কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: একটি ঠান্ডা পানীয়ের বোতল। অবলীলায় এই সিনেমার নাম হতে পারে। কিন্তু, এটা কোনও সিনেমার গল্প নয়। ঘাম দিয়ে লেখা বাস্তব কাহিনি। ৪২ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রায় বাইরে যখন রোদের তেজ শরীরের সব শক্তি শুষে নিচ্ছে। তখন সাইকেলে চেপে ঘরের দরজায় কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল পৌঁছে দিলেন অ্যাপনির্ভর খাদ্যপণ্য সরবরাহ সংস্থার এক কর্মী। গ্রাহকের বয়স মাত্র ১৮। আর এখানেই কেল্লা ফতে। ওই কর্মী সম্পর্কে কিশোরের একটি টুইট বদলে দিল তাঁর জীবিকার রসদ। সোশাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল কিশোরের ছোট্ট একটি আবেদন। আর তাতেই সাইকেলের জায়গায় নতুন বাইক কেনার টাকা উঠে এল ঝড়ের গতিতে।
মানবতার উষ্ণ আবেদন এমনভাবে কারও জীবন ভরিয়ে দিতে পারে! হ্যাঁ বোধহয় পারে। তা না হলে কীভাবে বদলে গেল দুর্গাশঙ্কর মিনার কর্মজীবন! সংসারের তাগিদে স্কুল শিক্ষক থেকে অ্যাপনির্ভর খাদ্যপণ্য সরবরাহ কর্মী হওয়া দুর্গার জীবনে অকস্মাৎ আশীর্বাদের মতো নেমে আসে সেই দূত। যার নাম আদিত্য শর্মা। বয়স মাত্র ১৮।
আরও পড়ুন: Lemon Theft: চাহিদা তুঙ্গে, দাম আকাশছোঁয়া, উত্তরপ্রদেশে চুরি ১০০ কেজি পাতিলেবু
রাজস্থানের ভিলওয়াড়ার বাসিন্দা দুর্গাশঙ্কর মিনা এক স্কুল শিক্ষক ছিলেন। ইংরেজি পড়াতেন। কোভিডকালে তাঁর চাকরি যায়। সংসারের চাপে তিনি অ্যাপনির্ভর খাদ্যপণ্য সরবরাহ সংস্থায় যোগ দেন। কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, টুইটারে তিনিই রাতারাতি ভারত-বিখ্যাত হয়ে উঠবেন। আর এই কাণ্ডের পুরো কৃতিত্বটি হল ১৮ বছরের কিশোর আদিত্য শর্মার।
একটা ঠান্ডা পানীয়র বোতল ডেলিভারি দিতে এসেছিলেন মিনা। তিনি চলে যাওয়ার পরেই আদিত্য একটি টুইট করেন। তাতে তিনি লেখেন, আমি আমার অর্ডার টাইমেই পেয়েছি। আশ্চর্য এই যে, বাইরে যখন তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি, তখন সাইকেলে চেপে একজন এই ডেলিভারি দিয়ে গেলেন। তাঁর বয়স ৩১। বিকম পাশ। একটি স্কুলে গত ১২ বছর ধরে ইংরেজি পড়াতেন। এখন সেই কাজটি আর নেই, কোভিডের সময় কাজ হারিয়েছেন। গত ৪ মাস ধরে খাবার ডেলিভারির কাজ করেন। আমি দুর্গা মিনার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এত খেটেও তিনি মাসে ১০ হাজার টাকার বেশি আয় করেন না।
আরও পড়ুন: Rampurhat Violence: বগটুই হত্যাকাণ্ডে আরও একজনকে গ্রেফতার করল সিবিআই
আদিত্য আরও লিখেছে, মিনার স্বপ্ন হচ্ছে একটি ল্যাপটপ কেনা। তাহলে তিনি ওয়াইফাই কানেকশন নিয়ে অনলাইনে ছাত্র পড়াতে পারবেন। ব্যাঙ্ক থেকে তিনি বাইক কেনার জন্য ঋণও নিচ্ছেন। আর তার জন্য তিনি আপ্রাণ টাকা জমাচ্ছেন। দুর্গা আদিত্যকে বলেছেন, সে যদি ডাউন পেমেন্টের টাকাটা দিতে পারে, তাহলে তিনি সুদসহ সেই টাকা মাসে মাসে শোধ করে দেবেন।
এরপরেই আদিত্য টুইটে লিখেছেন, বন্ধুরা, আমি চাই দুর্গা মিনার জন্য আসুন আমরা সকলে কিছু করি। এই বলে আদিত্য ৭৫ হাজার জনের কাছে ১ টাকা করে নিয়ে ৭৫ হাজার টাকা গণচাঁদা সংগ্রহের কথা লেখেন। আর এই টাকা দিয়ে মিনার জন্য একটি নতুন বাইক কেনার প্রস্তাব রাখেন টুইটে। আর এই টুইট ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র ২ ঘণ্টায় গণচাঁদা সংগৃহীত হয় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার।
আরও পড়ুন: Rajasthan Road Accident: রাজস্থানে খাদে পড়ল যাত্রীবোঝাই গাড়ি, তিন শিশু সহ মৃত ৫
এর মধ্যে ৯০ হাজার টাকায় মিনার জন্য নতুন একটি বাইক কিনে দিয়েছে আদিত্য। বাকি টাকা তাঁকে দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ দেওয়ার জন্য। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতোই আদিত্য যখন নতুন বাইকের চাবি মিনার হাতে তুলে দিয়েছিল, তখন আর চোখের জলকে বাগ মানাতে পারেননি দুর্গা।