বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে (BSE) পেটিএমের নথিভুক্তকরণ(paytm listing) অনুষ্ঠানে কেঁদে ফেললেন কর্ণধার বিজয় শেখর শর্মা (Vijay Shekhar Sharma)। গত সপ্তাহে ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (IPO) ঘোষণা করে প্রাইভেট থেকে পাবলিক হয় পেটিএম। সেই মতো বৃহস্পতিবার ছিল বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে পেটিএমের নথিভুক্তকরণ।
‘ভারত ভাগ্য বিধাতা’, দেশের জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন এই লাইনটি শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারনেনি পেটিএম কর্তা। প্রায় দীর্ঘ এক দশকের নানা চড়াই উতরাইয়ের পর আজ যে সাফল্যের মুখ দেখেছে পেটিএম তাতে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনি। জানান, এই বাক্যটি আজ যেন তাঁর মরম স্পর্শ করে গেল। ‘ভারত ভাগ্য বিধাতা’ অর্থাৎ যে ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, আজ এই বাক্যটি তাঁর সংস্থার ক্ষেত্রে ভীষণ ভাবে প্রযোজ্য। তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবেন না ঠিকই তবে মনে মনে জানেন কীভাবে পেটিএমের প্রত্যেকে এই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে।
দেশের জাতীয় সঙ্গীতের এই লাইন নিয়ে এক সময় বিতর্ক কিছু কম হয়নি। কবিগুরু কার উদ্দেশ্যে এই গান লিখেছেন? ব্রিটিশদের মন পেতে পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর আবদারে বেশ কিছু লাইন নতুন করে এই গানে বসাতে হয়েছিল এ রকম হাজারো তর্ক বিতর্ক হয়েছে। আবার একই রকম ভাবে ভারত ও চীনের ডোকালাম ইস্যুতে উত্তাল রাজনীতির কান্ডারিরা যখন চিনের সমস্ত কিছু বর্জনের পথে হেটে ছিলেন তখন তাদের রক্ত চক্ষু এড়াতে পারেনি পেটিএম। সংস্থায় প্রচুর পরিমাণে চীনের অর্থলগ্নির প্রসঙ্গ টেনে প্রায় একঘরে করে দেওয়া হয় পেটিএমকে। এক সময়ে যে সংস্থার জয় জয়কারে মেতে ছিল সবাই ৷ কোভিডকালের মধ্যেই আমূল বদলে গেল চিত্রটা। গুগল পে(Google pay), ফোন পে(Phone pe) ও অন্যান্য ডিজিট্যাল পেমেন্ট গেটওয়ে মাথা চাড়া দেওয়ার ফলে কিছুটা কোনঠাসা হয়ে পড়ে পেটিএম। কোনটা ভারতীয় ও কোনটা ভারতীয় নয় সেই বিতর্কে প্রাসঙ্গিকতা বাড়ে ফোন পে-র, কারণ বর্জন করতে হবে পেটিএমকে। তবে এ সব পুরোনো কথা, তর্কে না এগিয়ে বিশ্বাস সাফল্য এনে দিয়েছে।
একেবারে মধ্যবিত্ত বাড়ির ইঞ্জিনিয়ার ছেলে বিজয় শেখর শর্মা। এক সময় ১০ হাজারের চাকরি ছেড়ে বানিয়ে ছিলেন ফোন রিচার্জের অ্যাপ। তবে সাফল্য সহজে আসেনি। দেরি হলেও শেষ পর্যন্ত ভাগ্য সদয় হয়। ক্যাব অ্যাপ উবেরের (uber) হাত ধরেই সাফল্যের স্বাদ পায় পেটিএম। অল্প দিনের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ভারতে ডিজিটাল পেমেন্টের পথ প্রদর্শক এই সংস্থা। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বিজয় শেখর শর্মাকে। স্টার্টআপ হিসেবে উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্যের মুখ দেখে পেটিএম। সব ভালই চলছিল কিন্তু গত বছর হিসেবটা উল্টে পাল্টে যায়। তবে হাল ছাড়েননি। লক্ষ্যে স্থির ছিলেন। হেডমাস্টার মশাই বাবা ও হোমমেকার মা প্রথম দিকে নাকি বুঝতেই পারেননি যে কম বেতনের ২৭ বছরের এই ইঞ্জিনিয়ার ছেলে কবে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন।
বর্তমানে, ফোর্বসের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিজয় শেখর শর্মা ২৪০ কোটি টাকার মালিক।