নয়াদিল্লি: ওয়াকফ আইন (Waqf Amendment Act 2025) মুসলিম স্বার্থবিরোধী বলে অভিযোগ তুলে আন্দোলনের নেমেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ। এই আইনের বিরোধিতার জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও (Supreme Court)। ইসলামিক সংগঠন থেকে একাধিক রাজনৈতিক দলের তরফেও মামলা দায়ের হয়েছে শীর্ষ আদালতে (Supreme Court)। ওয়াকফ আইন (Waqf Act Case) বিরোধী শুনানিতে জনস্বার্থ মামলাকারীদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের স্বস্তি। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চের তিন দফা অন্তর্বর্তী নির্দেশে বলা হয়েছে, ঘোষিত ওয়াকফ সম্পত্তি বহাল থাকবে। এই মামলা চলাকালীন আদালত ঘোষিত ওয়াকফের চরিত্র বদল করা যাবে না। সংশোধিত আইন অনুযায়ী কালেক্টর কোন বিতর্কিত সম্পত্তি সম্পর্কে তদন্ত চালিয়ে যাওয়াকালীন সেই সম্পত্তিকে ওয়াকফ বলা যাবে না। এই ব্যবস্থা আপাতত স্থগিত থাকবে। সব ওয়াকফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে এক্স অফিসিও মেম্বার বা সরকারি প্রতিনিধি ছাড়া বাকি সদস্যরা মুসলিম হবেন।
বুধবার বেলা দুটো থেকে বিকেল প্রায় চারটে পর্যন্ত শুনানি চলার পর তা স্থগিত হয়। বৃহস্পতিবার বেলা দুটো থেকে এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ সম্পর্কে আরও শুনানি চলবে। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও কেভি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চে। এদিনের শুনানিতে কোনও অন্তর্বর্তী রায় দিল না সুপ্রিম কোর্ট। আগামিকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো ফের এই মামলার শুনানি হবে। পাশাপাশি নতুন আইনে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিস দিল শীর্ষ আদলত। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে নির্দেশ দিতে হবে।
এদিকে শুনানিতে যে প্রশ্ন উঠেছে, এতদিন যে সম্পত্তিগুলি ওয়াকফ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলির চরিত্র একই থাকবে কি? দ্বিতীয়ত, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কি করে বহু সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, প্রশ্ন আদালতের। সরকার নিয়োজিত অফিসার তদন্ত সাপেক্ষে কোন সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত সেটিকে ওয়াকফ না বলার বিধান কি যুক্তিসঙ্গত? আদালত কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ স্বীকৃতি দিলে তা এই আইন অনুযায়ী বাতিল করা যায় কি? নয়া সংশোধনী সূত্রে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল এবং রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য কি মুসলিম হওয়া উচিত? বিচারপতি বলেন, কোন টা ওয়াকফ সম্পত্তি আর কোনটা নয় তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হোক।
আরও পড়ুন: ঘোষিত ওয়াকফ সম্পত্তি বহাল থাকবে, বড় রায় সুপ্রিম কোর্টের
আইনজীবা তুষার মেহতার দাবি, ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনে ওয়াকঙ সম্পত্তি নথিভুক্ত করা বধ্যতামূলক ছিল। এদিন মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, যখন দিল্লি হাইকোর্টে ছিলাম, শুনতাম, সেটা নাকি ওয়াকফের জমিতে। আমাদের ভুল বুঝবেন না। সব ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তকরণ ভুল ভাবে হয়নি। বুধবার ওয়াকফ আইন নিয়ে শুনানি চলাকালীন কেন্দ্রের আইন নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলে আদালত। ওয়াকফ বোর্ডের ২২ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৮ জন কেন মুসলিম, প্রশ্ন তোলা হয়। এতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার সঙ্গে কার্যত বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার। প্রধান বিচারপতি বলেন,”বিচারপতির আসনে যখন বসি আমরা, ধর্ম থাকে না আমাদের। আমাদের কাছে সবপক্ষই সমান। এর পরই প্রধান বিচারপতি জানতে চান, হিন্দুদের ধর্মীয় ট্রাস্টের বোর্ডে মুসলিমদের জায়গা হবে? প্রকাশ্যে বলুন। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, হিন্দুদের ধর্মীয় সম্পত্তির দায়িত্বে অন্য কোনও ধর্মের কেউ থাকেন না।
জেলাশাসকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, জেলাশাসক যদি সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন যে, কোনটা ওয়াকফ, কোনটা নয়, তা কি ঠিক হবে? ওয়াকফ আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকায় যে হিংসার ঘটনার ঘটেছে। শুনানি শেষে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, এমনটা হওয়া উচিত নয়। এই ঘটনা খুবই উদ্বেগের।
দেখুন ভিডিও