নয়াদিল্লি: গান্ধীজী ও সাভারকার ইস্যুতে তরজা অব্যাহত। বুধবার নয়াদিল্লিতে নিজের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। বীর সাভারকারকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যার নাম বীর ‘সাভারকার দ্য ম্যান হু কুড প্রিভেন্ট পার্টিশন’। বইতে তিনি লিখেছেন মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশেই ব্রিটিশ শাসকের কাছে মুচলেকা দিয়েছিলেন বীর সাভারকার। এমনটাই দাবি করেন রাজনাথ সিং। হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠাতা বীর সাভারকারের দেশপ্রেম ও তাঁর অবদান নিয়ে এর আগে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং ইতিহাসবিদেরাও। সাভারকারকে ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দাবি করে বিজেপিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হয়েছে বহুবার। যার ফলে স্বাধীনতায় বিজেপির অবদান এই প্রশ্নে বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। এবার সেই প্রসঙ্গে খোলামেলা বক্তব্য রাখলেন রাজনাথ।
এদিন তিনি বলেন, “সাভারকারকে নিয়ে প্রচুর মিথ্যে প্রচারিত হয়েছে। বলা হয়েছে ইংরেজ শাসনে থাকাকালীন তিনি একাধিকবার ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা আদতে সত্য নয়। যদিও প্রতিটি জেলবন্দি ব্যক্তিরই ক্ষমা প্রার্থনার অধিকার থাকে। তবে সাভারকার কোনওভাবেই ব্রিটিশদের কাছে মাথানত করতে চাননি। শুধুমাত্র গান্ধীজীর নির্দেশে তিনি ইংরেজদের কাছে তার কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চেয়ে ছিলেন। তারপর মুচলেকা দিয়ে আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পান। শান্তিপূর্ণ স্বাধীনতা আন্দোলন চালানোর জন্য গান্ধীজীর নির্দেশ অমান্য করতে পারেননি সাভারকার।” অর্থাৎ, সাভারকারের মুক্তির পেছনে গান্ধীর হাত ছিল বলেই দাবি করেন রাজনাথ। আর এই মন্তব্যে গান্ধী-সাভারকার বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
অন্যদিকে, ইতিহাসের পাতা খতিয়ে দেখলে এই যুক্তি মানতে নারাজ ঐতিহাসিকেরা। তাঁদের যুক্তি, ১৯১১ সালের ৪ জুলাই আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দি হয়েছিলেন সাভারকার। তার ছয় মাসের মধ্যেই ব্রিটিশ সরকারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন সাভারকার। ইংরেজ সরকারের থেকে কোনও উত্তর না পেয়ে ১৪ নভেম্বর ১৯১৩ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমা প্রার্থনা করেন সভারকার। যদিও গান্ধীজী তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষী আন্দোলনে লড়াই করছেন। তার বছর বাদে অর্থাৎ ১৯১৫ সালের ৯ জানুয়ারি ভারতে পা রাখেন গান্ধীজী। বিশেষজ্ঞদের মতে গান্ধীজী ভারতে আশার বহু আগেই সাভারকার জেলে বন্দি হয়েছিলেন। সুতরাং কিভাবে গান্ধীজী তাঁকে ক্ষমা প্রার্থনা করার সুপারিশ করবেন? প্রশ্ন তুলেছেন ইতিহাসবিদেরা।
১৯০৯ সালে একবার লন্ডনে প্রবাসী ভারতীয়দের দশেরা উৎসব আমন্ত্রিত হয়েছিলেন গান্ধীজী। তখন সেখানে হাজির ছিলেন সাভারকারও। কিন্তু আর এক বছর পর ১৯১০ সালে জেলবন্দি হন সাভারকার। সুতরাং স্পষ্টতই সেই সময় গান্ধীজির সঙ্গে সাভারকারের কোনওরকম সাক্ষাৎ হয়নি বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের। তাহলে কোন যুক্তিতে রাজনাথ সিং তার বইয়ে সাভারকার ইস্যুতে গান্ধীজিকে টেনে এনেছেন? মহাত্মা গান্ধীকি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে সাভারকারকে ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন? প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।
এর আগেও ‘আইকন-হীন’ দল হিসেবে একাধিকবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বিজেপিকে। তাই কখনো সর্দার বল্লভ ভাইকে নিয়ে অথবা কখনও নেতাজিকে নিয়ে দড়ি টানাটানি করতে গিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে মোদির-শাহদের। এবার সাভারকার কে নিয়ে বই লিখে রাজনাথ ফের আরও একবার বিতর্ক উস্কে দিলেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।