ওয়েবডেস্ক: জেরার পর জেরা! এনআইয়ের (NIA) জেরার সামনে কার্যত ভাঙলেন তিনি। ২৬/১১ মুম্বই হামলার (26/11 Mumbai Attack) দায় স্বীকার তাহাউর রানার (Tahawwur Rana)। এছাড়াও একাধিক সন্ত্রাসী সংগঠন যেমন আইএসআই-এর সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও স্বীকার তার।
আরও বড় খবর এই যে মুম্বাইয়ের ১২টি প্রধান স্থান যেমন সেনা সেনানিবাস, সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির, শিবসেনা সদর দফতর এবং চাবাদ হাউস সহ প্রায় ৪০-৫০টি স্থানে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল তাদের। এমনকি সেই স্থানগুলির ভিডিয়ো রেকর্ডও করা হয়েছিল। ২৬/১১ হামলার পর থেমে থাকেননি রানা। নিজের ক্ষুরধারর বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে আরও বড়সড় বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল রানা ও হেডলির।
কোডেড ভাষা ব্যবহার করে সেই প্রজেক্টের নাম রাখা হয়েছিল ছিল “এমএমপি” প্রকল্প। লক্ষ্য ছিল ভারত এবং ডেনমার্ক উভয় দেশেই হামলা। ইতিমধ্যে, ডিজিটাল ফরেনসিক যোগাযোগ সহ গুরুত্বপূর্ণ ইমেল ডেটাও উদ্ধার করেছে।
আরও পড়ুন: ১৭ বছরের প্রচেষ্টায় মুম্বই হামলার মাস্টার মাইন্ড দিল্লিতে
জেরায় তাহাউর জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী সংগঠন, মৌলবাদী উপাদান এবং পাকিস্তানের কুখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা – ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) এর সঙ্গে তার গভীর যোগাযোগ রয়েছে। একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে এএনআইয়ের হাতে।
সেই তথ্য অনুসারে ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনা জাকি-উর-রহমান লাখভির সহযোগিতায় “জাকির সুরা” কোড নেমের মাধ্যমে আইএসআই দ্বারা তদারকি করা হয়েছিল। সন্ত্রাসী হামলার আগে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়, সেখানে অংশ গ্রহণ করেছিলেন লস্কর-ই-তৈবা এবং আইএসআই-এর উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা।
তাহাউরের যোগ রয়েছে ‘হুজি ৩১৩ ব্রিগেডের’ সাথেও। এই হুজি ব্রিগেড হল কাশ্মীরে কুখ্যাত জঙ্গি ইলিয়াস কাশ্মীরের নেতৃত্বে পরিচালিত। এর কার্যকলাপ কানাডা এবং ভারত উভয় দেশেই বিস্তৃত, তারা পাকিস্তানের আইএসআই-এর সঙ্গে যৌথভাবে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলির জন্য অর্থায়ন এবং নিয়োগের সুবিধার্থে কাজ করছে।
রানা কানাডায় মারকাজ-উদ-দাওয়াত-ওয়াল-ইরশাদ (এমডিআই) নামে একটি ইসলামী মৌলবাদী সংগঠনের আড়ালে উগ্রপন্থী মতাদর্শ প্রচারের কথাও স্বীকার করেছেন।
এমডিআই, যা এখন জামাত-উদ-দাওয়া নামে পরিচিত হয়েছে। লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এর সঙ্গে তার ব্যাপক সংযোগ হয়েছে সংস্থাটির। এটি দাতব্য চিকিৎসালয় হিসেবে সমাজের চোখে ধুলো দিতে কাজ করে, কিন্তু এটি ভিতরে সন্ত্রাসী কাজকর্মে মদত দিয়ে থাকে। যাদের কাজ সন্ত্রাসী হামলার জন্য প্রয়োজন অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে জঙ্গিদের থাকার ব্যবস্থা করা।
আরও বড় খবর, তাহাউরের পরিকল্পনা ছিল দিল্লিতে ভারতের প্রতিরক্ষা কলেজ সহ বেশ কয়েকটি চাবাদ হাউসে হামলার । স্লিপার সেল-এর কৌশল নিতেন রানা, কারণ সেখানে সন্ত্রাসীদের ধরা পড়ার ভয় কম ছিল। তার বিরুদ্ধে ভারতে কর্মরত পাঁচজনেরও বেশি সন্ত্রাসীকে রসদ এবং অর্থ সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে।
তদন্তকারীরা দুবাইতে রানার যোগাযোগগুলিও খতিয়ে দেখছেন। বিশেষ করে একজন ব্যক্তি যিনি ২৬/১১ হামলার আরেক ষড়যন্ত্রকারী আব্দুর রহমানের সঙ্গে রানার একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে কে? অনেক কিছুই এখনও আতসকাচের তলায়।
রানা স্বীকার করেছেন যে তিনি সাজিদ মীর এবং মেজর ইকবালের সরাসরি নির্দেশে হেডলিকে মিশন পরিচালনার নির্দেশ দেন।
এনআইএ-এর তথ্য অনুসারে একদম ঠান্ডা মাথায় ক্ষুরধার বুদ্ধিতে কাজ চালিয়ে গেছে রানা। একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে হেডলিকে যোগাযোগ রাখতে বলেছিলেন তিনি। কারণ তাহলে মিশনের কাজ সহজ হত। কারণ প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সেই জায়গায় ভৌগলিক অবস্থান, মানুষজন, এলাকা সম্পর্কে সমস্ত রকম খোঁজ পাওয়া যেত।
সন্ত্রাসবাদ পরিচালনায় এনআইএ-এর হাতে যাদের নাম উঠে এসেছে তারা হল মেজর ইকবাল, মেজর সমীর, “ডি” নামে পরিচিত, এছাড়াও রয়েছে আবু আনাস। তাদের স্কেচ আঁকার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে মুম্বাইতে হামলা চালানোর জন্য ডেভিড হেডলি এবং সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এবং হরকাত-উল-জিহাদি ইসলামী (এইচইউজি) এর কর্মীদের সঙ্গে পাকিস্তান-ভিত্তিক অন্যান্য সহযোগী ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে অভিযুক্ত এই তাহাউর।
এই মূল সন্ত্রাসীকে প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে ১০ এপ্রিল আমেরিকা থেকে ভারতে ফেরানো নয়। তার পর থেকে এনআইএ-হেফাজতে জেল কুঠুরিতে বন্দি সে। দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হচ্ছে তাকে।
দেখুন অন্য খবর-