ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তানের তরফে বলা হয় সন্ত্রাসবাদের গতিবিধি হবে না। তাদের সেনা সাহস দেখা যাবে না। তখন ভারত বিচার করে। পাকিস্তানের জঙ্গি ঠিকানায় ও সেনা ঘাঁটিতে ভারতের জবাব দেওয়া শুধুমাত্র স্থগিত করা হয়েছে। তবে পাকিস্তান তাদের বক্তব্য অনুযায়ী আগামী দিনে কী পদক্ষেপ করে তাতে সবসময় নজর থাকবে। পাকিস্তানের (Pakistan) বিরুদ্ধে ভারতের সংঘর্ষ বিরতি (Ceasefire) নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। সোমবার রাত আটটায় জাতির উদ্দেশ ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের পহেলগামে জঙ্গি হামলার জবাবে অপারেশন সিঁদুরের পর এই প্রথম জাতির উদ্দেশ ভাষণ (Address to the Nation) দেন তিনি। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার বীরত্বের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিন দিন টানা উত্তেজনার পর শনিবার আচমকাই ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) দাবি করেছিলেন, তিনি মধ্যস্থতা করে দুই দেশের যুদ্ধ থামিয়েছেন। ভারতের নীতি অনুযায়ী পাকিস্তান নিয়ে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ভারত মানে না। প্রশ্ন উঠছিল তা নিয়ে। তবে জানা গিয়েছিল পাকিস্তানের কাতর আর্জি অনুযায়ী সংঘর্ষ বিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, এদিনও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাও করে জানান, তিনি কীভাবে দুই দেশের পরমাণু যুদ্ধ থামিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, এয়ার স্ট্রাইকের পর অপারেশন সিঁদুর। এটাই ভারতের নীতি। ভারতের উপর জঙ্গি হামলা হলে মুখের উপর নিজের শর্তে জবাব দেওয়া হবে। সেখানে গিয়ে জঙ্গিদের জবাব দেওয়া হবে। পরমাণু ব্ল্যাকমেইল শুনব না। সেখানে প্রহার করব। একতাই আমাদের শক্তি। পাকিস্তানের দেশের মদতে সন্ত্রাস। জঙ্গিদের শেষকৃত্যে পাকিস্তানের সেনাকে দেখা গিয়েছিল সেই প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন নরেন্দ্র মোদি বলেন, দেশের প্রতি মা, বোন, মেয়েকে এই বীরত্ব সমর্পণ করছি। নির্দোষ নাগরিকদের সামনে, শিশুদের সামনে জঙ্গিদের নির্মম চেহারা দেখেছেন সবাই। সমাজ, সব রাজনৈতিক দল এক স্বরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল। সব জঙ্গি, সব সংগঠনকে জানিয়ে দিচ্ছি আমাদের মেয়ের মাথার সিঁদুর সরানোর ফল কী হতে পারে দেখিয়েছি। ৬ মে গভীর রাত ও ৭ মে সকালে সারা বিশ্ব দেখেছে আমাদের প্রতিজ্ঞা। ভারতের সেনা পাকিস্তানে জঙ্গি ঠিকানায় ট্রেনিং সেন্টারে আঘাত করেছে। জঙ্গিরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি ভারত এত বড় ফয়সালা নিতে পারে। দেশের ক্ষমতা সবাই দেখেছেন। সেনা-গোয়েন্দা-বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন।
আরও পড়ুন: অপারেশন সিঁন্দুর নিয়ে বিরাট বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর, দেখুন সরাসরি
বাহওয়ালপুর, মুরদিকের মতো জঙ্গির ঠিকানা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বে ৯/১১, ভারতে যত বড় হামলা হয়েছে সন্ত্রাসবাদের এই ঠিকানা জুড়ে রয়েছে। পাকিস্তান হতাশায় চলে গিয়েছে। এরপর তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গ দেওয়ার বদলে ভারতের মন্দির, গুরুদ্বার, নাগরিকদের, স্কুল, কলেজ, সেনাঘাঁটিকে নিশানা করে। পাকিস্তানের বায়ু সেনার এয়ারবেসের ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তানের ড্রোন, মিসাইলকে কীভাবে ভারতে তছনছ করেছে সেকথাও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উঠে আসে। তিন দিনেই পাকিস্তানকে এমন করে দেওয়া হয় যার আন্দাজ ছিল না তাদের। জঙ্গিরাই পাকিস্তানকে শেষ করে দেবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সন্ত্রাস ও আলোচনা, সন্ত্রাস ও বাণিজ্য, রক্ত ও জল একসঙ্গে চলতে পারে না বলেও এদিন বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একবারে পাঁচটি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তার মধ্যে অন্যতম ছিল সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত। সিন্ধু নদীর জল না দেওয়া হলে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকা শুকিয়ে যাবে। পাকিস্তানের মন্ত্রীরা এরপর ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করতে থাকে। তাতেই বোঝা যায় কত বড় লেগেছে তাদের। প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, জঙ্গি হামলায় রক্ত ঝরলে নদীর জল দেওযার প্রশ্ন নেই। একইসঙ্গে আলোচনা হলে পাক অধ্যুষিত কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হবে বলেও এদিন জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
দেখুন অন্য খবর: