা দেশের ঋণ আর জিডিপি রেশিও হল ৫৯%। অর্থাৎ তেলেঙ্গানার আর্থিক অবস্থা দেশের আর্থিক অবস্থার থেকে অনেকটাই ভালো, কিন্তু অর্থমন্ত্রী মিথ্যে বলছেন, ভোট কুড়োনর জন্যে মিথ্যে বলাটা ওনাদের অভ্যেস। এরপর আরও একটি মাণিক্য ছড়িয়েছেন, এটা অবশ্য কিছুদিন আগে দিল্লিতেও বলেছিলেন, দেশশুদ্ধু হুক্কা হুয়ার দল হাততালি দিয়েছিল। আমাদের দেশ ব্রিটেন কে পিছনে ফেলে দুনিয়ার পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিসেবটা কী রকম? আমেরিকা ২৫৩৫০ বিলিয়ন ডলার, চীন ১৯৯১০ বিলিয়ন ডলার, জাপান ৪৯১০ বিলিয়ন ডলার, জার্মানি ৪২৬০ বিলিয়ন ডলার। এরপরেই ছিল ব্রিটেন, তাকে ছাপিয়ে ভারতবর্ষ এখন ৮৫৪.৭ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি, ব্রিটেন ৮১৪ বিলিয়ন ডলার। এ হচ্ছে এক কাগুজে হিসেব। যেখানে মোট অর্থনীতির কথা, মোট সম্পদের কথা বলা হয়। একবারও বলা হয় না সেই সম্পদের ভাগ বাটোয়ারার কথা। বলা হয় না যে দেশের ১ শতাংশ মানুষের হাতেই রয়েছে ৬৭ % সম্পদ, বাকি ১৫ % এর হাতে ২১% সম্পদ। পড়ে থাকলো ৮৪% মানুষ, যাদের হাতে রয়েছে মাত্র ১২% সম্পদ। যদি এই ৮৪% এর মধ্য থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত দের বাদ দেওয়া যায়, তাহলে দেশের ৬৩% মানুষের হাতে আছে মাত্র ৩% সম্পদ। মানে অর্থনীতি বেড়ে হবে টা কী? মাঝে মধ্যেই মোদিজী ৫ বিলিয়ন অর্থনীতির কথা বলেন, যদি হয়েও যায়, সাধারণ মানুষের লাভটা কোথায়? আরো ১০ টা নতুন বিলিওনিয়ার তৈরি হবে, আরো কিছু বড়লোক জন্মাবে, আদানি, আম্বানি, টাটা, বিড়লাদের সম্পদ আরও বাড়বে এই তো। চলুন সে হিসেব বাদই দিন। আসুন এই ছটা দেশের পার ক্যাপিটা ইনকাম, মাথা পিছু আয় নিয়ে হিসেবের ওপর চোখ বোলানো যাক। আমেরিকার বছরে মানুষের গড় আয় ৬৯২৮৭ ডলার, চীনের ১২৫৫৬ ডলার, জাপান ৩৯২৮৫ ডলার, জার্মানি ৫০৮০১ ডলার, ভারতবর্ষ ২২৭৭ ডলার, ব্রিটেন ৪৭৩৪৪ ডলার। অনেকে বলবেন ইউকে, জার্মানি এমন কি আমেরিকার জনসংখ্যা কম, তাহলে তাকিয়ে দেখুন আমাদের পরে স্বাধীনতা পাওয়া, আমদের থেকে বেশি জনসংখ্যা আছে যে দেশে, সেই চীনের দিকে, তাদের মাথা পিছু গড় আয় ১২৫৫৬ ডলার, আমাদের ২২৭৭ ডলার মানে চীনে মানুষদের মাথা পছু আয় আমাদের থেকে সাড়ে পাঁচ গুণ বেশি। ব্রিটেন, আমেরিকা, জার্মানি, ইউরোপের দেশের কথা বাদই দিন, প্রতিবেশী দেশ, এই সেদিন স্বাধীনতা অর্জন করেছে, বাংলাদেশের মাথা পিছু আয় আমাদের থেকে বেশি। আমাদের দেশ এখন দুজন ব্যবসায়ীর নির্দেশে চলছে, দুজন ব্যবসায়ীর জন্যই চলছে, দেশের অর্থনীতি বড় হলে তাদের লাভ বাড়ছে, দেশের রপ্তানিতে তাদের লাভ, দেশের জিডিপি গ্রোথ মানে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি। আসলে সামনে তেলেঙ্গানার নির্বাচন, ইডি, ইনকাম ট্যাক্স আর সিবি আই পাঠানো হয়ে গেছে, তেমন সুবিধে হয় নি, এবার ঝাঁকে ঝাঁকে মন্ত্রী যাবেন, প্রধানমন্ত্রী যাবেন আর মিথ্যে বলবেন, অনর্গল মিথ্যে, সেই মিথ্যে টেলিভিশন চ্যানেলে চ্যানেলে দেখানো হবে, মিথ্যে, আরো বড় মিথ্যে চলতে থাকবে সেখানে। আর সেই মিথ্যের পাহাড় এর ওপর ভর করে তাঁরা বিরোধী মুক্ত ভারত চান, দেশের প্রত্যেক বুদ্ধিজীবি, শাবানা আজমী থেকে জাভেদ আখতর টুকরে টুকরে গ্যাং এর সদস্য, অধ্যাপিকা থেকে সমাজকর্মী, কবি থেকে সাংবাদিক আর্বান নকশাল, প্রতিবাদী ছাত্র, সাংবাদিক জেলে। কেবল মিথ্যের বেসাতি নিয়ে এক বর্বর সাম্প্রদায়িক দল দেশ আর সমাজের দখল নিতে চায়, আমরা তা হতে দেবো না।