ওয়েব ডেস্ক: ১৯৯৬ সালে ২৮ মে। পতন হয়েছিল অটল বিহারী বাজপেয়ি (Atal Bihari Vajpayee) সরকারের। মাত্র ১৩ দিনের ক্ষমতা। সেই বিখ্যাত বিদায়ী ভাষণ। ক্ষমতার খেলা চলতেই থাকবে। সরকার আসবে। যাবে। রাজনৈতিক দল তৈরি হবে। বিগড়াবে। কিন্তু এই দেশ থাকা উচিত। এই দেশের গণতন্ত্র থাকতে হবে। ২৯ বছর আগে। দেশের সবচেয়ে কম সময়ের প্রধানমন্ত্রী। প্রথম বিজেপি প্রধানমন্ত্রী। লোকসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারিয়ে প্রথমবারের জন্য বিদায়ী নিয়েছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ি। তার আগে জওহরলাল নেহরু ও লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর দুবার ১৩ দিনের জন্য কার্যকরী প্রধানমন্ত্রী হন গুলজারিলাল নন্দ। এখন সরকার গড়ার জন্য দর কষাকষি করতেই ওই সময়ের কাছাকাছি হয়ে যায়। অল্প দিনের ক্ষমতায় থেকে কোনও অভিযোগে্র সুর অটল বিহারীর মুখ থেকে বিদায় বেলায় শোনা যায়নি। বরং একটি কথা জোর দিয়ে বলেছিলেন, যাই ঘটুক দেশে ‘গণতন্ত্র’ থাকতে হবে। পরবর্তীতে তাঁকে আবার দেশের ক্ষমতায় নিয়ে এসেছিলেন দেশের মানুষ। আরও দুবার। প্রথম অকংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসনের সুযোগও দেন দেশবাসী।
আগামী সেপ্টেম্বরে ৭৫ বছরে পা দেবেন বিজেপির দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। বিজেপির নিয়মে মার্গ দর্শক মণ্ডলীতে যাওয়ার কথা। আবার অনেকে বলছেন তিনি পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হতে পারেন। সেসময় পর্যন্ত ধরলে বছর দুয়েকের মধ্যে তাঁর ক্ষমতার ১৩ বছর পূর্ণ হবে। তারপরও ব্যাটিং করলে আরও মেয়াদ বাড়বে গুজরাতের নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদির। অটল বিহারী ও নরেন্দ্র মোদির শাসনকালের তুলনা করলে যে বিষয়টি সামনে আসে তা হল গণতন্ত্র। মোদির আমলে যে প্রশ্নে বারবার বিরোধী সরব হয়েছেন। দেশে গণতন্ত্রের অভাব। গণতন্ত্র বলতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। কেন্দ্রীয় তন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা, সংবাদমাধ্যমকে ভয়ের জাঁতাকলে চাপ দিয়ে রাখা। সমালোচনাকে বন্ধ করে দিয়ে শাসকের সুরে কথা বলতে বাধ্য করা। সোজা কথায়, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য, রাষ্ট্র ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন মোদি। যেই শাসক হন, বিরোধী তাঁর সমালোচনা করেই। তবে মোদির আমলে গণতন্ত্রের বদলে একনায়কতন্ত্র চালানো হচ্ছে। ভারত ১৪০ কোটির বিশালায়তনের দেশ। বহু ভাষা, ধর্ম, জাতির দেশ। বিচিত্র ভূ প্রকৃতির সহাবস্থান। বৈচিত্রের মধ্য়ে ঐক্যের সৌন্দর্য বজায় রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ, মানুষের মৌলিক অধিকার, মানব অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী দলগুলি ডাক দিয়েছিল, সংবিধান বাঁচাও।
আরও পড়ুন: প্রথম ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে ইতিহাস লিখবেন শুভাংশু শুক্লা
কী পরিস্থিতি ছিল ১৯৯৬ সালে? যে কারণে বিজেপি পায় প্রথম প্রধানমন্ত্রী? আবার এক পক্ষ কালও সেই সরকার টিকল না। ১৯৯১ সালে পিভি নরসিমহা রাও সরকার ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কার করে। অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সক্রিয়তায় দেশ সেই সময় দেখল উদার অর্থনীতির রাস্তা খুলতে। এরপর পরের বছরই মোড় ঘুরে গেল। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙা হল। ওই ঘটনায় দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে গেল। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেখান থেকে সুবিধা পেল বিজেপি। ১৯৯৬ সালে গেরুয়া পার্টি লোকসভায় ১৬১টি আসন পেল। একক বৃহত্তম পার্টি হল বিজেপি। কংগ্রেস পেয়েছিল ১৪০টি আসন। এইচডি দেবগৌড়ার জনতা দল পেয়েছিল ৪৬টি আসন। সিপিএম পায় ৩২টি আসন। ১৫ মে অটল বিহারি বাজপেয়ি প্রধানমন্ত্রিত্বের শপথ নেন। কিন্তু স্বল্প সময়েই পতন। ক্ষমতা হারানোর সময় তিনি কাউকে দোষারোপ করেননি। বার্তা দিয়েছিলেন সাম্প্রদায়িকতা ও জাতির ভিত্তিতে দেশে কোনও ভাগ হওয়া উচিত নয়। তিনি এও বলেছিলেন, বিজেপিকে ভাগ করে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য অন্য কোনও জোটের হাত ধরবেন না তিনি। এরপর বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে কংগ্রেস ইউনাইটেড ফ্রন্টের সমর্থন আদায় করে। সেসময় প্রধানমন্ত্রীর খোঁজ চলে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিং দায়িত্ব নেওয়া প্রত্যাখ্যান করেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নাম বিবেচনা করা হয়। ওই জটিল পরিস্থিতিতে কোয়ালিশন সরকারের দায়িত্ব নিক জ্যোতি বসু, এতে তাঁর পার্টি রাজি হল না। পরে জ্যোতি বসু যাঁকে বাম পার্টির ঐতিহাসিক ভুল বলে জানিয়েছিলেন। এরপর জনতা দল নেতা দক্ষিণ ভারতের এইচ ডি দেবগৌড়া প্রধানমন্ত্রী হন। পরে কংগ্রেস এক বছরের মধ্যে তাঁর কাছ থেকে সমর্থন তুলে নেয়। এরপর আইকে গুজরাল হলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁকেও এক বছরের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। ঘটনাচক্রে ১৯৯৮ সালে ফের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি। সেসময় পোখরানে পরমাণু পরীক্ষা হল। কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানকে হারাল ভারত। তবু তামিলনাড়ুর রাজনীতিকে কেন্দ্র করে এআইএডিএমকে সমর্থন তুলে নিল। ১৯৯৯ সালে বিজেপি ফের ক্ষমতায় আসে। প্রথম অকংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় থাকলেন বাজপেয়ি।
(বিরোধীরা নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করলেও তাঁর ও বিজেপির অবশ্য দাবি, তিনি দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন। ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে বিকশিত ভারতের বিপুল স্বপ্ন ফেরি করছেন তিনি।)
দেখুন অন্য খবর: